![পানি বৃদ্ধি, নতুন এলাকা প্লাবিত](uploads/2024/07/03/Sylhet_Bonna-1720024464.jpg)
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়। কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেক স্থানে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে গত দুদিন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেটে পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রামে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি
কুড়িগ্রামের দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী ও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক চরাঞ্চলের ফসলের খেত।
বুধবার (৩ জুলাই) বেলা ১২টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দুধকুমারের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার, ধরলার ফুলবাড়ী উপজেলার তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেমি ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৮ সেমি, চিলমারী পয়েন্টে ১৯ সেন্টিমিটার, উলিপুরের হাতিয়া পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রংপুরে ৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত
রংপুরে পরপর তিন দফার বন্যায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে পাঁচটি বিদ্যালয়ের জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়গুলোর কিছু অবকাঠামো সরিয়ে নেওয়া হলেও রক্ষা করা যায়নি জমি। এ ছাড়া ৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আরও বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে।
সিরাজগঞ্জে বাড়ছে যমুনার পানি
দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি। সেই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও। দুদিনের ব্যবধানে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ও সদর হার্ডপয়েন্টে ৭৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর ফসলি জমি প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গাইবান্ধায় রাস্তা ভেঙে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ঢুকছে
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী উল্লাহবাজার থেকে শ্মশানঘাট এলাকায় রাস্তা ভেঙে গেছে। ভাঙা অংশ দিয়ে তীব্র স্রোতে ঢুকছে পানি। ওই এলাকার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে হাজারও মানুষ। স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
টাঙ্গাইলে নদীর পানি বাড়ছে
টাঙ্গাইল জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। বুধবার সকাল ৯টায় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার, ফটিকজানি নদীর পানি নলচাপা ব্রিজ পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার এবং মধুপুর পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
ফেনীতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
মুহুরী নদীর বাঁধের ৬টি স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকা অব্যাহত রয়েছে। ফুলগাজী উপজেলার অংশে নতুন করে আরও দুটি স্থান ভাঙনে আমজাদহাট, বসন্তপুর, জগৎপুর, দরবারপুরসহ দুই উপজেলার ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ভাঙনের কারণে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, আবাদি জমির ফসল, নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ি।
মৌলভীবাজারে বাড়ছে নদ-নদীর পানি
কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে আবারও মৌলভীবাজারের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গত দুদিন ধরে উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার মনু নদ, ধলই নদী ও জুড়ী নদীর পানিসহ কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে পানি বেড়েছে। ইসলামপুর এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের ৪/৫ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। আগেও নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধের যেকোনো স্থান ভেঙে যেতে পারে। ফলে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
আবারও তিস্তায় পানি বাড়ার শঙ্কা
লালমনিরহাটে আবারও বাড়ছে নদ-নদীর পানি। আবহাওয়া অফিসের বুধবারের তথ্য অনুযায়ী- উত্তরাঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী ও ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি বাড়তে পারে।
সিলেটে কমেছে পাহাড়ি ঢল
এদিকে গত দুদিন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেটে পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীগুলোতে ধীরগতিতে পানি বাড়ছে। বুধবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত সিলেটের দুটি নদীর পানি ৬ স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এর আগে ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এরপর গত ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিন থেকে আবারও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন সিলেটের ১৩টি উপজেলায় ১০ লাখের বেশি মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ১ জুলাই থেকে আবারও সিলেট ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সব নদ-নদীর পানি বেড়ে সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ১ জুলাই রাতে সিলেট নগরী ও জেলার প্রায় ৬টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। গত সোমবার বিকেল থেকেই সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেন।