ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার গরম

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ১১:৫০ এএম
খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার গরম
ডলার সংকট ও আমদানী খরচ বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মসলার বাজার গরম। ছবি: খবরের কাগজ

কোরবানির মৌসুম ঘনিয়ে আসতেই চড়া হতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার। এক মাসের ব্যবধানে এলাচ, জিরা, জয়ত্রী, গোলমরিচ, হলুদসহ বিভিন্ন মসলার দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির কেজিতে দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫৫০ টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় মসলার দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ঈদের আগে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। 

চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি এলাচে ১ হাজার ৫৫০ টাকা বেড়ে এর দাম হয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ টাকা, জিরা কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে ৭০০, জয়ত্রী কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯৫০, গোলমরিচ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৮৫০, হলুদের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩১০, কালিজিরা কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৩২০, তেজপাতা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০, সাদা সরিষা কেজিতে ৩৫ টাকা বেড়ে ৩০০ ও ধনিয়া কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

তবে দাম কমেছে লবঙ্গ, শুকনো লাল মরিচ, দারুচিনি ও মিষ্টি জিরার। কেজিতে ২২০ টাকা কমে প্রতি কেজি লবঙ্গ হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দারুচিনির কেজিতে ১০০ টাকা কমে ৪০০ টাকা, মিষ্টি জিরা কেজিতে ৫ টাকা কমে ১৮০ টাকায় ও শুকনো লাল মরিচের কেজিতে ৬০ টাকা কমে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

তাছাড়া প্রতি কেজি জায়ফল ৭০০ টাকা, মেথি ১৩০, কিশমিশ ৫২০, আখরোট ৮৮০, চায়না আদা ১৯৫, চায়না রসুন ২০০, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

চার মাসে আমদানি হয়েছে ৬৫ হাজার টন মসলা 
গত চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৬৪ হাজার ৭৯৫ টন মসলা আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৯ হাজার ৭০৪ টন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৭ হাজার ৯৩ টন, মার্চে ১৫ হাজার ৮৭৫ টন ও এপ্রিলে ১২ হাজার ১২৩ টন মসলা আমদানি হয়েছে। 

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৭৩১ টন এলাচ, ৫ হাজার ১৮০ টন দারুচিনি, ১ হাজার ৮৪৪ টন লবঙ্গ, ১ হাজার ৪২৪ টন জিরা, ৩ হাজার ৭০১ টন কিশমিশ, ৭২ টন জয়ত্রী, ৪৯ টন জায়ফল, ৯৯০ টন গোলমরিচ, ১৮০ টন মেথি, ৬৩ টন ধনিয়া, ১৯ হাজার ৩০৯ টন আদা, ২৭ হাজার ৬৭৩ টন রসুন, ৯৫২ টন হলুদ, ৭৬৬ টন শুকনো মরিচ ও ৪১৭ টন মৌরি আমদানি হয়েছে। 

চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস বলেন, ‘মসলার অধিকাংশই আমদানি করা হয় ভারত থেকে। আমাদের খাতুনগঞ্জে মসলার দাম বাড়বে নাকি কমবে সেটা নির্ভর করে ভারতের ওপর। সেখানে কমলে আমাদের এখানেও কমে যাবে। আর সেখানে বাড়লে আমাদের এখানে দাম বাড়াটা তো স্বাভাবিক। তার ওপর ডলারের সংকট তো দীর্ঘদিন ধরেই ভোগাচ্ছে আমাদের। তাই শতভাগ মার্জিন দিয়ে মসলা আমদানি করাটা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে। তাই আশা করছি পণ্যটির মূল্য আর বাড়বে না। আদা, রসুনের দামও নতুন করে বাড়েনি। সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে কোরবানি ঘনিয়ে এলে দাম বাড়বে কিনা, সেটা নির্ভর করবে পণ্যের আমদানির পরিমাণ, আমদানি খরচ ও জোগানের ওপর।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানি ভালো ছিল। তাই বর্তমানে সরবরাহেও ঘাটতি নেই। তবে হ্যাঁ, মসলার দামটা একটু বেড়েছে। মূলত ডলার রেট বাড়ার কারণে এসব পণ্যের দামে প্রভাব পড়ছে। কোরবানিকে ঘিরে দাম বেড়েছে- এমনটা বলা ঠিক হবে না। এখন পণ্যের আমদানি খরচ অনেক বেশি। সেটাও বোঝা দরকার।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমরা যখন বিভিন্ন সভা, সেমিনারে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি, তখন কিন্তু বাজার তদারকি বা অভিযান পরিচালনার বিষয়ে বারবার বলে থাকি। জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার বা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সেই চেষ্টা করছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মধ্যে যতক্ষণ বিবেকবোধ জাগ্রত না হবে , নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা না করবে, ততক্ষণ এসব সমস্যার সমাধান হবে না। ঈদ আসছে, কোরবানিতে মানুষের একটা চাপ থাকে। সেখানে ব্যবসায়ীরা মানবিক হবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করি।’ 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। অনিয়ম বা কারচুপি পেলে জরিমানা করছি। কিন্তু আমাদের লোকবল কম, এটাও মাথায় রাখতে হবে। ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়লে আমাদের কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তখন আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

রাজশাহীতে মাছচাষিদের মাথায় হাত, পানচাষিরা সংকটে

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
রাজশাহীতে মাছচাষিদের মাথায় হাত, পানচাষিরা সংকটে

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও ‘কমপ্লিট শাট ডাউন’ শেষে সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও কারফিউ চলছে। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ায় পান ও মাছচাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বড় অঙ্কের লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। পানচাষিরা বলছেন, বাজারে পানের চাহিদা কমে গেছে। সরবরাহ আগের চেয়ে কমেছে। অন্যদিকে মাছ বিক্রি করতে না পেরে প্রতিদিন পুকুরে মাছের খাদ্য বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছচাষিরা বড় লোকসানের সম্মুখীন হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার। অন্যদিকে রাজশাহী মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার প্রায় ১৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর পুকুরে (পুকুরের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার) মাছের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টন। এই মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৮টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি দেশব্যাপী অরাজক পরিস্থিতির কারণে পান ও মাছ চাষ এবং এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মহব্বতপুর এলাকার পানবরজ মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য বছরের মতো এবারও আমি ২০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ করেছি। বিক্রির উপযোগী হওয়ায় প্রতিদিন ভোরে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ শুরু করেছিলাম। হঠাৎ দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ক্ষতির শঙ্কায় পান সরবরাহ বন্ধ করে দিই। এতে বরজের অনেক পান পেকে ও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

দুর্গাপুর উপজেলার পানবরজ মালিক মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমার ৮ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। রাজশাহীর পান ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভালো দামে পান বিক্রি করছিলাম। দেশে চলমান কারফিউয়ের মাঝেও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে বাধা না থাকায় এখনো নিয়মিত পান সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে চাহিদা কম থাকায় সরবরাহও কম।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা বলেন, ‘দেশে উত্তেজনা বিরাজ করলে এর প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পড়ে। তবে কারফিউয়ের কারণে পানের খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা না। পানের ট্রাক রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।’

এদিকে কারফিউয়ের কারণে রাজশাহী থেকে কোথাও মাছ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিক্রি করতে না পারায় প্রতিদিন মাছের খাবার জোগান দিতে চাষিদের বাড়তি ব্যয় গুনতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন রাজশাহীর মাছচাষিদের কয়েক কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুর্গাপুরের মাছ ব্যবসায়ী আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১১০ হেক্টর জমির পুকুরে মাছ চাষ করেছি। তবে শাট ডাউন-কারফিউয়ের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ মাছ আহরণ বন্ধ রেখেছি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ টন করে মাছ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করতাম। বিক্রি বন্ধ রাখায় প্রতিদিন মাছের খাবার দিতে হচ্ছে। এতে অনেক অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে।’
পবা উপজেলার মাছচাষি আসাদুল্লাহ গালিব বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমের আগে মাছ বিক্রি করে নতুন করে পোনা ছাড়া হয়। কিন্তু দুদিন কিছু মাছ ধরতেই দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় মাছ বিক্রি আটকে গেছে। এতে বাকি মাছগুলোর খাবার দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ হচ্ছে।’

জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মাছ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো যাচ্ছে না। এতে যে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। মাছ তো আর নষ্ট হয়নি, পুকুরেই আছে। যদি এক সপ্তাহের বেশি এমন অবস্থা থাকে সে ক্ষেত্রে ক্ষতি হবে।’ 

