যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তাপ শুরু হয় ভোটের বেশ আগে থেকেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সরগরম থাকে। এর অন্যতম একটি কারণ হলো দেশটির প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের তুলনায় বেশ ভিন্ন তাদের ব্যবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একজনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথম শর্ত, তাকে অবশ্যই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত, তার বয়স হতে হবে অন্তত ৩৫ বছর। আর তৃতীয় শর্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বছর বসবাসের রেকর্ড থাকতে হবে তার। একটি ক্ষেত্রে শেষের শর্তটির ব্যত্যয় হয়। যদি প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য হন, সেক্ষেত্রে শেষের শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরও বাধা নেই। উল্টো দেশটির সংবিধান নিশ্চিত করেছে যাতে কোনো রাজনৈতিক বন্দি প্রার্থী হতে চাইলে তাকে বাধা না দেওয়া হয়।
তবে রাজনৈতিক বন্দি যদি দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে জড়িত থাকেন বা শত্রুদের সহায়তা করেন, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন না। এই বিধান প্রথমে ছিল না। পরবর্তী সময়ে ১৪তম সংশোধনীতে যুক্ত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি লড়াইয়ের দ্বার উন্মুক্তই থাকে। তবে দুটি প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের সংখ্যাকে সীমিত করে আনা হয়। এই দুটি প্রক্রিয়ার না- প্রাইমারি ও ককাস।
প্রাইমারি ও ককাস মূলত কী
প্রাইমারি ও ককাস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দলগুলো তাদের প্রার্থী বাছাই করে। নির্বাচনি বছরে বসন্তের প্রথম ভাগে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোয় এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্বাধীন প্রার্থী ছাড়া অন্যদের নির্বাচনে লড়ার জন্য নিজ অঙ্গরাজ্যে দলের অধীনে নিবন্ধন করতে হয়।
প্রাইমারির ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে দল রায় দেয় কোন প্রার্থীকে তারা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে ককাসের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা থাকে না। রাজনৈতিক দলের সদস্যরা একত্রিত হয়ে ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে নেন। মূলত প্রাইমারি ও ককাসের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় একজন প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার। এই ধাপের পরপরই শুরু হয়ে যায় জাতীয় কনভেনশনের ধাপ।
জাতীয় কনভেশনে কী হয়
অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে প্রাইমারি ও ককাস শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় কনভেনশনের (সম্মেলন) মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী (রানিং মেট) বাছাই করে।
কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ডেলিগেটরা (প্রতিনিধি) মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য ভোট দেন। ডেলিগেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট যে প্রার্থী পান, তিনিই হন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
ডেলিগেটদের মধ্যে দুটি ভাগ থাকে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ক্ষেত্রে থাকে- প্লেজড বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আনপ্লেজড বা অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাউন্ড বা বাধ্যতামূলক এবং আনবাউন্ড বা বাধ্যতামূলক নয়। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ/বাধ্যতামূলক ডেলিগেটরা অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে প্রাইমারিতে জিতে আসা প্রার্থীদেরই শুধু ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ/বাধ্যতামূলক নন এমন ডেলিগেটরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। ডেমোক্র্যাট কনভেনশনে অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডেলিগেটরা শুধু দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই ভোট দিতে পারেন।
নির্বাচন
জাতীয় কনভেনশনের পর শুরু হয়ে যায় নির্বাচনি দৌড়। সরগরম প্রচার চলতে থাকে। একে অপরকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করেন প্রার্থীরা। জনমত জরিপের লড়াইও এ সময় থেকে চোখে পড়ে। অবশেষে নির্বাচনের দিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার শহরে ভোট হয়। নিবন্ধিত যেকোনো মার্কিন নাগরিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। তবে চূড়ান্ত আরও একটি ধাপ তখনো বাকি।
ইলেকটোরাল কলেজ
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে নয়, ইলেকটোরাল কলেজ ঠিক করে দেয়- কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থায় ৫৩৮ জন ইলেকটর নির্বাচিত হন। তারা শেষ নাগাদ নির্ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হতে চলেছেন।
ইলেকটোরাল কলেজে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি থাকেন। মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষ মিলিয়ে ওই অঙ্গরাজ্যের যত প্রতিনিধি, সেটাই তার ইলেকটরদের সংখ্যা।
হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে একটি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি সংখ্যা নির্ভর করে অঙ্গরাজ্যটির জনসংখ্যার ওপর। অন্যদিকে সিনেটে প্রতি অঙ্গরাজ্যের আসন থাকে দুটি করে। সব মিলিয়ে ৫০ অঙ্গরাজ্যের ৪৩৫ জন রিপ্রেজেনটেটিভ ও ১০০ জন সিনেটর থাকে। অতিরিক্ত হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার তিনজন ইলেকটর থাকেন। সবমিলিয়ে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট থাকে ৫৩৮টি। ইলেকটোরাল ভোট সবচেয়ে বেশি রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার, ৫৪টি। আর সবচেয়ে কম ইলেক্টোরাল ভোট ভারমন্টের, মাত্র তিনটি।
নির্বাচনে জিততে হলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। সংখ্যার হিসেবে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে