ঢাকা ৫ ভাদ্র ১৪৩১, মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে হবে

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১১:০৪ এএম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে হবে

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন অর্থ উপার্জনের অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ ডিজিটাল স্বাক্ষরতায় এখনো অনেক পিছিয়ে। ভুল তথ্যের বিশ্বাসপ্রবণতা এ দেশের মানুষের মধ্যে অনেক বেশি। দেশের অন্যতম যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউব নানাভাবে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। এসব ভুল তথ্য ব্যবহার করে তারা প্রচুর মুনাফাও করছে। তথ্যপ্রবাহের এই ব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের গবেষণা ইউনিট ‘ডিসমিসল্যাব’ ইউটিউবের ভিডিও নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বেশ কিছু তথ্য উল্লেখ করেছে। প্রতিবেদনটি গত ১০ জুলাই প্রকাশ করা হয়। 

ডিসমিসল্যাবের গবেষকরা রিউমর স্ক্যানার, বুম, নিউজচেকার, ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো, ফ্যাক্ট ওয়াচ, এএফপি ফ্যাক্ট চেকসহ দেশের সাতটি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত ২ হাজার ৪২টি নিবন্ধ বিশ্লেষণ করেছেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ইউটিউবে অনুসন্ধান চালানো হয়। শুধু মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন এর মধ্যে স্থান পায়। গবেষকরা এতে ৭০০টি ভুল তথ্যসংবলিত ভিডিও দেখতে পান। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি রাজনীতি এবং প্রায় ১৫ শতাংশ ধর্মসংক্রান্ত। এর পর আছে খেলাধুলা ও দুর্যোগ-সম্পর্কিত বিষয়। 

গবেষকরা এই ৭০০ ভিডিও নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। তারা প্রত্যক্ষ করেছেন, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ইউটিউব কর্তৃপক্ষ মাত্র ২৫টি ভিডিওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতগুলো ভুল তথ্যসংবলিত ভিডিও মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ৫৪১টি চ্যানেল থেকে এসব ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওগুলোতে আবার বিভিন্ন ব্র্যান্ড পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে দেশীয় সুপরিচিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনও রয়েছে। ভিডিওগুলোর গড় ভিউ ২ লাখের বেশি। এতে ৮৩টি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন রয়েছে। বিদেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপন রয়েছে, যারা বাংলাদেশি দর্শকদের প্রাধান্য দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। 

ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এসব অসত্য তথ্য প্রদানকারীর বিরুদ্ধে তেমন একটা পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বরং ব্যবহারকারীরা অর্থ উপার্জনের একটা সহজ মাধ্যম পাওয়ায় যেকোনো অসত্য তথ্য এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে উপস্থাপন করতে কুণ্ঠাবোধ করছেন না। বিজ্ঞাপন ইউটিউবের আয়ের একটা মাধ্যম। ইদানীং কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সংখ্যাও দেশে বেড়েছে। এরা ভিডিওগুলোতে দেওয়া বিজ্ঞাপন থেকে মুনাফা পান কি না, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ইউটিউবে একশ্রেণির অসাধু প্রবেশ করেছে। তাদের স্বার্থে অনেক সময় এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে তারা সংগঠিত হয়ে তহবিলও সংগ্রহ করতে পারছে। কিন্তু ইউটিউব এ ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যা নিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তথ্যমতে, বাংলাদেশে ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৭ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ (গত এপ্রিল পর্যন্ত)। গত জানুয়ারিতে ইউটিউবের মাধ্যমে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশের কাছে পৌঁছেছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিজ্ঞাপনেরও সুরক্ষানীতি থাকা দরকার। যারা এসব প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তাদের আরও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও বেশি গ্রাহকসেবা পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জোর দিতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। ভুল তথ্যের বিষয়ে ইউটিউবের কাছে জবাবদিহি চাইতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

রাজনীতিমুক্ত থাকুক চিকিৎসাসেবা

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
রাজনীতিমুক্ত থাকুক চিকিৎসাসেবা

