![জাপার ভরাডুবি না হলে সব মানতাম: রওশন এরশাদ](uploads/2024/02/25/1708830932.Rowshon-ershad.jpg)
জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম মুছে ফেলার অভিযোগ এনেছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি থেকে যারা এরশাদের নাম মুছে ফেলতে চান, তাদের দলের পরিচয় দেওয়ার অধিকার নেই।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রওশন এরশাদ তার অনুসারী নেতাদের বর্ধিত সভায় এ কথা বলেন।
জাপা থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সাবেক কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
রওশন এরশাদ বলেন, পল্লিবন্ধুর নীতি-আদর্শ, তার চেতনা-প্রেরণা, তার ভাবমূর্তি হচ্ছে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্বকে যারা মুছে দিতে চায়- তারা জাতীয় পার্টির পরিচয় দেওয়ার অধিকার রাখে না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এবারের নির্বাচনি ইশতেহারের মলাট থেকে পল্লিবন্ধুর ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর এবার নির্বাচনে পার্টির প্রার্থীদের পোস্টারে পল্লিবন্ধুর ছবি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার নির্বাচনি পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি রেখেছেন। অথচ জাতীয় পার্টির পোস্টারে সাবেক চেয়ারম্যানের পল্লিবন্ধুর ছবি জায়গা পায়নি। এটা জাতীয় পার্টির অগণিত নেতা-কর্মীর মনে আঘাত দিয়েছে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
গেল নির্বাচনে কেন তিনি অংশ নেননি সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির নিবেদিতপ্রাণ অনেক নেতা- যাদের ভোটে জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল-এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এসব জনপ্রিয় ও যোগ্য নেতা এবং অভিভাবকহীন অসংখ্য নেতা-কর্মী ও প্রার্থীকে বিপদে রেখে আমি নির্বাচনে যেতে পারি না।
তিনি বলেন, আমার ছেলের আসন যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে আমি কি নির্বাচনে যেতে পারি? নিশ্চয় না। তারপরও আমি সব কিছু মেনে নিতে পারতাম- যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি না হতো। জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ সীমানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটা কীভাবে মেনে নেব?
জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে পার্টিকে উদ্ধারের জন্য আপনারাই প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছেন। দলের অগণিত নেতা-কর্মীর একান্ত দাবির মুখে আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। আজ আপনারা আমার দায়িত্ব গ্রহণকে অনুমোদন দিয়েছেন। আপনারাই জাতীয় পার্টির সব ক্ষমতার উৎস। আপনারা যেভাবে চাইবেন-পার্টি সেভাবেই পরিচালিত হবে।
জাতীয় পার্টিতে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক চর্চা হবে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, তার জন্য আগামী ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো বিভ্রান্তিতে আপনারা কান দেবেন না। ৯ মার্চের সম্মেলন সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনের জন্য রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া গেছে। আপনারা সকাল দশটার মধ্যে প্রত্যেক কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটদের নিয়ে সম্মেলন স্থানে উপস্থিত হবেন। ওই দিন আপনারাই নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
সাংবিধানিকভাবে দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অশনিসংকেত শোনা যাচ্ছে। সরকার যদি তা মোকাবিলা করতে না পারে, তাহলে দেশে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
রওশন এরশাদ আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য এখনই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আর রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওত পেতে বসে আছে। এক্ষেত্রে সরকারের প্রধান কাজ হবে- দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।