স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হবে বলে বাল্যবিবাহ হওয়া এক ছাত্রীকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছেন এক শিক্ষক। এর ফলে গত এক মাস ধরে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কান্তা হাসান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্র জানায়, ওই ছাত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে তার বাবা-মা বিয়ে দেন। পরে সে তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। মে মাসের শেষ দিকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত শুরু করে। মে মাসের ৩০ তারিখ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হবে বলে ওই ছাত্রীকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেন। তারপর থেকে ওই ছাত্রী স্কুলে আসা থেকে বিরত রয়েছে।
ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা জানায়, ওই শিক্ষার্থী স্কুলে এলে ক্লাসরুমে সবার সামনে ইকবাল স্যার তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেন। ও এলে নাকি বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হবে। এ কথা বলায় ওই শিক্ষার্থী অপমান বোধ করেছে। এরপর থেকে সে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
স্কুলছাত্রীর মা বলেন, ‘নিষেধ করায় মেয়ে এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া মূল্যায়ন পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারেনি। মেয়েটিকে নিয়ে আমি খুবই চিন্তায় আছি। আমরা যে ভুল করেছি তার খেসারত দিচ্ছি। এখন স্কুলে যেতে না পেরে মেয়েটি মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েছে।’
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কাজ করি। স্কুলের অন্য ছাত্রীরা যেন নষ্ট না হয়, সেই জন্য ওই ছাত্রীকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছি। আমি তাকে বলেছি, তুমি এলে আমাদের স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হবে। স্কুলের পরিবেশ রক্ষার জন্য তাকে স্কুলে আসতে নিষেধ করে বড় কোনো অপরাধ করেছি বলে মনে করি না।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করি। তবে এ রকম কোনো নিয়ম নেই যে, বিয়ে হলে ওই শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারবে না। এ ঘটনাটি আমাকে কেউ জানায়নি। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি ওই ছাত্রীর আবার স্কুলে আসার ব্যবস্থা করা হবে।’
বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার দাস বলেন, শিক্ষার্থীকে স্কুলে আসা থেকে কোনোভাবেই বিরত রাখা যাবে না। শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কোনো শিক্ষক এ রকম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাটি শোনার পরে ওই ছাত্রী যেন স্কুলে আসে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘বাল্যবিবাহের শিকার স্কুলছাত্রীর আবার স্কুলে ফিরে আসার সিদ্ধান্তকে উৎসাহিত না করে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’