![কিডনি বিক্রির অভিযোগ, প্রমাণ চান আশ্রমের বাসিন্দারা](uploads/2024/05/15/child-and-old-age-care-2-1715743438.jpg)
ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে ভৈরব বাজার রেলস্টেশনে পড়ে ছিল মো. আশিক। সেখান থেকে তার জায়গা হয় আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে। ফিরে পায় নতুন জীবন।
সোশ্যাল মিডিয়া আর কিছু গণমাধ্যমের বরাতে কিশোর আশিক জানতে পারে তার নাকি কিডনি বিক্রি হয়ে গেছে। সত্যিই কী আশিকের কিডনি বিক্রি করেছেন মিল্টন?
খোঁজ নিতে সাভার থানার কমলাপুর বাহের টেকে অবস্থিত মিল্টনের আশ্রমে হাজির হয় খবরের কাগজ।
ছয় তলা ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত পুরুষ বেডে গিয়ে সন্ধান মেলে আশিকের। তোমার নাকি কিডনি বিক্রি হয়ে গেছে? প্রশ্ন শুনতেই এক গাল হেসে আশিক বলল, ‘সব মিথ্যা কথা। বিশ্বাস না হইলে আপনারাই দেখেন।’ বলে নিজের পরনে থাকা টি-শার্ট খুলে শরীর দেখায় আশিক।
তার পেটের ডান পাশ এবং বাঁ পাশ কোথাও কোনো কাটাছেঁড়ার চিহ্ন মেলেনি।
একই ফ্লোরে পুরুষদের ওয়ার্ডে থাকেন ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন। একমাত্র ছেলে বিয়ে করার পর সেই ঘরে নতুন বউয়ের জায়গা হলেও ঠাঁই হয় না মোবারকের। ছিলেন রাস্তায় রাস্তায়। তাকে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তা থেকে তুলে আনেন মিল্টন। নিজের গল্প বলতে গিয়ে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি এই বৃদ্ধ বাবা। তার কাছে এখন সন্তানের চেয়েও বেশি প্রিয় মিল্টন। আপনাদের কিডনি নাকি খুলে নিয়ে যায় মিল্টন? প্রশ্নটা শুনে কিছুটা ক্ষেপে গেলেন ষাটোর্ধ্ব এই মানুষটি। তার ভাষ্য, ‘আপনারা আসছেন। এক তলা থিকা ছয় তলা পর্যন্ত লোক আছে, আপনারা যাচাই-বাছাই কইরা দেখেন কার কিডনি খুইলা নিছে, আমার বাবার কী দোষ। মিথ্যা মামলা দিয়া আমার বাবারে জেলে আটকাইয়া রাখছে। আমি যদি পারতাম জজ কোর্টে গিয়া এই কথাডি কইতাম।’
আশ্রমের বাসিন্দাদের মারধর করেন বলেও কিছু অভিযোগ আছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে খবরের কাগজ কথা বলে আশ্রমের কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন চট্টগ্রামের নূরজাহান। তিনি মিল্টনের কাছে আছেন প্রায় ৭ বছর ধরে। থাকেন আশ্রমের ৪নং মহিলা ওয়ার্ডে। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হওয়ায় নিজের বিছানায় বসেই কাঁপছিলেন। কাঁপা কণ্ঠেই বলেন, ‘এত বছর ধরে আছি, কোনো একটা মানুষের গায়ে একটা দাগ আছে দেখাইতে পারব কেউ, কিডনি বিক্রি, নারী পাচার এইসব মিথ্যা কথা। আমগো মা-বাপ কেউ নাই, হেরে পাইয়া আমরা আকাশের তারা পাইছি। নামাজ পইড়া দোয়া করি আল্লাহর কাছে। সরকারের কাছে বলতে চাই আমার বাবারে মুক্তি দেন।’
শুধু নূরজাহান না, বরিশালের তাসলিমাও এখানে আছেন ৭ বছর ধরে। তিনি বলেন ‘ওনাকে [মিল্টন] ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। উনি খুবই ভালো মানুষ। মা ছাড়া সে আমাদের সঙ্গে কথাই বলত না। ওনার নামে সব মিথ্যা কথা রটানো হইছে। উনি না থাকলে আমরা কোথায় যাব কোথায় থাকব।’ বলেই কাঁদতে থাকেন সবহারা এই অসহায় মা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী থেকে পুরুষ আশ্রমের এমন প্রায় ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে খবরের কাগজ। মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। তাদের প্রত্যেকের একটাই কথা, তারা মিল্টন সমাদ্দারকে ফেরত চান। প্রয়োজনে তারা সবাই মিলে মিল্টনের পক্ষে সাক্ষ্য দিতেও রাজি আছেন।
বর্তমানে সাময়িক সময়ের জন্য ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ এর দায়িত্ব পেয়েছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। কথা হয় এই ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই আমি এই আশ্রমটিতে আছি। যেসব বিষয় শোনা যাচ্ছে চারদিকে এমন কিছুই আমি এখানে এসে দেখতে পাইনি। সবই ঠিকঠাক আছে।’
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মামলা, জেল হাজত, থানা পুলিশ এই বিষয়গুলোতে অনেকটাই মুষড়ে পড়েছেন আশ্রমের বাসিন্দারা। তাদের চোখে মুখে অজানা শঙ্কা। তাদের দাবি, মিথ্যা মামলা থেকে মিল্টন সমাদ্দার যত দ্রুত মুক্ত হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসবেন ততই দ্রুত তাদের মুখে হাসি ফুটবে।
> ‘৬ ফুট রাস্তা’ই কাল হলো মিল্টনের
> মিল্টনের সাভারের আশ্রম, অভিযোগের সত্যতা মেলেনি