ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে নিতাই নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। আকস্মিক এ দুর্যোগে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, অনেকের ঘরের ভেতর পানি ঢুকেছে। তাই রান্নাবান্না করে খেতে পারছেন না। ছোট নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলায় করে বাজার থেকে খাবার এনে খাচ্ছেন। যারা গবাদিপশু লালন-পালন করেন, তারা গবাদিপশুর ঠিকঠাক খাবার দিতে পারছেন না। এ ছাড়া নলকূপ প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সাপ-বিচ্ছুর আতঙ্কও কাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কখনো থেমে থেমে, কখনো গুঁড়িগুঁড়ি, আবার কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়। একই সঙ্গে মেঘালয় থেকে পানি নেমে আসে। ধীরে ধীরে পানি বাড়তে থাকে। পরের দিন মঙ্গলবার গামারীতলা ইউনিয়নে রণসিংহপুর বাজারের উত্তর পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় এবং রহমতের বাজারের পাশে নিতাই নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গামারীতলা ও পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের বতিহালা, কালিনগর, গপিনপুর কাওয়ারকান্দা, চরের ভিটা, বেতগাছিয়া, বহরভিটা, উদয়পুর, হরিণধরা, আঙ্গরাকান্দা, আটাম, পাতাম, রায়পুর, কামালপুর, চান্দেরনগর, গৌরীপুর, রংসিংহপুরসহ অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
বতিহালা গ্রামের বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে হঠাৎ বন্যা হবে ভাবতেই পারিনি। ঘরে পানি ওঠার কারণে রান্না করা যাচ্ছে না। আমরা অনেক কষ্টে দিন-রাত পার করছি। গবাদিপশু নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। সাপ-বিচ্ছু ঘরবাড়িতে প্রবেশ করছে। এতে চরম আতঙ্ক বেড়েছে।’
কালিনগর গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, ‘চারদিকে পানি থইথই করছে। কলাগাছের ভেলা বানিয়ে বাজারে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে। আমাদের মতো পানিবন্দি গরিব মানুষরা খাবারের জন্য কষ্ট করছে।’
গামারীতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘পানিবন্দি হয়ে অসংখ্য মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। এসব মানুষের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানি কতদিনের মধ্যে কমতে পারে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ ব্রহ্মপুত্র, নিতাইসহ সব নদ-নদীর পানির উচ্চতা বাড়ছে।’
এ বিষয়ে ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, পানিবন্দিদের তালিকা করার প্রস্তুতি চলছে। তাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।