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘রাজশাহীর মাছ খুবই প্রসিদ্ধ। ঢাকাসহ দেশের ১৮টি জেলায় প্রতিদিন এখান থেকে ৮-১০ কোটি টাকার মাছ যায়। কিন্তু সেটি একেবারে বন্ধ। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা করতে পারছেন না। সব মিলিয়ে রাজশাহীতে দৈনিক শতকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’

বন্যা আর কারফিউর প্রভাব অচল তাঁতের হাট

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৬ এএম
অচল তাঁতের হাট
সিরাজগঞ্জে বন্যা আর কারফিউতে অচল তাঁত কাপড়ের হাটগুলো। ছবিটি সম্প্রতি বেলকুচি উপজেলার সোহাগপুর হাট থেকে তোলা// খবরের কাগজ

বন্যা, বৃষ্টি আর কারফিউতে অচল হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সোহাগপুর, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের তাঁত পণ্যের কাপড়ের হাটগুলো। গত তিন সপ্তাহ আগে যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে জেলার কয়েক শ তাঁতের কারখানা। ফলে গত এক মাস ধরে তাঁতে উৎপাদিত কাপড় বিক্রি করতে না পারায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁত মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁত বোর্ড বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাঁত শ্রমিক ও মালিকদের সহায়তা দেওয়া হবে এবং কারফিউ উঠে গেলে তাঁত পণ্যের বাজারজাত করার ব্যবস্থা করা হবে।  

জানা যায়, জেলার বেলকুচির ঐতিহ্যবাহী সোহাগপুর কাপড়ের হাটে প্রতি সোমবার ও মঙ্গলবারে পা ফেলার জায়গা থাকে না। ওই সময় ক্রেতা, বিক্রেতা আর পাইকারদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে হাটের আশপাশের এলাকা। গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, হাটে চলছে সুনসান নীরবতা, বেচাকেনা নেই বললেই চলে।

একই অবস্থা বিরাজ করছে ঐতিহ্যবাহী শাহজাদপুর উপজেলার কাপড়ের হাটেও। প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয় হাটের বেচাকেনা এবং এটি চলে বুধবার সারাদিন। কোটি কোটি টাকার বেচাকেনা হয় এই হাটে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কাপড় কিনতে পাইকার ও ব্যবসায়ীরা আসেন এই হাটে। তবে চলতি সপ্তাহে কারফিউ আর গত এক মাস ধরে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে দূর-দূরান্তের পাইকাররা আসতে পারছেন না। ফলে কোনো বেচাকেনা নেই হাটে। এর ফলে তাঁতশিল্পের উৎপাদিত কাপড় নিয়ে চরম বিপাকে তাঁত মালিকরা। চলতি বন্যায় তাঁতশিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুরোপরি ঠিক হতে অনেক সময় লাগবে। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের স্থবিরতা ও কারফিউতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন তাঁত মালিকরা।

সোহাগপুর হাটে কাপড় বিক্রি করতে আসা তাঁত মালিক সোরহাব আলী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এই হাটে কাপড় বিক্রি করে আসছি। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যে কখনো পড়তে হয়নি। সকালে হাটে এসেছি কাপড় নিয়ে। কিন্তু কোনো পাইকার ও ব্যবসায়ীরা দাম বলছেন না। কাপড় নিয়ে বসে আছি। দুই হাজার টাকার কাপড় এক হাজার টাকাও দাম বলছেন না। ব্যবসারীরা বলছেন, কাপড় নিয়ে কী করব, দেশের পরিস্থিতি ভালো না।’

আরেক তাঁত মালিক রহমান শেখ বলেন, ‘তাঁতের পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু বেচাকেনা হচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা না এলে তো কাপড় বিক্রি হবে না। আর কাপড় বিক্রি করতে না পারলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও দিতে পারব না। এভাবে দেশ চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে পথে বসে যেতে হবে। তাই সরকারের কাছে এর একটা সমাধান চাই।’

