![শিমুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এবার যশোরের ২ হত্যা মামলায় চার্জশিট](uploads/2024/05/26/shimul-1716710849.jpg)
দক্ষিণ জনপদের মূর্তিমান আতঙ্ক পেশাদার কিলার হিসেবে কুখ্যাত, দেশজুড়ে আলোচিত এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি চরমপন্থি শিমুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে এবার যশোরের পৃথক দুটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। সম্প্রতি যশোরের অভয়নগরে দুটি হত্যা মামলায় আলাদাভাবে চার্জশিট আদালতে দাখিল করে ডিবি পুলিশ।
উপজেলার দামুখালী গ্রামের সুব্রত মণ্ডল ও দত্তগাতি গ্রামের খন্দকার রকিবুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন।
শফি আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ২০২২ সালের ১২ মে রাত সোয়া ৮টার দিকে খন্দকার রকিবুল ইসলাম তার বান্ধবী পিয়ারী বেগম ওরফে বর্ষাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতিতে গিয়েছিলেন পায়রা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সাইফুল আলম মোল্লার কাছ থেকে কবিরাজি ওষুধ আনতে। মূলত সাইফুল আলম মোল্লা ওষুধ দেওয়ার কথা বলে ফাঁদ পেতে খন্দকার রকিবুল ইসলামকে ডেকে আনেন। পরে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দত্তগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে তার বান্ধবী পিয়ারী বেগম ওরফে বর্ষাও আহত হন। এ ঘটনায় নিহতের মা রহিমা বেগম ১৩ মে অভয়নগর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল আরও জানান, নিহত খন্দকার রকিবুল ইসলাম চরমপন্থি সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তিনি ঘের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন বলে অভিযোগ ছিল। তার জন্য প্রতিপক্ষ চরমপন্থিরা ওই এলাকায় সুবিধা করতে পারত না। এ কারণে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পেতে ডেকে এনে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ চরমপন্থিরা। মামলার তদন্তকালে এই হত্যার সঙ্গে শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়াসহ ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এ কারণে এক সপ্তাহ আগে শিমুলসহ তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
খন্দকার রকিবুল ইসলাম হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার মৃত নাসিরউদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে শীর্ষ চরমপন্থি শিমুল ভূঁইয়া, জামিরা এলাকার মৃত পীর মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে জিয়া মোল্লা, শফিকুল শেখের ছেলে মেহেদী হাসান সবুজ, শাহজাহান মোল্লার ছেলে সোলায়মান মোল্লা, কামরুল বিশ্বাসের ছেলে রাজু, মাহতাব বিশ্বাসের ছেলে হৃদয়, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের ছেলে জায়েদ হাওলাদার ওরফে জিহাদ হাওলাদার, যশোরের অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতি গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া, কাশেম মোল্লার ছেলে সাইফুল আলম মোল্লা, ওয়াছেক আলী মোল্লার ছেলে বুলবুল ও সরখোলা গ্রামের আনোয়ার মোল্লার ছেলে রাজিব মোল্লা।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে অভয়নগর উপজেলার দামুখালীতে মোটরসাইকেল আরোহী সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে হত্যা করে সুব্রত মণ্ডলকে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অমৃত মণ্ডল ১৩ জানুয়ারি অভয়নগর থানায় মামলা করেন। এই মামলা তদন্তকালে ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়াসহ ১৫ জনের সম্পৃক্ততা পান। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা সুব্রত মণ্ডলকে হত্যা করেছিলেন বলে জানা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিমুলসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ।
সুব্রত মণ্ডল হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার মৃত নাসিরউদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে শিমুল ভূঁইয়া, জামিরার শাহজাহান মোল্লার ছেলে সোলায়মান মোল্লা, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের ছেলে জায়েদ হাওলাদার ওরফে জিহাদ হাওলাদার, গোলাম মুন্সীর ছেলে ইসরাফিল মুন্সী ও আরমান মুন্সী, মৃত গাজী জাকির হোসেনের ছেলে গাজী আরাফাত হোসেন কাইফ, যশোরের অভয়নগর উপজেলার দামুখালী গ্রামের মৃত শৈলেন মণ্ডলের ছেলে শ্যামল মণ্ডল, স্বপন হালদারের ছেলে পিন্টু হালদার, চলিশিয়া গ্রামের আব্বাস মোল্লার ছেলে আমিনুর মোল্লা, সরখোলা গ্রামের ইয়াজিয়ার মোল্লা ওরফে ইয়াহিয়া মোল্লার ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ইয়াসিন সরদারের ছেলে শাকিল সরদার, আনোয়ার মোল্লার ছেলে রাজিব মোল্লা, উত্তর সরখোলা গ্রামের হান্নান মোল্লার ছেলে সুমন মোল্লা, বুইকারা হাসপাতাল এলাকার আনোয়ার হোসেন মোল্লার ছেলে রাব্বি হোসেন ও দত্তগাতি গ্রামের কাশেম মোল্লার ছেলে সাইফুল আলম মোল্লা।
দুর্ধর্ষ খুনি শিমুল ভূঁইয়া দক্ষিণ জনপদে একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছিলেন। ১৯৯১ সালে খুলনার ডুমুরিয়ায় একটি সশস্ত্র গ্রুপের নেতাকে হত্যার মাধ্যমে খুনোখুনির অপরাধ জগতে তার প্রবেশ ঘটে। পুলিশের খাতায় তার বিরুদ্ধে ৮টি খুন ও ২৫টি মামলায় সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর মধ্যে যশোরের দুটি খুনের দায়ে দীর্ঘ সময় সাজা খেটেছেন শিমুল। কিন্তু জেলে থেকেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এর বাইরেও যশোর-ঝিনাইদহ-খুলনায় একাধিক হত্যায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। ১৯৯৬ সালে যশোর কারা বিদ্রোহে শিমুল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
খুনের বাইরেও একাধিক হত্যাচেষ্টা, চরমপন্থি পার্টি চালানোর নামে উড়ো চিঠি দিয়ে ও টিঅ্যান্ডটিতে ফোন করে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, লুটসহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হন দক্ষিণ জনপদের শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া। তাকে গ্রেপ্তারের পর নৃশংসভাবে আনারকে হত্যা এবং লাশ গুমের ভয়ংকর পরিকল্পনার কথা জেনে শিউরে উঠেছেন দেশের সাধারণ মানুষসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
পুলিশসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, চরমপন্থি নেতা ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে মাহমুদ হাসান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে আমানুল্লাহ ১৯৭০ সালের ৪ মে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্রে নাম রয়েছে শিহাব মোহাম্মদ ভূঁইয়া। তার বাবা নাসিরউদ্দিন ভূঁইয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ক্লার্ক ছিলেন।