ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আতঙ্ক, সৈকতে পর্যটকদের ভিড়

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
আপডেট: ২৬ মে ২০২৪, ০৮:০২ পিএম
উপকূলে আতঙ্ক, সৈকতে পর্যটকদের ভিড়
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড়। ছবি : খবরের কাগজ

ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজারে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। ফলে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে জেলার বেশকিছু গ্রামে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলীয় বাসিন্দাদের মাঝে। তবে তেমন আতঙ্ক দেখা যায়নি সৈকতে ভিড় জমানো পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে। দেখে মনে হচ্ছে, অনেকে ঘূর্ণিঝড় দেখতেই হয়তো সমুদ্রসৈকতে এসেছেন। 

রবিবার (২৬ মে) সকাল থেকে কক্সবাজার উপকূলে ঝড়ো বাতাস বইতে থাকে। দুপুরে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে যায়। বিশেষ করে কক্সবাজার সদরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া, গোমাতলী, পোকখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ জেলার অর্ধ-শতাধিক গ্রামে জোয়ারের পানি ঢুকে গেছে। সন্ধ্যায় উপকূল এলাকায় ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। 

অন্যদিকে, সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। রিমালের প্রভাবে শনিবার রাতে সেন্টমার্টিনের কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জোয়ারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখনো দমকা হাওয়া ও সাগরের পানির উচ্চতা বেশি মনে হচ্ছে। দ্বীপের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হয়।’

সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। সৈকতে জেলা প্রশাসনের নিয়োজিত বিচকর্মী, ফায়ার সার্ভিস ও লাইফগার্ড কর্মীরা পর্যটকদের সতর্কতার বিষয়ে মাইকিং করছে। তারমধ্যেও অনেকেই সাগরে নামার চেষ্টা করছেন। 

সাগরজলে মেয়ে লুবনাকে নিয়ে নেমে পড়েছেন শরীয়তপুরের বাসিন্দা ইয়াছমিন আকতার। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল দেখতে সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সাগর উত্তাল, দেখতে অনেক ভালো লাগছে। ছবি তুলছি, শামুক-ঝিনুক কুড়িয়েছি। আগে কক্সবাজার অনেক আসা হয়েছে। তবে এবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় আসা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় কক্সবাজার সাগর কেমন হয় তা দেখতে পেলাম।’

শুধু ইয়াছমিন নন, একই সময় সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এসেছেন নোয়াখালীর আব্দুর রহিম। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। সবাই নেমে পড়েন সাগরের নোনাজলে।

আব্দুর রহিম বলেন, ‘ঢেউ দেখে ভয় লাগছে। কিন্তু খুবই মজা পাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এত বড় বড় ঢেউ হতে পারে আগে জানতাম না।’

শুধু তারাই নয়, সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে ভিড় করেছে কয়েক হাজার পর্যটক। তবে সকাল সাড়ে ৮ টার পর কাউকে সাগরে নামতে দিচ্ছে না লাইফ গার্ড কর্মীরা।

সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত (সবশেষ তথ্য) দেখানো হয়েছে। তাই সাগর উত্তাল রয়েছে। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। লাল পতাকা মানেই সতর্ক করা, যাতে কেউ সমুদ্রস্নানে না নামে। আমরা কাউকে সৈকতে সমুদ্রস্নানে নামতে দিচ্ছি না।’

অন্যদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে সকাল থেকে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গাছ ভেঙে পড়ায় এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ উপকূল ও নিম্নাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করবে বিকেলে। এরই মধ্যে এর প্রভাব শুরু হয়েছে। জোয়ারের পানি ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার জেলা অতিক্রম করবে।’

মুহিববুল্লাহ মুহিব/সালমান/

‘স্বামীর হত্যার বিচার চাইব কার কাছে’

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম
‘স্বামীর হত্যার বিচার চাইব কার কাছে’
ছবি: খবরের কাগজ

‘আমার স্বামী গুলশান-২ এলাকার আবাসিক হোটেল সিক্সসিজনে কাজ করতেন। তিনি কোনো রাজনীতি করতেন না। তিনি মারা যাওয়ায় আমি দুটি সন্তান নিয়ে এখন মাঝ সমুদ্রে পড়েছি। এলাকায় এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া আছে। এখন কিস্তি দেব কী করে, খেয়ে বাঁচব কীভাবে? আর আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাইব কার কাছে।’

রাজধানীর গুলশানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া আব্দুল গণির (৪৫) স্ত্রী লাকী আক্তার শুক্রবার (২৭ জুলাই) এসব কথা বলেন। কথাগুলো বলতে গিয়ে তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। আব্দুল গণি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে। তবে কিছুদিন আগে আব্দুল গণি সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় বাড়ি করেছেন। গতকাল শুক্রবার রহিমপুরের বাড়িতে আব্দুল গণির আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