এ ব্যাপারে তাঁত ব্যবসায়ী আলী আকবার বলেন, ‘একদিকে বন্যায় তাঁত কারখানাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরেও সরকার আবার কারফিউ জারি করেছে। মানুষ হাটে আসতে ভয় পাচ্ছে। এ কারণে আমাদের কাপড়ের ব্যবসায় ধস নেমে এসেছে। তাই এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

কাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, ‘কাপড় কিনবো বিশ পেটি। কিন্তু কাপড় কিনছি মাত্র দুই পেটি। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছি না। কাপড় কিনেই বা কী করব? দেশের পরিস্থিতি ভালো না।’

কাপড়ের আরেক পাইকার খলিল মিয়া বলেন, ‘অনেক কষ্টে কাপড় কিনতে হাটে আসছি। কিন্তু কাপড় না কিনে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। দেশের পরিস্থিতি আবার ভালো হলে কাপড় কিনবো। এখন কিনলে বিক্রি করতে পারব না। এতে লোকসানে পড়তে হবে।’

হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ারলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদিউজ্জামান মণ্ডল বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও কারফিউতে কাপড়ের হাটগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। পাইকার না আসায় বেচাকেনা নেই বললেই চলে। এভাবে আরও কয়েক সপ্তাহ চলতে থাকলে কাপড়ের ব্যবসায় পুরোপুরিভাবে ধস নেমে যাবে। তাঁতিরা একবারে পথে বসে যাবেন। কাপড়ের বেচাকেনা না হলে শ্রমিকদের বেতন দেওয়াও সম্ভব হবে না। সরকারের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

বেলকুচি উপজেলার তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসার তন্নি খাতুন বলেন, ‘বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে তাঁতশিল্পের। এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে কারফিউ। তাঁত মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাঁতমেলার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করা হবে।’

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া সুলতানা কেয়া বলেন, ‘তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হবে। তাঁত বোর্ড ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। কারফিউ শিথিল হলে তাঁত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা করা হবে।’

আম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা, ১০ কোটি ক্ষতির শঙ্কা

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১১ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৪ এএম
আম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা, ১০ কোটি ক্ষতির শঙ্কা
ছবি : খবরের কাগজ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী সহিংসতা ও কারফিউয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে বিপাকে আমচাষি, বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীয়রা। কয়েক দিন ধরে বাগান থেকে আম পাড়তে পারছেন না চাষিরা। গাছেই পেকে পচে যাচ্ছে। এতে ১০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে বিভিন্ন জাতের আম থোকায় থোকায় ঝুলছে। তবে সহিংসতা ও কারফিউর কারণে রাস্তায় যানবহনসংকট, বাজারে ভোক্তা না থাকায় গাছ থেকে আম তুলছেন না আমচাষি ও বাগানমালিকরা। এতে গাছেই আম পেকে পচে নষ্ট হচ্ছে।

আমচাষি মনজের আলম মানিক জানান, এবার আমের দাম ভালো পাচ্ছিলাম। কিন্তু সহিংসতা ও কারফিউর কারণে বাগানের আমগুলো তোলা যাচ্ছে না। গাছেই আম পেকে নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আম তুলতে না পারলে লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হবে।’ 

আমচাষি বিপ্লব বলেন, ‘নাবি জাতের (আয়ানভোগ) আমগুলো গত এক মাস ধরে পাকা শুরু করেছে। এখন আম সম্পূর্ণ পেকে গেছে। গাছে থাকতে থাকতে আমগুলো পচে নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় আম পাঠালেও রাস্তা থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এতে আমার ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত কারফিউ উঠিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।’ 

আম বাগানমালিক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গাছ থেকে আম পাড়তে না পারাই অর্ধেকের বেশি আম পেকে পড়ে গেছে। পাকা আমগুলো কোথাও পাঠাতে পারছি না। এতে আমরা বাগানমালিকরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছি।’

শিবগঞ্জ ম্যাঙ্গো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘কারফিউর মধ্যে আমচাষিরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ফজলি, বারি-৪ ও আম্রপালি আমগুলো এখন ওভার ম্যাচুয়েড হয়ে গেছে।
 
কারফিউর কারণে বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলো বন্ধ। অনলাইনে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, ‘কানসাট জেলার বড় আমের বাজার। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। কিন্তু সহিংসতা ও কারফিউর কারণে এখন প্রতিদিন ৪ থেকে ৫০ ট্রাক আম যাচ্ছে। এতে আমচাষি, আমের আড়তদারদের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার কারফিউ তুলে না নিলে আম ব্যবসায় ব্যাপক ধস নামবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘সীমিত পরিসরে আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে মণপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা কম দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে সাড়ে ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।’

