ঢাকা ২৬ কার্তিক ১৪৩১, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দলীয় উপাচার্য নিয়োগ করুন

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৪ এএম
বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দলীয় উপাচার্য নিয়োগ করুন

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা গণহারে পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) হিসাবে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি। বেশ কয়েকটিতে এখনো একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। সরকার পতনের পর ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ ছেড়েছেন, যা মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশের বেশি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগে ‘নিরপেক্ষ  শিক্ষক’ খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেঁকে  বসেছিল দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি। দলসমর্থিত শিক্ষকদের প্রশাসনের শীর্ষ পদে বসানোর সংস্কৃতি  এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকার-সমর্থিত কর্তাব্যক্তিই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদে আসীন হন। বহুদিন ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সংস্কৃতির চর্চা করে আসছে। এটি কখনো উচ্চশিক্ষাব্যবস্থায় ভালো ফলাফল বয়ে আনেনি। বরং এই সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়েছে ছাত্রদের মধ্যেও। দলবাজ শিক্ষকরা ছাত্ররাজনীতিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উদ্বেগজনকহারে উসকে দিয়েছে। তারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীকে নানা কাজে ব্যবহার করছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাজনীতি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, সেখান থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে জাতির মেরুদণ্ড নামক শিক্ষা তার মূলশক্তি হারাবে।

ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। যে যেমন পেরেছে পদত্যাগ করেছে। আবার কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের জায়গায় শূন্যস্থান পূরণ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিএনপি সমর্থকরা। এই অবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাহলে সংস্কার করার কথা বলে লাভ হলো কী? তারা এসে আওয়ামী লীগের মতো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগে যে দলীয়করণ ও পক্ষপাতের বোঝা মাথায় নিয়ে চলছিল, সেটাই ফিরে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসনকে শতভাগ নিরপেক্ষ রাখতে হবে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণের কারণে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। উপাচার্যসহ শীর্ষস্থানীয় পদে দলীয় মদদপুষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়ায় তারা দলের মতামতকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। এই সুযোগে ক্ষমতাসীন দলগুলোর ছাত্র সংগঠনও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি হলগুলোতেও প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় তাদের দ্বারা  লাঞ্ছিত হয়েছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এসব ছাত্র সংগঠনের দ্বারা তিক্ত অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হয়েছেন। এসব পরিস্থিতি মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে গ্রহণযোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান সংকটের বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক দিক দিয়ে সবার কাছে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এর পর যত দ্রুত সম্ভব অন্তত প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ দলীয়ভিত্তিক প্রশাসন চান না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সরকারি সূত্র মতে, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে এক ধরনের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। সরকারের কেউ কেউ বলছেন, প্রথাগতভাবে দলীয় শিক্ষকদের উপাচার্য না করে তুলনামূলক অধিক যোগ্য ও সুনাম আছে এমন ব্যক্তিদের উপাচার্য করা দরকার। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের চাওয়া- উপাচার্য নিয়োগ তাদের মধ্য থেকে করা হোক। 

উচ্চশিক্ষায় নানামুখী সংস্কার কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নামে শিক্ষকদের একটি মোর্চা ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনার আয়োজন করে। সেখানে বলা হয়েছে, সব স্তরে দলীয় আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। সরকারকে উদার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের মতো চলতে দিতে হবে। প্রশাসনের পদে থাকা শিক্ষকদের সমিতির নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে না রাখার প্রস্তাবও করা হয়। 

উপাচার্য হলেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। সুতরাং, এই অভিভাবক নিয়োগ প্রক্রিয়াটা হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দলীয় উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিন্ন পদ্ধতি ও বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে। অধিকতর যোগ্য, মেধাবী ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।

প্রভাবশালীদের রাজস্ব ফাঁকিবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আদায়ের ব্যবস্থা করুন

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ এএম
আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
প্রভাবশালীদের রাজস্ব ফাঁকিবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আদায়ের ব্যবস্থা করুন