লাকী আক্তার আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ২০ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করেন। আগে আমিও ঢাকায় ছিলাম। চার বছর আগে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এরপর সন্তানদের নিয়ে আমি গ্রামে চলে আসি। গত ১৯ জুলাই সকাল ৯টার দিকে আব্দুল গণি উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশানে তার কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। গুলশানের শাহজাদপুর-বাঁশতলায় গেলে তিনি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ১০টার দিকে আমার শ্বশুর ফোন করে জানান, গনির মাথায় গুলি লাগছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছে।’

আব্দুল গণির ছেলে আলামিন শেখ বলেন, ‘এসএসসি পাসের পর বাবা আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান। আমি শেফের কাজ শিখছি। বাবার সঙ্গে একই বাসায় থাকতাম। আমার ওই দিন নাইট ছিল। সকালে এসে ঘুমিয়ে ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে মা ফোন দিয়ে বলে তোর বাবার খবর নে। মাথায় গুলি লেগেছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে লাশ পেয়েছি বাবার। আমি এখনো বেকার। বাড়িতে মা আর চার বছরের বোন জান্নাত থাকে। বাবাকে হারিয়ে আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।’

আব্দুল গণির বড় ভাই আব্দুল রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘গত ২১ জুলাই বিকেলে ভাইয়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।’

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ফারুকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫০ এএম
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ফারুকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা
চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুকের স্ত্রীর আহাজারি। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুকের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় চসিকের জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 
এ সময় ফারুকের সন্তানের লেখাপড়ায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন মেয়র।

তিনি জানান, শুক্রবার সকালে মেয়রের বাসভবনে দেখা করতে যান নিহত ফারুকের পরিবার। তখন মেয়র অর্থ সহায়তার পাশাপাশি ফারুকের সন্তানদের লেখাপড়ায় ও বিপদে আপদে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

গত ১৬ জুলাই দুপুরে নগরের মুরাদপুর এলাকায় কোটার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ফারুকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। ফারুকের বাড়ি নোয়াখালীতে।

পরে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর পুলিশি পাহারায় তার স্বজনরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়।

সাদিয়া নাহার/অমিয়/

কক্সবাজার উপকূলে নিখোঁজ ২ লাশ উদ্ধার

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১৩ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:২৯ পিএম
কক্সবাজার উপকূলে নিখোঁজ ২ লাশ উদ্ধার

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে গত বুধবারের ট্রলারডুবির ঘটনায় কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপকূলে নিখোঁজ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে নিখোঁজ দুজন পুরুষের লাশ টেকনাফ উপকূলে ভেসে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি।

মৃত দুজন হলেন, সেন্ট মার্টিনের মৃত আজম আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (২৮) এবং মৃত আবদুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ ফাহাদ (৩০)। ইসমাইল ডুবে যাওয়া ট্রলারের যাত্রী। আর ফাহাদ স্পিডবোট নিয়ে ডুবে যাওয়া ট্রলারে নিখোঁজদের খুঁজতে গিয়েছিলেন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ট্রলারের যাত্রী নুর মোহাম্মদ সৈকত (২৭)। তারা সবাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, গত বুধবার টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে শাহপরীর দ্বীপের অদূরে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কিছু লোক ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে তাদের উদ্ধার করতে যান। ওই সময় তীব্র ঢেউয়ের কারণে একটি স্পিডবোট ডুবে যায়। এ ঘটনায় তিনজন নিখোঁজ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দুজনের লাশ টেকনাফ উপকূলে ভেসে এলেও একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে

চার মেয়াদেও শেষ হয়নি রাজবাড়ী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৬ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৬ এএম
চার মেয়াদেও শেষ হয়নি রাজবাড়ী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ
ছবি : খবরের কাগজ

চারবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি রাজবাড়ী ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণকাজ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বারবার গণপূর্ত বিভাগকে তাগাদা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় পুরাতন ভবনে চিকি‍ৎসা নিতে আসা রোগীদের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন আটতলা ভবনের বেজমেন্ট ফ্লোরে থাকবে গাড়ি পার্কিং, স্টোর রুম, মরচুয়ারি, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফার্নিচার রুম ইত্যাদি। এ ছাড়া আইসিইউ, সিসিইউ, সিটি স্ক্যান, মেমোগ্রাফির ব্যবস্থা থাকবে।

রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আটতলা ভবন নির্মাণের কাজ করছে জিকেবিপিএল ও এসসিএল নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জুন মাসে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও পর পর তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এবারেও ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এ কারণে আগস্ট মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ৮ তলা ভবনটির সামনে রড, সিমেন্ট, বালু, ইট, পাথরসহ নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ। শ্রমিকরা কাজ করছেন। ভেতরে বাইরে অনেক কাজ বাকি। লিফটের কাজ শুরুই হয়নি। বাকি রয়েছে বৈদ্যুতিক কাজও। 

নির্মাণকাজের তদারকি করছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী স্বজন সাহা। তিনি জানান, হাসপাতালের কাজে তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো গাফিলতি নেই। কাজ প্রায় শেষের পথে। রং, বিদ্যুৎ, টাইলসসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। 
কাজ পরিদর্শনে আসা রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ভেতরে কিছু কাজ বাকি আছে। রাস্তা, ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে।