চাল-চিনি-আটা আগের দামেই

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
চাল-চিনি-আটা আগের দামেই
ছবি : সংগৃহীত

সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা, মেঘনাসহ অন্যান্য কোম্পানির অসংখ্য গাড়ি ঢাকায় এসেছে। সরবরাহ বেড়েছে আটা, চিনি, তেল, লবণের। নওগাঁ, দিনাজপুর, শেরপুরসহ অন্য জেলা থেকে বিভিন্ন কোম্পানির চালও বিভিন্ন বাজারে এসেছে। সারা দেশে কারফিউ জারি করা হলেও সহিংসতার আতঙ্ক কাটেনি ড্রাইভারদের। 

মালিক সমিতি দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলে রাজি হওয়ায় ভয়ের মধ্যেই বিভিন্ন জেলা ও মিল থেকে ঢাকায় চাল, আটা, চিনিভর্তি ট্রাক আনছেন। এর ফলে সরবরাহ অনেক বেড়েছে। দাম বাড়েনি। আগের দামেই এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
মোহাম্মদপুর এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার। তারপরও কৃষিমার্কেট বাজারে গতকাল দেখা গেছে বিভিন্ন দোকানে চালভর্তি ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে। রাসেল এন্টারপ্রাইজের সুমন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের নামে সহিংসতার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কারফিউ জারির ৬ দিন পর কৃষিমার্কেটে বৃহস্পতিবার প্রচুর চালের ট্রাক এসেছে। তাই দাম বাড়েনি। পাইকারি পর্যায়ে ৬৩-৬৫ টাকা কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাক মালিকরা এখনো গাড়ি পোড়ার ভয়ে আতঙ্কে আছেন। এ জন্য ভাড়া বেশি নিচ্ছেন।’
 
অন্যান্য চাল ব্যবসায়ীও বলছেন, সারা দেশে সহিংসতা চলতে থাকায় কয়েক দিন কোনো চালের গাড়ি আসেনি। গতকাল অনেক গাড়ি আসে। সেই গাড়ির চাল আনলোড করা হচ্ছে। এ সময় শফিক নামে এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, ‘ভয়ে আতঙ্কের মধ্যেই শেরপুর থেকে চাল আনা হয়েছে। সকালে এসেছি। আজ এই মার্কেট বন্ধ। তাই আস্তে ধীরে ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে।’ 

এই বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা সারোয়ার বলেন, ‘দাম বাড়েনি। আগের মতোই মিনিকেট ৭০ টাকা, আটাশ চাল ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’ 

সরবরাহ ও দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির মো. ইউসুফ বলেন, ‘সহিংসতার কারণে কয়েক দিন চাল না এলেও মজুত একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। চাল আসতে শুরু করেছে। সরবরাহ বেড়েছে। দাম বাড়েনি। আগের মতোই মিনিকেট ৭০ টাকা কেজি, আটাশ ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১২০-১৪০ টাকা কেজি।’ 

এই বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের বিক্রয়কর্মী শামীম বলেন, ‘কয়েক দিন পর গতকাল সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা, মেঘনাসহ অন্যান্য কোম্পানির গাড়ি এসেছে। এসব গাড়িতে প্রচুর আটা, চিনি, তেল, লবণ এসেছে। কোনো জিনিসের দাম বড়েনি। আগের মতোই ২ কেজি আটা ১০০-১২০ টাকা, ১লিটার তেল ১৬৫ টাকা, ৫ লিটার ৮০০ টাকা, মসুর ডাল ১২০-১৪০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশে কারফিউ জারি করেছে। তবে কেনাকাটাসহ জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কারফিউ শিথিল করা হচ্ছে প্রতিদিন। এ সময় দোকান খোলা হচ্ছে। প্রথম দিন বিক্রির হিড়িক পড়লেও পরে বিক্রি কমে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ বাজারে আসেন না। আগের মতো বিক্রি হয় না।’ 

