![মোহামেডানের পথে আবাহনী!](uploads/2024/01/04/1704359687.Abahani-Mohamedan.jpg)
ঢাকার ফুটবল কিংবা বাংলাদেশের ফুটবল বলতেই আবাহনী ও মোহামেডানের নাম এসে যায় সবার আগে। একটা সময় দুই দলের খেলা দেখার জন্য দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন স্টেডিয়ামে। দেশ হয়ে পড়ত দুই ভাগে বিভক্ত। মহল্লায় মহল্লায় পতাকা উড়ত পাল্লা দিয়ে। লিগ কিংবা অন্য কোনো শিরোপা জিতত দুই দল ভাগাভাগি করে। কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। জনপ্রিয়তা হারিয়েছে দুটি ক্লাবই। সেই সঙ্গে হারিয়েছে নিজেদের অবস্থানও। শিরোপা জেতা তাদের জন্য হয়ে উঠেছে কঠিন। পেশাদার যুগে প্রবেশের পর চিত্র আরও করুণ। মোহামেডান একেবারেই মলিন এক দলের নাম। আবাহনীর শুরুতে দাপট থাকলেও এখন তাদের অবস্থানও নিম্নগামী। বিশেষ করে বসুন্ধরা কিংসের আবির্ভাবের পর আবাহনীও যেন উল্টো রথেই যাত্রী। ২০১৮ সালের পর আর লিগ শিরোপার স্বাদ পায়নি দলটি। টানা চারটি মৌসুমে লিগ শিরোপা জিততে ব্যর্থ। গত মৌসুমে তো কোনো ট্রফিরই দেখা পায়নি। সবশেষ শিরোপা তারা জিতেছে ২০২২ সালের শুরুতে ফেডারেশন কাপ।
এবার মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপে ফাইনালেও উঠতে পারেনি আবাহনী। এরপর লিগের প্রথম দুই ম্যাচ খেলে থেকেছে জয়শূন্য। ফলে খোদ আকাশি-নীলদের সমর্থকরাই প্রশ্ন তুলছেন, মোহামেডানের পথেই কি হাঁটতে শুরু করল আবাহনী?
গত মৌসুমে ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেডকে হারিয়ে ৯ বছরের শিরোপা খরা ঘোচায় মোহামেডান। এত দীর্ঘ সময় শিরোপা বঞ্চিত থাকাই বলে দেয় সাদা-কালো জার্সিধারীদের রুগ্ণ চিত্রের কথা। এক সময়ের জায়েন্ট দলটা এখন একেবারের মধ্যমসারির এক দলের নাম। যদিও গত মৌসুমে একটা শিরোপার দেখা পেয়েছে তারা, সেই সঙ্গে চলতি মৌসুম তারা শুরু করেছে স্বাধীনতা কাপে রানার্সআপ হয়ে। তবে লিগ শিরোপার দাবি আসলে তারা নিজেরাও তুলে না।
বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে হারের পর দলটির গোলকিপিং কোচ সাঈদ হাসান কাননের কথাই শুনুন, ‘ওদের দল (বসুন্ধরা কিংস) তো অনেক ভালো দল। ১০ জন নিয়েও ওরা যেভাবে খেলেছে, মোহামেডান যে ২-১ এ হেরেছে, আমি মনে করি এটা গুড রেজাল্ট।’ কাননের এই কথাতেই পরিষ্কার মোহামেডানের বর্তমান চিত্র। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমন দল ভাবা হয় যাদের, সেই আবাহনী?