কাজ সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে কিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া প্রথমে ছয়তলা ভবন করার কথা থাকলেও পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটতলা ভবন করার চাহিদা দেয়। এ কারণে নকশা পরিবর্তন করতে হয়েছে। সময় মতো নির্মাণসামগ্রী না পাওয়াও দেরি হওয়ার একটি কারণ ছিল।’ 

রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম ইফতেখার মজিদ জানান, কিছু সমস্যার কারণে সময়মতো হাসপাতালের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। 

এদিকে পুরনো ভবনের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে শত শত রোগী চিকিৎসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ ওষুধ নিচ্ছেন। ভিড়ের কারণে হাঁটার জায়গাই নেই। আন্তবিভাগে ভেতরে রোগীতে পরিপূর্ণ। অনেক রোগীর ঠাঁই হয়েছে বারান্দার মেঝেতে। দ্বিতীয়তলায় পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে একজন রোগী ঘুমিয়ে ছিলেন। তার মাথার কাছে হাতে স্যালাইন লাগিয়ে বসেছিলেন এক ব্যক্তি। যে কেউ ধরে নেবে তারা একই পরিবারের।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের গোপালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিঠু সরদার নামে ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে ঘুমিয়ে আছেন, তিনি তার কেউ নন। পেটে ব্যথা নিয়ে সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু এখনো সিট পাননি। জায়গা না পেয়ে তার মাথার কাছে বসেছেন।

হাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহীদ মোল্লা জানান, ঘাড়ব্যথা নিয়ে সকালে ভর্তি হয়েছেন। শয্যা পাননি। তাই বারান্দায় বিছানা পেতে দিয়েছে। মানুষ হাঁটাচলা করলে ধুলো উড়ে আসে। মাঝে মধ্যে দুর্গন্ধও আসে। 

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এসএমএ হান্নান বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আন্তবিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। জায়গার অভাবে রোগীদের গরমে কষ্ট করতে হয়। নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে রোগীরা খোলামেলা জায়গা পাবেন। তারাও লোকবল বেশি পাবেন। রোগীদের বেশি বেশি সেবা দিতে পারবেন। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। 

পাঁচটি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা আর ৪২টি ইউনিয়ন নিয়ে রাজবাড়ী জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এ জেলার বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। এদের অসুখ বিসুখে রাজবাড়ীর বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। সদর হাসপাতালটি তাদের ভরসাস্থল। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু চিকিৎসার সব সুবিধা না থাকায় একটু জটিল রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা অথবা ফরিদপুর। জেলার মানুষের চিকিৎসাসুবিধা বাড়ানোর কথা ভেবে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ জন্য হাসপাতালের পূর্বদিকে আটতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এটি বাস্তবায়ন করছে রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগ। ২০২০ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।

গাইবান্ধায় দুর্গত এলাকার পানি নেমেছে, ঘরে ফিরছেন বন্যার্তরা

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ এএম
গাইবান্ধায় দুর্গত এলাকার পানি নেমেছে, ঘরে ফিরছেন বন্যার্তরা
ছবি : খবরের কাগজ

গাইবান্ধার চার উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। জলমগ্ন এলাকাগুলোয় দেখা যাচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। নদী-তীরবর্তী এলাকার তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি আবার জেগে উঠছে। পানি নেমে যাওয়ায় ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসি মানুষ।

তবে বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো খাবারের সংকট রয়েছে। বাড়িঘরে পয়োনিষ্কাশনের দুরবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগে ভোগান্তিতে নারী-শিশু ও কিশোরীরা। ত্রাণের চাল ও শুকনো খাবার ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। বন্যায় যুদ্ধ করা ক্লান্ত মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের ৭০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিতে বন্দি হয়ে পড়েছিল। এসব এলাকার রাস্তাঘাট, হাটবাজার, ফসলি জমি, মৎস্য খামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। তাদের মাঝে ৩৮৫ টন চাল ও ৩ হাজার ২৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সরেজমিন বালাসীঘাট এলাকার ভাষারপাড়া, সৈয়দপুর, কাউয়ারহাটে দেখা গেছে, বসতবাড়ি থেকে সদ্য বন্যার পানি নেমে গেছে। উঠানে এখনো কাদা।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়েছে টয়লেট। ঘরের মেঝে স্যাঁতসেঁতে। ঘরের পিড়ালি ভেঙে গেছে। লোকালয় থেকে পানি নদীতে নেমে গেছে। নদীর পানি দক্ষিণের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, জেলার প্রধান সব নদ-নদীর পানি এক সপ্তাহ থেকে কমতে শুরু করেছে। অনেক চর জেগে উঠেছে। কিছু চরাঞ্চল থেকে পানি নামতে সময় লাগবে। সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুর্গত এলাকার সব পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জেলায় আপাতত আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। 

এর আগে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৩ জুলাই থেকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তিস্তা, ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জুয়েল মিয়া জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। চার উপজেলার দুর্গত এলাকায় প্রতিদিন পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত একটি মানুষেরও না খেয়ে থাকার সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।