![উপকূলে আতঙ্ক, সৈকতে পর্যটকদের ভিড়](uploads/2024/05/26/Coxbazar-1716724790.jpg)
ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজারে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। ফলে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন ফুট বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে জেলার বেশকিছু গ্রামে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলীয় বাসিন্দাদের মাঝে। তবে তেমন আতঙ্ক দেখা যায়নি সৈকতে ভিড় জমানো পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে। দেখে মনে হচ্ছে, অনেকে ঘূর্ণিঝড় দেখতেই হয়তো সমুদ্রসৈকতে এসেছেন।
রবিবার (২৬ মে) সকাল থেকে কক্সবাজার উপকূলে ঝড়ো বাতাস বইতে থাকে। দুপুরে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চলগুলো ডুবে যায়। বিশেষ করে কক্সবাজার সদরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া, গোমাতলী, পোকখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ জেলার অর্ধ-শতাধিক গ্রামে জোয়ারের পানি ঢুকে গেছে। সন্ধ্যায় উপকূল এলাকায় ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অন্যদিকে, সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। রিমালের প্রভাবে শনিবার রাতে সেন্টমার্টিনের কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জোয়ারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখনো দমকা হাওয়া ও সাগরের পানির উচ্চতা বেশি মনে হচ্ছে। দ্বীপের লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হয়।’
সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। সৈকতে জেলা প্রশাসনের নিয়োজিত বিচকর্মী, ফায়ার সার্ভিস ও লাইফগার্ড কর্মীরা পর্যটকদের সতর্কতার বিষয়ে মাইকিং করছে। তারমধ্যেও অনেকেই সাগরে নামার চেষ্টা করছেন।
সাগরজলে মেয়ে লুবনাকে নিয়ে নেমে পড়েছেন শরীয়তপুরের বাসিন্দা ইয়াছমিন আকতার। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল দেখতে সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়েকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সাগর উত্তাল, দেখতে অনেক ভালো লাগছে। ছবি তুলছি, শামুক-ঝিনুক কুড়িয়েছি। আগে কক্সবাজার অনেক আসা হয়েছে। তবে এবার ঘূর্ণিঝড়ের সময় আসা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় কক্সবাজার সাগর কেমন হয় তা দেখতে পেলাম।’
শুধু ইয়াছমিন নন, একই সময় সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এসেছেন নোয়াখালীর আব্দুর রহিম। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। সবাই নেমে পড়েন সাগরের নোনাজলে।
আব্দুর রহিম বলেন, ‘ঢেউ দেখে ভয় লাগছে। কিন্তু খুবই মজা পাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এত বড় বড় ঢেউ হতে পারে আগে জানতাম না।’
শুধু তারাই নয়, সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে ভিড় করেছে কয়েক হাজার পর্যটক। তবে সকাল সাড়ে ৮ টার পর কাউকে সাগরে নামতে দিচ্ছে না লাইফ গার্ড কর্মীরা।
সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত (সবশেষ তথ্য) দেখানো হয়েছে। তাই সাগর উত্তাল রয়েছে। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। লাল পতাকা মানেই সতর্ক করা, যাতে কেউ সমুদ্রস্নানে না নামে। আমরা কাউকে সৈকতে সমুদ্রস্নানে নামতে দিচ্ছি না।’
অন্যদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে সকাল থেকে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গাছ ভেঙে পড়ায় এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ উপকূল ও নিম্নাঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করবে বিকেলে। এরই মধ্যে এর প্রভাব শুরু হয়েছে। জোয়ারের পানি ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার জেলা অতিক্রম করবে।’
মুহিববুল্লাহ মুহিব/সালমান/