জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ঐচ্ছিক প্রোটোকল-৩ স্বাক্ষরে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগিদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন আইনপ্রণেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, শিশু অধিকার সুরক্ষায় সরকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ববাহক। প্রোটকল-৩ স্বাক্ষরে করলে অধিকার লংঘন, সহিংসতা ও শোষণের শিকার কোন শিশু ন্যায় বিচার না পেলে সে বা তার সমর্থনকারি জাতিসংঘে অভিযোগ করেতে পারবে। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টির সুরাহা নিশ্চিত হবে, যার মাধ্যমে শিশু অধিকার সুরক্ষিত হবে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) পার্লামেন্ট মেম্বার ক্লাবে ‘সংসদ সদস্যদের সঙ্গে শিশু অধিকার ও এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল বিষয়ে জাতীয় সংলাপে এসব কথা বলেন তারা।
আর্টিকেল নাইনটিন ও প্লান ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন আর্টিকেল নাইনটিনের রিজওনাল ডিরেক্টর শেখ মঞ্জুর-ই আলম। আলোচনায় অংশ নেন শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সহ-সভাপতি অ্যারমা দত্ত, পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি এস এম শাহজাদা, খুলনা-৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ রশীদুজাম্মান, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ফরিদা ইয়াসমিন, রুমা চক্রবর্তী ও অনিমা মুক্তি গমেজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ড. জামিল আহমেদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, প্লান ইন্টারন্যাশনালের রিজিওনাল অ্যাডভাইজার আমিনা খাতুন মনি ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক উম্মে হুসনা শবনম খানম এবং আর্টিকেল নাইনটিনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মরিয়ম শেলি ও প্রোগ্রাম অফিসার সালমা পারভীন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপি আরমা দত্ত বলেন, সংবিধানে শিশু অধিকার সুরক্ষায় বিষয়টি যুক্ত করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি কার্যকরভাবে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার আন্তরিক। এই অবস্থায় প্রোটোকল-৩ স্বাক্ষর ও তা কার্যকর করতে সরকারের পাশাপাশি ইউনিসেফ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, উন্নয়ন সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
এমপি এস এম শাহজাদা বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্কুলের বাচ্চাদের বিস্কুট খেয়ে বলেছিলেন- এই খাবার শিশুরা কিভাবে খাবে? বিস্কুটে চকলেট ফ্লেভার যোগ করতে নির্দেশ দেন। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিশু অধিকার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে গেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিশুশ্রম বন্ধ ও পড়াশোনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পিতা-মাতাদের সচেতন করতে ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকার দরিদ্র পরিবারকে ২০ লাখ মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছে। শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইসের আসক্তি কমাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও এমপি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান- এই মৌলিক অধিকার আমরা সকল শিশুকে দিতে পারিনি। শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ সরকার শিশু অধিকার আইন ও সুরক্ষা বিষয়ে যথেষ্ট কাজ করেছে। নিশ্চয়ই আগামী দিনে প্রোটোকল-৩ স্বাক্ষর করবে বাংলাদেশ।
সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিশু ও নারীদের প্রতি সংবেদনশীল। তাদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের জায়গা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। অর্থনেতিক কারণে সকল শিশুকে আমরা এক জায়গায় নিয়ে আসতে পারছি না। এই অবস্থা পরিবর্তনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শফিক/এমএ/