আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কোনো সুখবর নেই। পাশাপাশি নতুন করে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ও সোমবার (১০ জুন) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩০ পয়েন্ট।
বাজেট-পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে রবিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৮৭ শতাংশ শেয়ারের দামই কমেছে। বড় পতনের ফলে ডিএসইএক্স সূচক ৩৮ মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। গতকালও ডিএসইএক্স কমেছে ৬৫ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট। গতকাল ডিএসইক্সের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে।
এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছিল এটি। এ পতন আগামী অর্থবছরের বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে ঘটেছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেন। ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন হলে তার ওপর ১৫ শতাংশ কর ধার্য করা হয়। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী ৬০ লাখ টাকা ক্যাপিটাল গেইন করলে সেই ক্যাপিটাল গেইনের ৫০ লাখ টাকা করমুক্ত থাকবে। বাকি ১০ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। তবে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের দিন সূচক ও লেনদেন উভয় বাড়ে।
এতদিন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মূলধনি মুনাফায় কোনো কর ছিল না।
বাজেটে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ না করার জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এ করারোপ করা হয়েছে।
ঢাকার মতো চট্টগ্রামের বাজারেও এ দুই দিন বড় দরপতন হয়েছে। সেখানকার সার্বিক সূচকটি গত রবি ও সোমবার এ দুই দিনে কমেছে ২৬৮ পয়েন্ট।
ডিএসইতে সোমবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১৮ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৩৫৭ কোটি টাকা।
গত ফেব্রুয়ারি থেকেই পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতন চলছে। এ দরপতনের জন্য কারসাজি ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বিএসইসির নানা ভুল পদক্ষেপকে দায়ী করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে এ দুই দিন দরপতনের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল গ্রামীণফোন, ওয়ালটন, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকন ফার্মা, লাফার্জহোলসিম, রবি আজিয়াটা, রেনাটার মতো ভালো মৌল ভিত্তির কোম্পানির।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজেটে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপের প্রস্তাব বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি হতাশ করেছে।
ব্রোকারেজ হাউসসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপ সেই ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ডিএসইতে সোমবার ৩৯১টি কোম্পানির লেনদেনের মধ্যে ২৬টির শেয়ার ও ইউনিট দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
এদিন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সেরে দর আগের দিনের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ টাকা ২০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৮৯ পয়সা। তাতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।
দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের দর আগের দিনের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩৫ পয়সা। আর ১ টাকা বা ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
আজ দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো- এটলাস বাংলাদেশে, জেএমআই হসপিটাল, ইউনিলিভার কনজ্যুমার, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যালান্সড ফান্ড, উত্তরা ব্যাংক এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহী খবরের কাগজকে বলেন, বেশ কিছু কারণে পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপ বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। কারণ এ বাজেটে পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। এমন সময়ে এ করের প্রস্তাব করা হয়েছে, যখন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যেই করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ফ্লোর প্রাইস প্রয়োগের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের কারণে বিনিয়োগকারীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।