যথাযথভাবে রাজস্ব আদায় না হওয়া অর্থনৈতিক সংকটের একটা দিক। বিগত সরকারের আমলে এরকম রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা অনেক ঘটেছে। ফাঁকি দেওয়া সেই রাজস্ব কীভাবে আদায় করা যায়, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। 
খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বিগত সময়ে যারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন তারা রাজনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তাদের অনেকে দেশ ছেড়ে গেছেন। কেউ কেউ আছেন আত্মগোপনে। কেউ কারাগারে। অনুপস্থিত এই সব ব্যক্তির কাছ থেকে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। 

ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ১২২৮ জন। রাজস্বের পরিমাণও বিপুল, ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে চাইছে, কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। যেসব প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আদায় করার বিধান রয়েছে, তাতেই রয়েছে জটিলতা। কীভাবে এই জটিলতা কাটিয়ে রাজস্ব আদায় করা যায়, এ জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও তারা নিচ্ছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রাজস্ব আদায় না হওয়ায় এনবিআরকে গ্রহণ করতে হচ্ছে আইনি পদক্ষেপ। এরই অংশ হিসেবে প্রথমত, ফাঁকিবাজদের ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা জব্দ করা যায়। দ্বিতীয়ত, তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো, যে পরিমাণ রাজস্ব তারা পায় সেই পরিমাণ অর্থ ফাঁকিবাজদের অ্যাকাউন্টে নেই। ফলে, প্রাপ্য অর্থ তারা আদায় করতে পারবে না। এমন তথ্য দিয়েছে এনবিআর। 

স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে জটিলতা আরও বেশি। আইনিভাবে যারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন তাদের বাড়ি, ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক স্থাপনা, জমিজমা নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এনবিআর নিলামে তুলতে পারে। কিন্তু সেটা করা একেবারেই সহজ নয়। এসব সম্পত্তির দলিল বা আনুষঙ্গিক কাগজপত্রের খোঁজ পাওয়া কঠিন। অধিকাংশই নিজের নামে সম্পত্তি না করে অন্যের নামে করেছেন। কোনো কোনো দলিল ভুয়া। ফলে সম্পত্তি চিহ্নিত করাটা একটা সমস্যা। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আইনিভাবে সেই সব সম্পত্তি রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। এনবিআরের সূত্র অনুসারে আইনি সমাধানের এই পথটি অনেক দীর্ঘ। বছরের পর বছর মামলা কোর্টে ঝুলতে থাকে। এই মুহূর্তে এরকম রাজস্বসংক্রান্ত কয়েক হাজার মামলা আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
 
বোঝাই যায়, এসব ক্ষেত্রে অর্থ আদায়ের বিষয়টি জটিল। কিন্তু এভাবে যে চলতে পারে না, তাও বলা নিষ্প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ প্রভাবশালীরা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যাবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এই প্রভাবশালীরাই মূলত আমাদের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী। কীভাবে এই রাজস্ব আদায় করা যেতে পারে, বিশেষজ্ঞরা সে কথা বলেছেন। 
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমানের পরামর্শগুলো এনবিআর গ্রহণ করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে আমরা মনে করি।

 তিনি এনবিআরের পদক্ষেপকেই অনুসরণ করতে বলেছেন, অর্থাৎ সম্পত্তি বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেসব হচ্ছে- সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা যে অর্থ পাচার করেছেন, বিদেশে ল ফার্ম নিয়োগ করে সেই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। সংশোধন করতে হবে রাজস্ব আইন। পাশাপাশি দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে জমে থাকা মামলার নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থাৎ তিনি বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে এই রাজস্ব আদায়ের কথা বলেছেন।

 আমরাও এই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সহমত পোষণ করে এনবিআরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করছি। আমরা এও মনে করি, সার্বিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও এই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই, প্রাপ্য রাজস্বের সবটাই যেন আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রভাবশালীদের রাজস্ব না দেওয়ার সংস্কৃতি তাহলে বন্ধ হবে বা হ্রাস পাবে। আদায় করা অর্থ দেশের বৃহত্তর কাজে লাগবে।

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা  লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম
শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা 
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে

৫ আগস্ট-পরবর্তী দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ভিন্ন পরিস্থিতি চলতে থাকে। সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে পদত্যাগ, বহিষ্কার ও হেনস্তার ঘটনা ঘটে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গা ঢাকা দেন। 

এ সময় দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা সংগঠনগুলো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে। দেশের একাধিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ করে ছাত্রশিবির। সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বড় একটি অংশ ছাত্ররাজনীতি বা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তবে এই দাবি বাস্তবায়নে এখনো কোনো রূপরেখা তৈরি হয়নি। ফলে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সাধারণ শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্রসংগঠনগুলোর নানা ইস্যুতে বিরোধ তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হল প্রশাসন, কার্যকর ছাত্র সংসদ এবং সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির ধারা বন্ধ হবে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে দীর্ঘ মেয়াদে শৃঙ্খলা ফিরবে। তবে ছাত্ররাজনীতি একেবারে বন্ধের পক্ষের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। 

ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে বিশৃঙ্খলার সমাধান নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। তার মতে, ছাত্ররাজনীতি থাকবে। তবে এটিকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে হল প্রশাসনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে হবে। কার্যকর ছাত্র সংসদ থাকতে হবে। ফলে দুই পক্ষই একটা মনিটরিংয়ের মধ্যে থাকবে। অনিয়মের সুযোগ কম থাকবে। আবাসিক সিট নিশ্চিত করা গেলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে রাজনীতি করানো যাবে না। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসে ছাত্ররা বুঝেশুনে রাজনীতি করবে। ছাত্ররাজনীতি থাকলেও প্রতিপত্তিমূলক প্রভাব কমে আসবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় অংশই আবাসিক হলগুলোয় রাজনীতিমুক্ত রাখার পক্ষে। ফলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে অন্য সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের মেজাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সতর্কভাবে কর্মসূচি পালন করছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারার ছাত্ররাজনীতির সংস্কার দরকার। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পর তিন মাস পার হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা তৈরি হয়নি। ফলে শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ভার্চুয়ালি পরস্পরবিরোধী মন্তব্য নানা বিষয় সামনে আসছে। 

এদিকে দেশের ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্রদলের পাশাপাশি ছাত্রশিবির ও তাদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসগুলোয় শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। বাম সংগঠনগুলোও ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। তবে সংগঠনগুলো কৌশলী ভূমিকা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোয় সিটের বিনিময়ে বাধ্যতামূলক রাজনীতি থেকে মুক্তি পেতে চান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তথ্যানুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নেই। 

প্রতিটি হলে আসনসংকট থাকায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলো হল কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উঠিয়ে থাকে। ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়ে হলে থাকায় তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। অংশ না নিলে নেমে আসে নির্যাতন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এই সংস্কৃতি থেকে মুক্তি লাভ করেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। একাধিক হলে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন করেছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। বৈধভাবে সিট পাওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। এই ধারার আর ছেদ ঘটুক চাচ্ছেন না তারা। 

অনেকে বলছেন, শৃঙ্খলা ফেরাতে ছাত্ররাজনীতির রূপরেখা দরকার। আবার কেউ কেউ বলছেন প্রয়োজন নিরপেক্ষ প্রশাসন ও কার্যকর ছাত্র সংসদ। আবার ছাত্ররাজনীতি একেবারে বন্ধের পক্ষেও রয়েছেন অনেকে। এ অবস্থায় শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা কাটাতে সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পরিবেশে লেখাপড়া করার অধিকার ফিরে পাক, সেটিই প্রত্যাশা।

 

স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য  সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানই কাম্য

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ এএম
স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য 
সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানই কাম্য

চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারত স্থানীয় মুদ্রায় ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা সৃষ্টি করে নিজেদের আঞ্চলিক ব্যবসা বাড়িয়েছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোরও এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নেপাল ভারতের মুদ্রা ব্যবহারে যে সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ তা পাচ্ছে না। গত বছর ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য সুবিধা পেলেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তা কাজে লাগাতে পারেনি। ফলে ওই সুবিধা চালুর পর খুব সামান্যই লেনদেন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আর্থিক নীতিমালা পরিবর্তন বা সংশোধন করার প্রয়োজন হবে। এ সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে আগ্রহী সদস্যদেশগুলোকে একটি সমন্বিত আর্থিক অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। 

