![শিল্পিত দৃশ্যকাব্য ‘পারো’](uploads/2024/07/05/a3-1720163633.jpg)
দেশ নাটকের ২৫তম প্রযোজনা নাটক ‘পারো’। রচনা ও নির্দেশনা মাসুম রেজা।
দর্শনের বিখ্যাত বুরিডন প্যারাডক্সের কথা মনে পড়ল নাটকটি দেখে। মানুষের ভেতর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুটো অপশন থাকে। যে অপশন তুলনামূলকভাবে বেশি খাপ খেয়ে যায়, মানুষ সেটা গ্রহণ করে। যদি সে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে ছটফট করতে করতে তার মৃত্যু ঘটে। একজন মানুষ যে ঘটনায় রুখে দাঁড়াতে চায়, সেই মানুষ একই ঘটনায় আপস করতে চায়। তারপর হয় সিদ্ধান্ত নেয়, নয়তো মরে কিংবা নিজেকে মারে। ‘পারো’ নাটকের কেন্দ্রে আছে পারমিতা নামের এক নারী। যাকে সবসময় বলা হয় অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে। পারমিতার ভেতর বাস করে দুই সত্তা। প্রাচীন সত্তা বলে, মানিয়ে নাও। আরেক সত্তা অসার প্রাচীন সত্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
নরওয়েজিয়ান নাট্যকার হেনরি ইবসেনের ‘আ ডলস হাউস’ নাটক যেখানে শেষ হয়, ১৫০ বছর ধরে সেই ধারণা প্রচলিত। ‘পারো’ এগিয়ে গেছে আরও। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সত্য প্রতিষ্ঠা করে উঁচু মাথায় মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার। সে গলাটিপে হত্যা করে নিজ আপসকামী সত্তাকে।
মঞ্চনাটকের প্রাণ তার কাহিনি আর কাহিনিকে স্পষ্ট করে তোলে সংলাপ। পারস্পরিক সম্পর্ক, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা যতটা না দেখার, তার চেয়ে অনেকবেশি অনুভব করার। এই নাটকের সংলাপ মূর্ত করেছে কাহিনিকে। যেমন- ‘ফুলের কুঁড়িকে কি তুমি ফোটাও? সে তো আপনি ফোটে। সে অনুভূতি।’
মঞ্চ ব্যবহার, সেট, লাইট, কস্টিউম এবং ব্যাকগ্রাউন্ড কালার ছিল ঠিকঠাক। মঞ্চ আর লাইটের কম্বিনেশন ভারসাম্য বজায় রেখেছে সবসময়। একাধারে চোখকে আরাম দিয়েছে আবার পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে। তাকে আরও প্রস্ফুটিত করেছে নাটকের কাহিনি ও আবহসংগীত।
পারমিতা চরিত্রে সুষমা সরকারের অভিনয় অনবদ্য। অলংকার শাস্ত্রমতে অভিনয় সম্পন্ন হয় চার প্রকৃতির মিশেলে। আঙ্গিক, শারীরিক ভঙ্গি। বাচিক, কণ্ঠস্বরের ব্যবহার। সাত্ত্বিক, মনকে অভিনয়ে অন্তর্ভুক্ত করা আর আহার্য, অভিনয়ে সেট, লাইট, প্রপস ইত্যাদিকে ব্যবহার করা। সুষমা সরকার অভিনয়ের এই চার প্রকৃতিকে দুর্দান্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন যথাযথভাবে। সেখানে চরিত্রের সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোও ধরা পড়েছে। আর এসব কারণেই ‘পারো’ হয়ে উঠেছে এক শিল্পিত দৃশ্যকাব্য।
জাহ্নবী