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর দেশের অন্যান্য খাতের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও নেমে আসে ভয়ংকর স্থবিরতা। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে হাসপাতালগুলোর সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে দলীয়করণ দেশের স্বাস্থ্য খাতকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। এতে চরম খেসারত দিতে হচ্ছে চিকিৎসা খাতকে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বড় কোনো অপরাধে জড়িত না থাকলে দ্রুত নিরাপদে কাজে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তা না হলে রোগীদের ভোগান্তি কমবে না। কয়েক হাজার সরকারি চিকিৎসক-কর্মচারী গা ঢাকা দিয়েছেন। এর সঙ্গে কয়েকদিন ধরে সারা দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেবা বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন। তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও করেছেন। রোগীর স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। যেখানে রোগীদের সেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

রাজনীতি আর চিকিৎসাসেবাকে এক করে গুলিয়ে ফেললে হবে না। চিকিৎসা পেশা থাকবে সেবার জন্য। কোনো চিকিৎসক নির্যাতনের শিকার হোন সেটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তবে কারও বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে সেজন্য দেশে প্রচলিত আইন আছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢালাওভাবে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত করা শুভফল বয়ে আনবে না। রাজনীতি করেন বলে একজন চিকিৎসক হয়রানির শিকার হবেন এটা কাম্য নয়। অনেকে পদত্যাগের পাশাপাশি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও বলছেন। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও কয়েকজন পরিচালকের পদত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখন তাদের দরকার সঠিক চিকিৎসাসেবা। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে সব মিলিয়ে সরকারের আওতায় চিকিৎসক, নার্স মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারী ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীর পদ সংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার। এর মধ্যে ৪১ হাজারের বেশি পদ আগে থেকে শূন্য পড়ে আছে। যা থেকে সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএইচসিপি বা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বাদ রেখে বাকি পদগুলো সবই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভিত্তিক দৈনন্দিন জরুরি সেবায় নিয়োজিত থাকার কথা। যাদের মধ্যে উচ্চপদের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন। আর এসব ক্ষেত্রে প্রতি স্তরেই রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশে সরকারি পর্যায়ের চিকিৎসক আছেন ৩৫ হাজারের বেশি। যাদের মধ্যে ৭ হাজার আছেন বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি হিসেবে। যারা কোনো হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন না। এদের অনেকেই শাস্তিস্বরূপ, আবার অনেকের স্বেচ্ছায় সুবিধা নিতে ওএসডি সুবিধা ভোগ করেন। এমন অবস্থায় এখন অর্ধেকের বেশি সাবেক সরকারের সমর্থক কর্মক্ষেত্রের বাইরে থাকায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা-কর্মীরা প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখলেও সরকার পতনের পর থেকেই তাদের হটিয়ে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরা জায়গা করে নেওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন। এ অবস্থায় রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

প্রবীণ চিকিৎসক নেতা ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব খবরের কাগজকে বলেন, চিকিৎসকদের পেশাগত স্বকীয়তা ও ব্রত ক্ষুণ্ন করতে দলীয় বিভাজনই যথেষ্ট। এখান থেকে বের হতে না পারলে সময়ে সময়ে এভাবেই রোগীদের জিম্মি দশায় পড়তে হবে। 

অন্তর্বর্তী সরকারকে এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রকে রাজনীতিমুক্ত করতে হবে। পারস্পরিক সহাবস্থান বজায় রাখার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে চিকিৎসাব্যবস্থাকে কলুষমুক্ত করতে সরকার তৎপর হবে। আশা করছি, দ্রুতই অন্তর্বর্তী সরকার এ সমস্যার সমাধান করবে।

দুদককে স্বাধীন কমিশন হিসেবে গড়ে তুলুন

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১১:১২ এএম
দুদককে স্বাধীন কমিশন হিসেবে গড়ে তুলুন

দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক হলো দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত দেশের একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থা। দেশে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে এটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার নিয়ে গঠিত সংস্থাটি। কিন্তু বহুদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাজের স্বাধীনতা হারিয়েছে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন করে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে সংস্থাটিকে ঘিরে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের ব্যাপারে কথা উঠেছে। অনেকে বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। পুরোপুরি স্বাধীনতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মেরুদণ্ড শক্ত করতে হবে। একসময় দুর্নীতিবাজরা প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলেই আতঙ্কে থাকত। 

দুদকের ভয়ে একসময় রাস্তায় দামি গাড়ি ও টাকা ফেলেও পালানোর খবর শোনা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংস্থাটিকে নতুন করে সংস্কার করে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন কমিশন গঠন করতে পারলে  দুর্নীতিবাজদের কাছে আবার মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। 

দুদকের ত্রৈমাসিক বার্তার তথ্যমতে, গত তিন মাসে সংস্থাটি ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা জব্দ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে কর্মকর্তাদের কাজে লাগালে দুর্নীতিবাজরা পালানোর পথ পাবে না। দুদকের সব ক্ষমতা চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ওপর থাকে। আর এসব পদে বসেন আমলারা। যে কারণে দুদক সম্পর্কে তাদের ধারণা কম থাকে। 

দুদকের কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং দুদক আইন সম্পর্কে যাদের অগাধ জ্ঞান রয়েছে, তাদের নিয়েই কমিশন গঠন হওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ ক্ষেত্রে একজন জুডিশিয়ারি সদস্য ও দুজন দুদকের ভেতর থেকে আসতে পারেন। দুদকে প্রেষণে নিয়োগ বন্ধ করা উচিত। প্রেষণে আসা এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায় অনেক সময় তাদের দায় দুদকের কর্মকর্তাদের ঘাড়ে পড়ে।

তথ্যমতে, দুদক বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি অনুযায়ী কমিশন কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে যেকোনো কর্মকর্তাকে যেকোনো সময় অব্যাহতি দিতে পারে। এতে করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদন্ত কর্মকর্তাদের অনেকটা একপেশে হয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় তাদের অন্যায় তদবিরও মেনে নিতে হয়। সংগত কারণেই তারা তাদের কাজের স্বাধীনতা হারান। 

তথ্যমতে, দুদকে প্রতিদিন গড়ে অভিযোগ জমা পড়ে প্রায় ৫ হাজার। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে এনফোর্সমেন্ট ও অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয় মাত্র ১০ থেকে ১২টি। এটিই দুদকের ‌‘দুষ্টচক্র’ বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে এই দুষ্টচক্র সমূলে উৎপাটন করতে হবে। 

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে গতি আনতে হলে তদন্ত সংস্থা হিসেবে দুদক কর্মকর্তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, ব্যাংকিং ও আয়কর বিভাগের সার্ভারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দুদক কর্মকর্তাদের তদন্তকাজে গতি আনতে ডাকযোগে চিঠির পরিবর্তে ডিজিটালাইজড ডাকের ব্যবস্থা করতে হবে। 

যাতে কমিশনের কাজে সময়ক্ষেপণ না হয়। সংস্কারের অংশ হিসেবে দুদক কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইটে দিতে হবে। দুদকের বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক স্বাধীন কমিশন গঠনই হোক অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সচল করুন

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:০২ এএম
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সচল করুন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি কর্মস্থলে আসছেন না। স্থানীয় সরকারের সব স্তরেই আওয়ামী লীগ তাদের কর্তৃত্ব রেখেছিল। জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বেশির ভাগ পদ দলীয় নেতা-কর্মীদের দখলে ছিল। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। 

অধিকাংশ সিটি করপোরেশনের মেয়র কর্মস্থলে আসছেন না। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকেরই খোঁজ মিলছে না। জীবন বাঁচাতে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি রয়েছেন আত্মগোপনে। তাদের অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম প্রধান নির্বাহী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী প্রকৌশলীরা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের হাতে থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। 

এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের গতি আনতে সেখানকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার মেয়র নেই, সেখানেও সিইওকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

তথ্যমতে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ১২৯ কাউন্সিলরের মধ্যে আত্মগোপনে আছেন ১১৮ জন। দেশের ৬৪টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মধ্যে ৪৪টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানই বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। ৪৯৫ উপজেলা পরিষদের ৩১৯টিতেই চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন। আর ৩৩০টির মধ্যে ২০৫টি পৌরসভার মেয়র আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া অনেক জনপ্রতিনিধি নিজ এলাকায় থাকলেও কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ৯টির মেয়র আত্মগোপনে রয়েছেন।

২০১৫ সালের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হতো। ২০১৫ সালের আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এই সিদ্ধান্তকে মেনে না নিয়ে নির্বাচন বর্জন করে। এর ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অনেক স্থানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। 

এতে দলের একচেটিয়া আধিপত্য স্থাপিত হয়। গত ৫ আগস্টের পর এসব প্রতিনিধি আত্মগোপনে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে একধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। জন্ম ও মৃত্যুসনদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। এ কারণে সেবাগ্রহীতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

এসব জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দলীয় মনোনয়ন যারা পেয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বে আসেননি। মনোনয়ন-বাণিজ্য, পেশিশক্তি, কালোটাকা ও প্রশাসনিক সহায়তায় তারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। তাই জনরোষের ভয়ে এখন পালিয়ে আছেন। তারা ফিরে না এলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাময়িক কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে কিছু অধ্যাদেশ পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হবে। অচল হয়ে পড়া স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম দ্রুত সচল করে সেবাগ্রহীতাদের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার যথার্থ ভূমিকা পালন করবে, সেটাই কামনা।

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:১৭ এএম
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশ কার্যত কয়েক দিন অচল ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করেছে। সরকার পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা বাজার মনিটরিং শুরু করেছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। অনেকে এতদিন চাঁদাবাজি করলেও এখন আর তেমন সাহস পাচ্ছেন না। 

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমেছে। অনেক সুযোগসন্ধানী বিক্রেতা এতদিন অতি মুনাফা করলেও এখন সুযোগ কম পাচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, করপোরেটদের সিন্ডিকেট এবং পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারলে আরও কমবে দ্রব্যের দাম। কারণ তারাই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্যের সরবরাহ এখন বেড়েছে। অনেকে আশা প্রকাশ করছেন, পণ্যের দাম অচিরেই কমে আসবে যদি চাঁদাবাজি বন্ধ করা যায়। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজারে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। 

মহাপরিচালক বলেন, বাজার তদারকিতে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনসংশ্লিষ্ট বিবিধ ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক বাজার মনিটরিং কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে যেন কেউ চাঁদাবাজিসহ ‘হিডেন চার্জ’ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। 

নিম্ন আয়ের মানুষের ৭০ ভাগ অর্থ চলে যায় খাবার কিনতে। খাদ্যে উচ্চমূল্যস্ফীতি মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। এখনো অনেক পণ্যের দাম লাগামছাড়া। অনেক নিত্যপণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। 

অনেকে ধারদেনা করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সঞ্চয় ভেঙে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ। অনেকে নিয়মিত খাবার তালিকা থেকে বেশ কিছু খাবার বাদ দিয়েছেন। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। 

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত জুলাইয়ে খাদ্যমূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশের ওপরে উঠেছিল। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সবার মতো বর্তমান সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত। যথাযথ নীতি প্রণয়নের জন্য প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত দরকার। 

সময়মতো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা হবে। গ্রামে ৬ টাকার বেগুন ঢাকায় ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। কৃষক ১০ কিলোমিটার দূর থেকে ফসল নিয়ে বাজারে এলেও দাম পান না। ফড়িয়ারা যেন ৫০ গুণ মুনাফা করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। এসব ঠিক করতে হলে বাজার মনিটরিং করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। 