প্রতিবেদনে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিনিময় হার এবং মার্কেটের গ্রহণযোগ্যতা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতকে বাণিজ্য অংশীদার দেশের স্থানীয় মুদ্রা গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিনিময় হার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়িয়েছে। থাই বাথ আশিয়ানের সব সদস্যদেশে গ্রহণযোগ্য। ক্রমাগত এর ব্যবহারের মাধ্যমে আসিয়ানের সদস্যদেশগুলোর মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭ শতাংশ এখন নিজেদের মধ্যে ইনভয়েসিং করে। এই হার স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য সুবিধা সৃষ্টির আগে ছিল ৩ শতাংশের মতো। 

গত বছরের ১৬ নভেম্বর খবরের কাগজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য বা কারেন্সি সোয়াপ চুক্তির পুরো সুবিধা বাংলাদেশ নিতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাণিজ্য ডলার সরবরাহে ঘাটতির কারণে বহির্বাণিজ্য বিভিন্ন দেশ আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় মুদ্রা ব্যবহার করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে রুপির ব্যবহারকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দেয়। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর মূল কারণ বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা। বাংলাদেশ ভারত থেকে যে পরিমাণ আমদানি করে তার তুলনায় রপ্তানি আয় খুবই কম। তাই বিগত দুই বছরে বাংলাদেশ ডলারসংকটের সময় রুপিতে বাণিজ্য সুবিধা কাজে 
লাগাতে পারেনি। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, যেহেতু এই দুই দেশের বাণিজ্যে অনেক বড় ঘাটতি এবং এতে বাংলাদেশই পিছিয়ে রয়েছে, সেহেতু দ্বিপক্ষীয় অন্য লেনদেনগুলো রুপিতে করা যায় কি না তা দেখতে হবে। কারণ আমরা বিনিয়োগ বা ঋণ যা-ই পাই না কেন, তা টাকায় রূপান্তর করে দেশে কাজে লাগাতে হয়। এ জন্য দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে সমন্বয়টা জোরালো করতে হবে। এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। বিনিময় হারের কারণে যেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। 

স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়াতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আমদানি ব্যয়ের বিল পরিশোধে রুপির সুবিধা নিতে হলে রুপি প্রাপ্তির পরিধি বাড়াতে হবে। ভারত থেকে পাওয়া বিনিয়োগ, ঋণ, ভ্রমণ, পর্যটন ও পড়ালেখা করতে আসা ভারতীয়দের আয় থেকেও আমদানি বাণিজ্য ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। শুধু রপ্তানি আয় দিয়ে আমদানির জন্য চাহিদামতো রুপি সরবরাহ করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। প্রত্যাশা করছি, সরকার বিশেষজ্ঞ পরামর্শকদের সহায়তা নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

সংস্কার কমিশনের বৈঠক জনমতের ভিত্তিতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনুন

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ এএম
সংস্কার কমিশনের বৈঠক
জনমতের ভিত্তিতে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনুন

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা। বেশির ভাগ মানুষ চায় দেশে সংস্কার হোক। অন্তর্বর্তী সরকারও দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই প্রত্যাশা পূরণে জনমুখী কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। এ ছাড়া গত ১৭ অক্টোবর আরও চারটি সংস্কার কমিশন করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। 

এখনো সদস্যদের নামসহ আনুষ্ঠানিকভাবে এই চার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি সরকার। গত সোমবার ঢাকায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছয় সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই বৈঠকে সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা যে বার্তা দিয়েছেন, তা হলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এমন সুপারিশ যেন করে সংস্কার কমিশনগুলো। অধ্যাপক ইউনূস তার ভাষণে বলেন, তারা সংস্কার চান। সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে চান। গত মাস থেকে কমিশনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কমিশনগুলোকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এই হিসেবে জানুয়ারির প্রথম দিকে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

