গত কয়েক দিনে কোটা আন্দোলন ঘিরে ভয়াবহ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা হয় কারফিউ। ফলে সড়ক, রেল ও নৌপথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক যোগাযোগও বিঘ্নিত হয়। তবে কারফিউ শিথিলের সময়ে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে দূরপাল্লার স্বল্পসংখ্যক বাস চলাচল করায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দেয়।
গত ১৯ জুলাই কারফিউ ঘোষণা করা হয়। এদিন থেকেই রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়। এতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগের মাধ্যম মৈত্রী এক্সপ্রেস ও খুলনা-কলকাতা যাতায়াতকারী বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল বাতিল করা হয়। সম্প্রতি নির্দিষ্ট সময় কারফিউ শিথিল হলেও নিরাপত্তার কারণে রেল যোগাযোগ এখনো সচল হয়নি।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার কলকাতা থেকে ১৩১০৮ কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসের রওনা হওয়ার কথা ছিল। একই দিনে ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল ১৩১১০ ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসের। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যাত্রাও বাতিল করেছে উভয় দেশের রেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, যেসব যাত্রী ইতোমধ্যে টিকিট কিনেছেন, কলকাতার বিশেষ টিকিট কাউন্টারে তারা টিকিটের দাম ফেরত পাচ্ছেন। তবে কোনো যাত্রী টিকিট হারিয়ে ফেললে টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। বিদেশি যাত্রীদের ক্ষেত্রে প্যাসেঞ্জার রিজার্ভেশন সিস্টেমের (পিআরএস) কাজের সময় টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। দেশের অভ্যন্তরে চলাচলকারী ট্রেনের টিকিটধারীদেরও টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ঢাকা থেকে স্বল্পসংখ্যক দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন যাত্রীরা। গত বুধবার থেকেই কারফিউ শিথিল থাকাকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার কিছু বাস। আবার গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসেছে বেশ কিছু বাস। এতে যেন কিছুটা হলেও গতি ফিরে পেয়েছে সড়কে যান চলাচল। কারফিউ চলাকালে যেসব মানুষ ঢাকায় আটকা পড়েছিলেন, তাদেরও স্বস্তি গন্তব্যে ফিরতে পেরে। বিদেশ গমনাগমনের উদ্দেশ্যে যাদের বিমানের টিকিট কাটা আছে, যাতায়াতব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দুশ্চিন্তা কমেছে তাদেরও।
অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত মারিয়া গমেজ দেশে এসেছিলেন গত মাসে। তার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায়। মারিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ফেরার টিকিট নিয়ে রেখেছি। কিন্তু কারফিউ জারি করায় ঢাকার ভেতর শহরের বাইরের কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এতে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সম্প্রতি ঢাকার ভেতরে যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে।’
তবে ঢাকায় দূরপাল্লার বাস চললেও এখনো ভয় কাটেনি মানুষের। গত কয়েক দিনের সহিংসতার ঘটনায় প্রয়োজন থাকলেও ঢাকার ভেতর ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দা সুমা গমেজ মোবাইল ফোনে খবরের কাগজকে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে আগামী সোমবার ঢাকায় যেতেই হবে। কিন্তু ঢাকার যে খবর শুনি, এই পরিস্থিতিতে সাহসে কুলাচ্ছে না। কখন কোন দিক থেকে আক্রমণ করে বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়, সব সময় এই ভয় পাই।’
দূরপাল্লার বাস চলাচলে বিঘ্ন
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার সব রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল সীমিত করে এনেছেন বাস মালিকরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও রাজধানীর তিন আন্তজেলা বাস টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য। তারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কারফিউ বলবৎ থাকলে বিকেল ৫টার পর ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর বাড্ডা, কলাবাগান ও শ্যামলী এলাকার কয়েকটি বাস কাউন্টারের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সড়ক-মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলেও বাসমালিকরা এখনো নানা শঙ্কায় ভুগছেন। শ্যামলী এলাকায় আল হামরা, শ্যামলী, নাবিল ও ডিপজল পরিবহনের কয়েকজন বাসচালক খবরের কাগজকে জানান, রাতে বাস না চালানোর মূল কারণ হলো, বাসমালিকরা চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কারফিউ চলাকালে সড়কে নানা পয়েন্টে নিরাপত্তা তল্লাশিতেও বাসচালক ও যাত্রীরা বিরক্ত হন।
মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম বলেন, ‘বিকেলের পর টার্মিনালে যাত্রীও থাকেন না। যেহেতু এখন ট্রেন চলাচল বন্ধ, বাসে একটু চাপ পড়ার কথা। কিন্তু ছুটির দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খুব একটা যাত্রী দেখলাম না মহাখালীতে। মানুষের মনে ভয় রয়ে গেছে। বাস ঠিকঠাক চালাতে না পেরে পরিবহন ব্যবসায় বিশাল ধস নেমেছে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক গোলাম সামদানি বলেন, কারফিউতে বাস চলাচলের বিষয়ে সমিতি কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। বাসমালিকরা নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে বাস চালাতে রাজি হননি। যতদিন কারফিউ চলবে, এমন পরিস্থিতি থাকবে। যাত্রীদেরও এ নিয়ে খুব অভিযোগ নেই।