রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা বেশ কয়েক শিক্ষার্থীর কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছেন। হলে ঢুকে ও কক্ষে তল্লাশির সময় কিছু নেতা-কর্মীর হাতে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা দেখা গেছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সোয়া ১টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত মাদার বখশ হলের প্রথম ব্লকের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ৮টি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
এর আগে রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা থালা বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগান শুরু করেন।
একপর্যায়ে মাদার বখশ হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবসহ অন্যান্য নেতা-কর্মী প্রবেশ করেন। তাদের বেশ কয়েকজনের হাতে লাঠিসোটা দেখা গেছে। এ সময় তাকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘ওই বাঘের বাচ্চারা চিল্লা, এখন চিল্লা’। পরে তারা ওই হলের প্রথম তলার তৃতীয় ব্লকে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলোর দরজা লাগানো থাকলে তারা সেগুলো খুলতে বলেন। বেশ কয়েক নেতা-কর্মী অশ্লীল গালিও দেন। শিক্ষার্থীরা দরজা না খুলতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাকাডাকি করে বলেন, ‘এই আমি তোদের গালিব ভাই বলছি, একটু কথা বলব, দরজা খোল।’
বেশ কয়েকবার ডাকাডাকির পর শিক্ষার্থীরা দরজা খুললে তিনি (গালিব) তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে উচ্চস্বরেও কথা বলতে শোনা গেছে। একটি কক্ষের দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় সেই কক্ষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ঢুকে দরজা লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে আঙুল তুলে কথা বলতে দেখা গেছে।
এরপর হলে প্রবেশ করেন হল প্রাধ্যক্ষ মো. রুকনুজ্জামান, আবাসিক শিক্ষক আমিরুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রাধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে হল ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আসাদুল্লা-হিল-গালিব খবরের কাগজকে বলেন, ‘মধ্যরাতে মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা থালা বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল। এতে হলের শিক্ষার্থীদের ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে আমি ও আমার নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসি। এরপর কয়েকটি কক্ষের শিক্ষার্থীদের রুমে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাই এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যেন হলের পরিবেশ অস্থিতিশীল করা না হয়।’
লাঠিসোটা ও অস্ত্র বহনের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই খালি হাতে হলে ঢুকেছি। এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. রুকনুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি হলে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে পেয়েছেন। তল্লাশি চালানোর মতো কিছু দেখতে পাননি। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে যা যা করণীয় হল প্রশাসন তাই করবেন।
ছাত্রলীগের লাঠিসোটা নিয়ে তল্লাশির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সংক্ষুব্ধ একটা অংশ যদি অভিযোগ করেন তাহলে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি দেখবে।’
এসআই সুমন/ইসরাত চৈতী/অমিয়/