![কৃষ্ণচূড়া ও মিতুল](uploads/2024/06/29/adf-1719663223.jpg)
সম্প্রতি লালমাটিয়ার দ্বীপ গ্যালারিতে হয়ে গেল মিতুলের একক পোশাক প্রদর্শনী ‘কৃষ্ণচূড়া তোমার রঙে’ শিরোনামে। ৬-৮ জুন তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ডিজাইন পরামর্শক ও গবেষক চন্দ্রশেখর সাহা, ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজহারুল হক আজাদ ও ফ্যাশন ডিজাইনার লিপি খন্দকার। উদ্বোধনকালে চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, একটা মোটিফ নিয়ে কাজ করে তার প্রদর্শনী করা বিরাট সাহসের ব্যাপার। মিতুল সেই সাহস দেখিয়েছেন। এর জন্য তাকে অভিনন্দন।
আজহারুল হক আজাদ বলেন, অনেক দিন পর একটা ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী দেখলাম। পোশাকগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে, মিতুল যথেষ্ট চিন্তা এবং নিরীক্ষা করেছেন। মিতুল বয়সে তরুণ। আশা করছি সামনে তিনি আরও বেশি মেধা ও শ্রম দিয়ে আরও ভালো ভালো কাজ করবেন। লিপি খন্দকার বলেন, অনেকের ধারণা ফুল দিয়ে শুধু নারীদের পোশাক ডিজাইন করা হয়। কিন্তু মিতুল শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি পাঞ্জাবি, টি-শার্টে কৃষ্ণচূড়ার মোটিফ ব্যবহার করে দেখিয়ে দিলেন, সবার পোশাকেই ফুল থাকতে পারে।
মিতুল ও তার সীবনী
উদ্যোক্তা ও ডিজাইনার আবেদা খাতুন মিতুলের উদ্যোগের নাম সীবনী। সীবনী মানে সুই বা সুচ। পোশাকের সঙ্গে যা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ২০০৫ সালে মিতুল শখের বসে তার উদ্যোগ শুরু করেন। কিন্তু কাজ করতে করতে একসময় তিনি ভীষণভাবে জড়িয়ে যান তার উদ্যোগের সঙ্গে। দিন দিন বড় হতে থাকে তার উদ্যোগ। এখন বেশ কয়েকজন মানুষের রুটি-রুজির দায়িত্ব তার কাঁধে। শখটা এখন তাই মিতুলের কাছে শুধু শখ না। গুরুত্বপূর্ণ কাজও বটে।
মিতুল বলেন, আমার উদ্যোগ মূলত অনলাইন নির্ভর। একটা আউটলেটও ছিল। করোনার সময় বন্ধ করে দেই। কিন্তু কারখানার কারিগরদের বেতন-ভাতা আমি চালিয়ে গেছি। বলতে দ্বিধা নেই, অনলাইনেই আমরা প্রচুর সেল করেছি তখনো।
কেন কৃষ্ণচূড়া
মিতুল ডিজাইন নিয়ে নিরীক্ষা করতেও ভালোবাসেন। কখনো কখনো কাপড়ের থানই যেন হয়ে ওঠে তার ক্যানভাস। তাতে তিনি রং-তুলি নিয়ে খেলা করেন। উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে তার মাথায় শুধু ডিজাইন ভাবনা কাজ করে। মিতুল প্রকৃতি ভালোবাসে। তাই তার পোশাকে ফুল, পাখি, লতা-পাতা, আকাশ ও প্রকৃতির অনুষঙ্গ ফুটে উঠে। মিতুল ফিউশন করতে পছন্দ করেন। কখনো কখনো তাই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশেলে তিনি তৈরি করেন ব্যতিক্রম ডিজাইনের পোশাক। তবে তার দেশপ্রেম প্রবল। তাই তো লাল- সবুজের পোশাকে তিনি নিপুণভাবে আঁকেন দোয়েল, কৃষ্ণচূড়া ও কচুরিপানার ফুল।
মিতুল কেন কৃষ্ণচূড়া নিয়ে কাজ করলেন?
জানতে চাইলে বলেন, কৃষ্ণচূড়া আমার খুব প্রিয় ফুল। গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া যখন ফোটে, আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখি। প্রথমে লাল টকটকে, তারপর ফিকে হতে হতে কমলা হয়ে যায়। এর সবুজ পাতা, গাছের রং, আকাশের রং, সব কিছুই আমাকে মুগ্ধ করে। তাই আমি প্রথমে শাড়িতে কৃষ্ণচূড়া হ্যান্ডপেইন্ট করি। তাতে ভীষণভাবে সাড়া পাই। তখন এটাকে আমি বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়ে আসি। স্ক্রিনপ্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট ইত্যাদি নানা মাধ্যমে। আমার এই ডিজাইন সবাই খুব পছন্দ করছে। তখনই মাথায় এল একটা প্রদর্শনী করি। আসলে বিদেশে তো ফুলের উৎসব হয়। চেরি যখন ফোটে তারা চেরি ব্লসম ফেস্টিভ্যাল করে। কৃষ্ণচূড়া আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের নিজস্ব ফুল। তা হলে কৃষ্ণচূড়া ফুটলে আমরাও তো উৎসব করতে পারি। এই চিন্তা থেকেই প্রদর্শনী করা। আমার বিশ্বাস আগামীতে আরও নানা মাত্রায় আমাদের দেশে কৃষ্ণচূড়া উৎসব হবে।
কলি