কোরবানির মৌসুম ঘনিয়ে আসতেই চড়া হতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার। এক মাসের ব্যবধানে এলাচ, জিরা, জয়ত্রী, গোলমরিচ, হলুদসহ বিভিন্ন মসলার দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির কেজিতে দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫৫০ টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় মসলার দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ঈদের আগে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি এলাচে ১ হাজার ৫৫০ টাকা বেড়ে এর দাম হয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ টাকা, জিরা কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে ৭০০, জয়ত্রী কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯৫০, গোলমরিচ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৮৫০, হলুদের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩১০, কালিজিরা কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৩২০, তেজপাতা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০, সাদা সরিষা কেজিতে ৩৫ টাকা বেড়ে ৩০০ ও ধনিয়া কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে দাম কমেছে লবঙ্গ, শুকনো লাল মরিচ, দারুচিনি ও মিষ্টি জিরার। কেজিতে ২২০ টাকা কমে প্রতি কেজি লবঙ্গ হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দারুচিনির কেজিতে ১০০ টাকা কমে ৪০০ টাকা, মিষ্টি জিরা কেজিতে ৫ টাকা কমে ১৮০ টাকায় ও শুকনো লাল মরিচের কেজিতে ৬০ টাকা কমে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া প্রতি কেজি জায়ফল ৭০০ টাকা, মেথি ১৩০, কিশমিশ ৫২০, আখরোট ৮৮০, চায়না আদা ১৯৫, চায়না রসুন ২০০, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
চার মাসে আমদানি হয়েছে ৬৫ হাজার টন মসলা
গত চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৬৪ হাজার ৭৯৫ টন মসলা আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৯ হাজার ৭০৪ টন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭ হাজার ৯৩ টন, মার্চে ১৫ হাজার ৮৭৫ টন ও এপ্রিলে ১২ হাজার ১২৩ টন মসলা আমদানি হয়েছে।
চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৭৩১ টন এলাচ, ৫ হাজার ১৮০ টন দারুচিনি, ১ হাজার ৮৪৪ টন লবঙ্গ, ১ হাজার ৪২৪ টন জিরা, ৩ হাজার ৭০১ টন কিশমিশ, ৭২ টন জয়ত্রী, ৪৯ টন জায়ফল, ৯৯০ টন গোলমরিচ, ১৮০ টন মেথি, ৬৩ টন ধনিয়া, ১৯ হাজার ৩০৯ টন আদা, ২৭ হাজার ৬৭৩ টন রসুন, ৯৫২ টন হলুদ, ৭৬৬ টন শুকনো মরিচ ও ৪১৭ টন মৌরি আমদানি হয়েছে।
চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস বলেন, ‘মসলার অধিকাংশই আমদানি করা হয় ভারত থেকে। আমাদের খাতুনগঞ্জে মসলার দাম বাড়বে নাকি কমবে সেটা নির্ভর করে ভারতের ওপর। সেখানে কমলে আমাদের এখানেও কমে যাবে। আর সেখানে বাড়লে আমাদের এখানে দাম বাড়াটা তো স্বাভাবিক। তার ওপর ডলারের সংকট তো দীর্ঘদিন ধরেই ভোগাচ্ছে আমাদের। তাই শতভাগ মার্জিন দিয়ে মসলা আমদানি করাটা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে। তাই আশা করছি পণ্যটির মূল্য আর বাড়বে না। আদা, রসুনের দামও নতুন করে বাড়েনি। সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে কোরবানি ঘনিয়ে এলে দাম বাড়বে কিনা, সেটা নির্ভর করবে পণ্যের আমদানির পরিমাণ, আমদানি খরচ ও জোগানের ওপর।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানি ভালো ছিল। তাই বর্তমানে সরবরাহেও ঘাটতি নেই। তবে হ্যাঁ, মসলার দামটা একটু বেড়েছে। মূলত ডলার রেট বাড়ার কারণে এসব পণ্যের দামে প্রভাব পড়ছে। কোরবানিকে ঘিরে দাম বেড়েছে- এমনটা বলা ঠিক হবে না। এখন পণ্যের আমদানি খরচ অনেক বেশি। সেটাও বোঝা দরকার।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমরা যখন বিভিন্ন সভা, সেমিনারে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি, তখন কিন্তু বাজার তদারকি বা অভিযান পরিচালনার বিষয়ে বারবার বলে থাকি। জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার বা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সেই চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মধ্যে যতক্ষণ বিবেকবোধ জাগ্রত না হবে , নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা না করবে, ততক্ষণ এসব সমস্যার সমাধান হবে না। ঈদ আসছে, কোরবানিতে মানুষের একটা চাপ থাকে। সেখানে ব্যবসায়ীরা মানবিক হবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করি।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। অনিয়ম বা কারচুপি পেলে জরিমানা করছি। কিন্তু আমাদের লোকবল কম, এটাও মাথায় রাখতে হবে। ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়লে আমাদের কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তখন আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’