![ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা](uploads/2024/05/26/Gopalganj-Horse-Race-Photo--1716695862.jpg)
এক সময় গ্রামের মানুষের চিত্তবিনোদনের সুযোগ করে দিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু শহরের হাওয়া গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। তাই এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। নির্মল চিত্তবিনোদন ভাগাভাগি করতে সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের মাইঝকান্দিতে গ্রামবাসী এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ঘোড়দৌড় দেখতে ভিড় করে হাজারো মানুষ। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ অর্থ।
মাইঝকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের বিনোদন দিতে গত শুক্রবার বিকেলে জেলার সদর উপজেলার মাঠে আয়োজন করা হয় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। এতে নড়াইল, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে সাতটি ঘোড়া অংশ নেয়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ঘোড়াগুলো। দৌড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের চারদিকে হাজারো দর্শকের উচ্ছ্বসিত আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। তারা করতালি দিয়ে এ প্রতিযোগিতার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন। এ যেন চিরায়ত বাঙালির চিরচেনা মিলনমেলা।
এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই মাঠে ভিড় করেন নানান বয়সের দর্শনার্থীরা। জেলার আশপাশের এলাকার শিশু ও নারীসহ হাজার হাজার দর্শনার্থী পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন মাঠে। উপভোগ করেন ঘোড়ার দৌড়। এ ছাড়াও এ মাঠে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলা। মেলায় নানা ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
এর আগে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলার সদর উপজেলার নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান শিপন বিশ্বাস সুশীল। তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সব ঘোড়ার মালিকের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন।
ঘোড়াদৌড়ে অংশ নেওয়া দিবাকর ভৌমিক বলেন, ‘ঘোড়দৌড় হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা। দর্শকদের আনন্দ দিতে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে নিজের ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় এসেছি। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া হাফিজ মিয়া বলেন ‘বংশপরম্পরায় আমি ঘোড়দৌড়ে অংশ নেই। আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া এলাকার মানুষও আনন্দ পাচ্ছে। পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয় বরং মানুষকে আনন্দ দিতেই আমি এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেই।
ঘোড়দৌড় দেখতে আসা স্বপন বিশ্বাস (৬০) বলেন, ‘আগের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ছিল দেখার মতো। এখন আর আগের মতো হয় না। তারপরেও এখানে ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, দেখে খুব ভালো লাগল।’
স্কুলছাত্রী রুপা বলেন, ‘এখানে অনুষ্ঠিত হবে শুনে এবারই প্রথম ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে আসলাম। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এসেছি। ঘোড়দৌড় দেখে খুব ভালো লাগছে। আগামীতেও এমন আয়োজন দেখতে চাই।’
দর্শনার্থী গোবিন্দচন্দ্র বলেন, ‘ঘোড়দৌড় বাংলার একটি ঐতিহ্য, এটা ধরে রাখা দরকার। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি চাই, প্রতিবছর যেন এখানে ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।’
স্থানীয় অশোক পোদ্দার বলেন, ‘এমন আয়োজন করায় আমি আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। এখন এসব প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে। আশা করি আগামীতেও এমন আয়োজন করা হবে।’
সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শিপন বিশ্বাস বলেন, ‘কালক্রমে আমাদের দেশ থেকে ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মনের শান্তি ও প্রশান্তির জন্য এসব খেলাগুলো ধরে রাখা উচিত। আমরা চাই গ্রাম বাংলায় এসব ঐতিহ্য আবারও ফিরে আসুক। আমাদের ঐহিত্য ধরে রাখতে এমন আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতে গ্রাম বাংলার এসব ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো ধরে রাখতে আমার পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’