![শ্যামনগরে লবণাক্ত জমিতে অভাবনীয় কৃষি সাফল্য](uploads/2024/05/23/satkhira-sunflower-1716443927.jpg)
সাতক্ষীরা জেলায় লবণাক্ত জমিতে দেখা দিয়েছে অভাবনীয় কৃষি সাফল্য। দিগন্তজুগড় শস্যের খেতগুলোয় ভুট্টা ও সবজির আবাদে সবুজ হয়ে গেছে। এক ফসলি জমিগুলো এখন তিন ফসলে রূপান্তরিত হচ্ছে। সেই লবণাক্ত জমিতে লাউ, কুমড়া, পেঁপে, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, শসা, লালশাক এবং উচ্ছেসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন করে সফল হয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরেই লবণাক্ততার কারণে জমিতে ফসল ফলত না। মিঠাপানির আধারগুলো শুকিয়ে গেছে। গ্রামের পাশ দিয়ে খাল প্রবহমান থাকলেও পানির অভাবে শস্য আবাদ করতে পারেন না উপকূলের কৃষকরা। শুষ্ক মৌসুমে দিগন্তজুড়ে দেখা দেয় খরা। ইতোমধ্যে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন এই এলাকার কৃষকরা। পতিত থাকা ফসলি জমির কোনায় পুকুর করে মিঠাপানির সংস্থান করছেন তারা। সেই পানি দিয়ে এখন ফলানো হচ্ছে শস্য। দিগন্তজুগড় শস্যের খেতগুলোয় ভুট্টা ও সবজির আবাদে সবুজ হয়ে গেছে। এক ফসলি জমিগুলো এখন তিন ফসলে রূপান্তর হচ্ছে।
সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারি ইউনিয়নের খুটিকাটা গ্রামের কৃষকরা আগে শুধুমাত্র আমন ধান আবাদ করতে পারতেন। এখন সেই লবণাক্ত জমিতে লাউ, কুমড়া, পেঁপে, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, শসা, লাল শাক এবং উচ্ছেসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন করে সফল হয়েছেন তারা। সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আশপাশের কৃষকদের।
খুটিকাটা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নির্মল সরকার, রবিন্দ্র নাথ সরকার ও নিহার সরকার জানান, লবণাক্ততার কারণে তাদের গ্রামের শত শত হেক্টর কৃষিজমি পতিত থাকে। ঠিকমতো ফলে না ফসল। তাছাড়া মিঠাপানির আধারগুলো শুকিয়ে গেছে। গত বছর সিনজেনটার সহযোগিতায় লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন করে এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন তারা। গ্রামের অধিকাংশ কৃষককে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পুকুর খনন করে দিয়েছে সিনজেনটা। এ ছাড়া আবাদের জন্য ভার্মি কম্পোস্ট সার প্লান্ট, শস্য বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করেছে তারা। চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে একেকজন কৃষক ৩০-৫০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। আরও অধিকসংখ্যক পুকুর খনন এবং গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো পুনঃখনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে বারো মাসই সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
এ বিষয়ে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সাতক্ষীরার যে অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে সারা বছর ফসল ফলাতে পারত না। সেখানে সিনজেনটার প্রযুক্তিগত ও উপকরণ সহায়তার মাধ্যমে এক ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। এতে কৃষকের সক্ষমতা এবং জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন হয়েছে। কৃষিতে একটা আমূল পরিবর্তন আনা গেছে। এ অঞ্চলে টেকসই কৃষি ব্যবস্থার পাশাপাশি রিজেনারেটিভ এগ্রিকালচার পদ্ধতিগুলো বাস্তবায়ন করছে সিনজেনটা। গো গ্রো প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসডিজির অনেকগুলো লক্ষ্য পূরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করে সক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবে আমরা কাজ করছি।’
এই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কৃষকদের শস্য আবাদে পুকুর খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিনজেনটা। এতে করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে লবণাক্ত জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন তারা। উপকূলীয় এলাকায় অধিকসংখ্যক পুকুর খননের পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে কৃষকরা বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতে পারেন। সিনজেনটা কৃষকদের পুকুর খননের পাশাপাশি বীজ, ভার্মি কম্পোস্ট, সোলার ইরিগেশন ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’
জানা গেছে, খুটিকাটা গ্রামে শস্য আবাদের মাধ্যমে কৃষিকে টেকসই রূপান্তর করতে গো গ্রো প্রকল্প গ্রহণ করেছে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড। গত বছরে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, উপকূলে বসবাসরত মানুষের বারোমাসই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও খরার কারণে এসব উপকূলবাসীদের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। সেখানে জমি পতিত থাকলে অর্থনৈতিকভাবে তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। তাদের টিকে থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার উপায় বের করতে হবে আমাদের। কারণ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা বন্ধ করা তো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে এমন পরিবেশে টিকে ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে। সিনজেনটার এ প্রযুক্তি এই জেলার অন্য গ্রামে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। সূত্র: বাসস