এবার স্বাধীনতা কাপে গ্রুপ পর্বে ধানমন্ডির দলটি ভালোই করেছে। তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে তারা। শেষ আটে শেখ জামালকে টাইব্রেকারে হারিয়ে উঠে সেমিফাইনালে। কিন্তু শেষ চারের মঞ্চে দলটাকে বিধ্বস্ত হতে হয় কিংসের কাছে। ৪-০ গোলের স্কোর লাইনই বলে দেয় কতটা অসহায় ছিল দলটা। তবু এটা ভেবে সান্ত্বনা নেওয়ার ছিল যে, এক ম্যাচে এমন হতেই পারে। কিন্তু লিগে আবাহনীর দুই ম্যাচের ফল বলছে ভিন্ন কিছু। প্রথম রাউন্ডে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটির বিপক্ষে পয়েন্ট হারিয়ে বসে দলটি। ১-১ ড্র হয় ম্যাচ। দ্বিতীয় রাউন্ডে তো ফর্টিস এফসির বিপক্ষে ০-১ গোলে হেরেই বসে। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় এই ফল দলটির সমর্থকদের জন্য মেনে নেওয়ার মতো না।
দলটির ম্যানেজার ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক কাজী নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘যেভাবে শুরু করা দরকার ছিল, সেভাবে আমরা শুরু করতে পারিনি। আমাদের দল আসলে এরকম রেজাল্ট করার মতো না। এমন ফল আমরা আশাও করি না। এখন যেটা হয়ে গেছে, সেটা তো আর বললে ফিরে আসবে না। আমরা এখন এখান থেকে ওভারকাম করার চেষ্টা করব।’ কিন্তু সকালের সূর্যই তো বলে দেয় অনেক কিছু। আবাহনী যেভাবে শুরু করেছে, তাতে লিগে চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইট দিতে না পারার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নজরুল বলছেন, ‘দেখুন আমাদের দল চ্যাম্পিয়নের মতো দল না, এমনটা কিন্তু না। আমাদের দল যথেষ্ট ভালো। যেটা হয়েছে খেলায় আসলে এমনটা হয়। দেখি, সামনের কয়েকটা ম্যাচে কতদূর কি করতে পারি।’
জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখন পর্যন্ত দলটার বড় যে ঘাটতি চোখে পড়েছে, সেটা হলো স্কোরিং। এ নিয়ে কোচ কাজ করছেন বলেও জানালেন তিনি। তবে সমর্থকদের মধ্যে কিন্তু হাহাকারের সুরই বেজে চলেছে। তারা এও বলেন, আবাহনী সেরা দল গড়তে ব্যর্থ। যার সঙ্গে একমত ক্লাবটির কিংবদন্তি স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘অবশ্যই তারা সেরা দল গড়তে ব্যর্থ। যেহেতু চারটা বিদেশি ফুটবলার খেলানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাহলে আপনি সে রকম বিদেশি ফুটবলার আনেন। যেটা বসুন্ধরা কিংস করেছে। তাদের ব্রাজিলিয়ান কালেকশন এত সুন্দর, অটোমেটিক তারা গোল পেয়ে যায়। প্রতি ম্যাচেই তারা ডোমিনেট করে খেলছে।’
সাম্প্রতিক সময়ের আবাহনীকে নিয়ে আসলামের মূল্যায়ন, ‘ওভারঅল যে চিত্র, আমার মনে হয় লিডারশিপ অনেক বড় ফ্যাক্টর। যারা কর্মকর্তা আছেন তাদের বলব আরও আন্তরিক হন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসেন। কোথায় অসুবিধা, কেন হচ্ছে না, এগুলো খুঁজে বের করেন।’ আক্ষেপ করে আসলাম আরও বলেন, ‘আমরা শেখ কামালের আদর্শকে ধারণ করে খেলেছি। আমাদের সময়ের কর্মকর্তারা অনেক আন্তরিক ছিলেন। বর্তমানে যারা আছেন, তারা এর ধারে কাছেও নেই। এই জায়গায় আমার মনে হয় যোগ্য জায়গায় যোগ্য লোক দরকার। নেতৃত্বের জায়গাটায় আমার কাছে মনে হয় আবাহনী কিছুটা পিছিয়ে আছে।’
আবাহনী যে মোহামেডানের পথে হাঁটবে না, এই শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কিংবদন্তি ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু। তিনি বলেন, ‘আবাহনী আসলে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে টক্কর দিয়ে পারছে না। কোয়ালিটি বিদেশি খেলোয়াড় আনতে পারছে না। দেশি খেলোয়াড়দের ব্যাকআপও সেভাবে নেই। মোহামেডানের যে সমস্যা ছিল, সেটা এখন আবাহনীর মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। তবু তারা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু গত দুই বছর যাবত তো দলটার কোনো ট্রফিই নেই। এটা যদি তারা কন্টিনিউ করে, তাহলে মোহামেডানের মতোই অবস্থা হবে।’