এই বাজারে সোনালি ব্রয়লার হাউসের মালিক লিটন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে পরিস্থিতি ভালোর দিকে। বিভিন্ন জেলা থেকে মুরগি আসছে। এ জন্য আগের চেয়ে দামও কমেছে। ব্রয়লার ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ অন্য বিক্রেতারাও কম দামে মুরগি বিক্রি করছেন। 

এদিকে চালের আরেক মোকাম বাদামতলিতেও চালের দাম বাড়েনি বলে বিক্রেতারা জানান। দামের ব্যাপারে এই বাজারের সলিমুল্লাহ বলেন, ‘গতকাল প্রচুর চালের ট্রাক এসেছে। এ জন্য দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে নাবিল, এসিআই, আকিজ, মজুমদারের মিনিকেট ৬৩-৬৭ টাকা কেজি, আটাশ ৫২ টাকা ও মোটা চাল ৪৫ টাকা কেজি। অন্য চাল ব্যবসায়ীরাও বলেন, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর সরকার দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিলে গতকাল প্রচুর চালের ট্রাক বাজারে এসেছে।’ 

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আগের চেয়ে রাজধানীতে ডিমের গাড়িও বেশি এসেছে বলে জানা গেছে। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানউল্লাহ বলেন, ‘আগের চেয়ে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে। দামও কমেছে। গতকাল বিভিন্ন মোকাম থেকে ১৮-২০ লাখ পিস ডিম এসেছে। ১০০ ডিম বিক্রি করা হয়েছে ১১০০ টাকা বা ডজন ১৩২ টাকা। যা আগের চেয়ে কম।’ সেই ডিম টাউনহল বাজার ও কারওয়ান বাজারে ১৪০-১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতে সেই ডিম সরবরাহের অজুহাতে ১৬০-১৬৫ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সাদেক খান বাজার, যাত্রাবাড়ীতে আগের চেয়ে বেশি করে সবজি আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিভিন্ন মোকাম থেকে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের সরবরাহ বেড়েছে বলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান। এসব পেঁয়াজ বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা ১১৫-১২০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, আদা ২৮০-৩০০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। 

সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০৭ এএম
সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
ছবি : সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রাহকরা তাদের সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তির টাকা জমা করতে না পারায় হঠাৎ করেই তারল্যসংকটে পড়েছে দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক। সপ্তাহব্যাপী আন্দোলন শেষে তাই গ্রাহকের নগদ অর্থের চাহিদা পূরণ করতে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তারল্যসংকট পরিস্থিতি সামলাতে গতকাল বুধবার ব্যংকগুলোকে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছে। 

অ্যাশিওরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) ও ইসলামী ব্যাংক লিকুইডিটি সাপোর্ট (আইবিএলএস)-এর আওতায় প্রথাগত বাণিজ্যিক ব্যাংক (কনভেনশনাল কমার্শিয়াল ব্যাংক) ও ইসলামী ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত নীতি সুদহারে (পলিসি রেট বা রেপো রেট) এ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যাংক খোলা থাকলে একটা নিয়মিত অর্থপ্রবাহ থাকে। যেমন গ্রাহক তার সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তির টাকা জমা দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে সাধারণ ছুটি থাকায় প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী লেনদেন হয়নি ব্যাংকে। তাই ব্যাংকে নগদ টাকা জমা পড়েনি। এখন যে তারল্যসংকট তা সাময়িক।’ 

তিনি বলেন, ‘তার পরও ব্যাংকে নগদ অর্থের চাহিদার চাপ আমাদের ধারণার চেয়ে কম হয়েছে। এখনো ব্যাংকের সেবা সীমিত পর্যায়ে আছে। ব্যাংকগুলো পূর্ণ মাত্রায় চালু হলে এ-সংকট থাকবে না।’

উল্লেখ্য, এএলএস ও আইবিএলএস-এর মাধ্যমে এক সপ্তাহ আগে গত ১৮ জুলাই ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা ধার নিয়েছিল। এক সপ্তাহ পর ২৪ জুলাই ব্যাংকগুলো মোট ২০৪টি আবেদনের বিপরীতে ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার নেয়।

হিসাব অনুযায়ী ১৮ জুলাইয়ের তুলনায় ২৪ জুলাইয়ে দেওয়া ধারের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা বা ৩৪.২৯ শতাংশ বেশি।