ফল, সবজিসহ যেকোনো পণ্যভর্তি ট্রাক রাজধানীতে আসার পথে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা চাঁদা দিতে হতো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। ফুটপাতে যে চাঁদাবাজি হতো তাও বন্ধ হয়েছে। 

এই চাঁদা পুলিশ ও লাইনম্যানরা নিত বলে জানান বিক্রেতারা। এখন সাহস পাচ্ছে না চাঁদাবাজরা। এ কারণে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, নতুনভাবে যাতে আর কোনো চাঁদাবাজ না আসতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলের কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য পণ্য পরিবহনে পথে পথে এসব চাঁদা নিতেন। 

চাঁদাবাজদের ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। তাহলে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখুন

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৬ পিএম
আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০২:০২ পিএম
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখুন

গত মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগতে থাকা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ধৈর্য ধরে সরকারকে সাহায্য করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেছেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, বিভেদের সুযোগ নেই। এ সময় ৫৩ বছরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিচারে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান হিন্দু সম্প্রদায়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কয়েক দিন কার্যত দেশে সরকার ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও তাদের দায়িত্ব পালনে শঙ্কা বোধ করে অনেকটা আড়ালে চলে গিয়েছিল। সেই সুযোগে কিছু দুষ্কৃতকারী দেশের বিভিন্ন এলাকায় লুটতরাজ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অনেক দুষ্কৃতকারী হিন্দুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে বলেও জানা যায়। ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষের স্বাধীনতা রয়েছে। যার যার ধর্ম সে তা পালন করে থাকে। এমনকি মুসলমানদের ঈদের দিনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও মুসলিম প্রতিবেশীর বাড়িতে দাওয়াত গ্রহণ করে থাকে। অন্যদিকে হিন্দুদের পূজা-পার্বণেও মুসলিম প্রতিবেশী তাদের আতিথেয়তা গ্রহণ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। উদার চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার কথা। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি তাদের হীনম্মন্যতা পোষণ করে সাম্প্রদায়িক এই সম্প্রীতিতে ফাটল তৈরি করার অপচেষ্টায় রয়েছে। আমরা আগেও লক্ষ করেছি, যখনই এ দেশে কোনো রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, তখনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আমরা একটি বিষয় লক্ষ করেছি, তা হলো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী হিন্দুদের ওপর করা অত্যাচার-নির্যাতনকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা ঢাল হয়ে মন্দির, পূজামণ্ডপ পাহারা দিয়েছে। হিন্দু প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা রাত জেগে মন্দির পাহারা দিয়েছে। হিন্দুপাড়াগুলোতে যাতে দুষ্কৃতকারীরা না ঢুকতে পারে, সে জন্য পাড়া-মহল্লার মুসলিম সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ রাত জেগে সতর্ক থেকেছে; যাতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের খড়্গ না নেমে আসে। এ জন্য তাদের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ভাই ভাই। কোনো অবস্থাতেই তারা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। বরং বিপদে-আপদে সবাই সবার পরিপূরক।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন, তারা বলছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ ও প্রতিরোধে প্রয়োজন টেকসই সমাধান। ধর্মীয় সংখ্যালঘু রক্ষায় আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি করতে হবে। সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করার বিষয়ে তারা মতামত ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দুরা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও আজও তা থামেনি। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা যে ঘটছে তা বাস্তব সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, সংবিধানে যে অধিকার দেওয়া আছে তা ধর্ম-সম্প্রদায়নির্বিশেষে সব নাগরিকেরই প্রাপ্য। তিনি আরও বলেছেন, আমরা বৈষম্য নিরসনে কাজ শুরু করতে চাই এবং এটিই আমাদের অঙ্গীকার।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে সংখ্যালঘুরাও এ দেশের নাগরিক। তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে দল-মতনির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের সেই ইতিবাচক মানসিকতা পোষণ করতে হবে। তাহলেই একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।