জনপ্রশাসন সংস্কারকাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাজ পুরোদমে চলছে। ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবার মতামত সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কমিশনের সদস্যরাও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সফর করে জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন পেশ করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ১০টি সভা করেছে। পাশাপাশি অংশীজনের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। জনসাধারণের মতামত চেয়ে একটি প্রশ্নমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। কিছু আইন ও বিধি সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। মব নিয়ন্ত্রণে বলপ্রয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তন করার প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর কিছু ধারা পরিবর্তন করার জন্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। 

নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বৈঠকে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তার কমিশন প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। অনুপস্থিত ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট নিয়ে কাজ চলছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ভোটার তালিকার সমন্বয় করা হচ্ছে। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে জোর দিচ্ছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। তার কমিশন ইতোমধ্যে ১০টি সভা করেছে। অংশীজনদের কাছ থেকে ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। ইতোমধ্যে ২০০-এর বেশি প্রস্তাব পেয়েছেন। সেগুলো এখন বিশ্লেষণ করছেন। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কাজও এগিয়ে চলছে। কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে সভা করেছে। আগামী সপ্তাহে আরও দু-একটি সভা হতে পারে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তার কমিশন অন্তত ১০টির মতো সভা করেছে। তারা সাতটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন। এখন সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন। 

জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা যাতে টেকসই হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সরকার যে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনমতকে প্রাধান্য দিতে হবে। অংশীজনের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ ক্ষেত্রে। একটি টেকসই, সমন্বিত ও যুগোপযোগী সংস্কার উদ্যোগ নিতে পারলে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প  বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প 
বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন ছিল এটি। নির্বাচনি প্রচারে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে ঘায়েল করতে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছেন। রাজনৈতিক বক্তব্যের বাইরে গিয়ে অনেক সময় তারা ব্যক্তিগত আক্রমণেও লিপ্ত হন। ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অবশেষে জয়ের মুকুটটি পেলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ট্রাম্প ২০১৬ সালে এক মেয়াদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 দেশটিতে সব অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। আর হোয়াইট হাউসে অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে কোনো প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প তা নিশ্চিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলই শেষ কথা। জয়ী হওয়ার পর ফ্লোরিডায় জনসমক্ষে গতকাল বুধবার এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র আবার ফিরে পেয়েছি।’ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং গণতন্ত্রের সূতিকাগারখ্যাত দেশটির নির্বাচনের ওপর নিবিড় দৃষ্টি ছিল বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সূচক কাজ করে। কমলা হ্যারিস দেশের জনগণকে কী দিতে পারবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি বলে অনেকে অভিযোগ করেন। আর ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবেন। ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি। এটি চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিতে হবে। যা দেশটির একবিংশ শতাব্দীর নীতির পরিপন্থি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।

 নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে গত ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকীতে এক সাক্ষাৎকারে এরিক কোর্টেলিসকে ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্দিশিবির নির্মাণ করবেন। কথা না শুনলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করার অভিপ্রায়ের কথাও সাংবাদিকদের বলেন ট্রাম্প। তিনি এও বলেছেন, তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সংবিধান সংশোধনের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান একজনকে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেয় না। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো শুধু আলংকারিক বা আনুষ্ঠানিক কোনো পদ নয়। বরং এটি দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং বিশ্বে নানা ধরনের প্রভাব পড়ে ওই পদে বিশ্বমঞ্চে কে বসেছেন তার ভিত্তিতে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব পৃথিবীব্যাপী। যা ভূরাজনীতিতেও বিরাজমান। বিশ্বে এই মুহূর্তে বড় দুটি যুদ্ধ চলমান। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-ইরান এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সারা বিশ্ব এই যুদ্ধের গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় এ যুদ্ধ। যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। আমেরিকান নয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন। নিশ্চয়ই এখন তিনি এ যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

 বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন। যুক্তরাষ্ট্র একটি অভিবাসী দেশ। অভিবাসীদের ব্যাপারে আমরা ট্রাম্পের মনোভাবের পরিবর্তন আশা করছি। 
নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খবরের কাগজের পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।