প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৫০০ বিঘা জমি, ঢাকার বসিলায় মধু সিটিতে দেড় বিঘা জমিতে ১০ তলা ভবন ও কয়েকটি গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া, ক্ষমতার দাপটে গাবতলী বাস টার্মিনালের ইজারা নেওয়া, বিদেশে অর্থ পাচারসহ তার বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানযোগ্য কি না তা যাচাই-বাছাই চলছে। তার বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক, তখন বিপদ বুঝে গোপনে সপরিবারে দুবাই গেছেন তিনি।
সোমবার (১০ জুন) দুদক সূত্রে জানা গেছে, লিকুর বিরুদ্ধে গত রবিবার একটি লিখিত অভিযোগ দুদকে দাখিল করা হয়েছে। সেই অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করছেন দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা। যাচাই শেষে কমিশনে মতামত পেশ করা হবে। কমিটি অভিযোগ অনুসন্ধানের প্রস্তাব দিলে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরুর নির্দেশনা দেয় কমিশন।
দুদকে আসা অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস নিয়োগ পাওয়ার পর গাজী হাফিজুর রহমান লিকু তার প্রভাব খাটানো শুরু করেন। বিভিন্নভাবে অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। লিকু দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও দলের ভেতর বিশাল প্রভাব বলয় তৈরি করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, দলীয় পদ-পদবি বাণিজ্য ও তদবির বাণিজ্য করেন। সম্প্রতি প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় তার নিজের প্রার্থীকে জোর করে পাস করতে প্রতিপক্ষের ওপর আগ্নেয়াস্ত্রসহ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। এতে ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অনেকেই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লিয়াকত ভূঁইয়া সর্বোচ্চ ভোট পেলেও গভীর রাতে তাকে ফেল দেখিয়ে লিপু সমর্থিত প্রার্থীকে পাস করানো হয়েছে।
অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ টাকায় ঢাকার বসিলায় অবস্থিত মধু সিটিতে দেড় বিঘা জমির ওপর বিশাল আকারের ১০ তলার ভবন নির্মাণ করেছেন। গোপালগঞ্জ শহরে তার ভাই-বোন, শ্যালক, ভায়রা ভাইসহ অন্য আত্মীয়দের মালিকানায় বেশ কিছু বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদরসহ আশপাশে ৫০০ বিঘার জমিতে গবাদি খামার ও মৎস্যঘের করেছেন। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ইজারা হয়েছে লিকুর লোকজনের নামে। বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারি ব্যবসাও করেছেন তিনি। ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ওয়েলকাম পরিবহনের মালিক লিকু ও তার পরিবারের সদস্যরা।
গোপালগঞ্জের জেলা পর্যায়ের একজন ছাত্রনেতা থেকে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই তিনি যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। লিকু ও তার পরিবারের লোকজনের অর্থ-সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে কয়েক শ গুণ। তার বন্ধু দুবাইপ্রবাসী শামীম খানের মাধ্যমে বিপুল টাকা পাচার করেছেন। গত ২৯ মে এপিএস পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অব্যাহতি পাওয়ার পর তিনি অত্যন্ত গোপনে সপরিবারে দুবাই চলে গেছেন বলে জানা গেছে।