শিরোপা ধরে রাখার মিশনে আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনির সামনে বড় বাধা ছিলেন প্রতিপক্ষ শিবিরের ডাগআউটে থাকা নেস্তর লরেঞ্জো। কলম্বিয়ার আর্জেন্টাইন কোচ লরেঞ্জো ছিলেন আবার স্কালোনির গুরু। ২০০৬ বিশ্বকাপে হোসে পেকারম্যানের সহকারী হিসেবে ছিলেন লরেঞ্জো। ওইবার আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে ছিল স্কালোনি ও লিওনেল মেসির নাম। তাই কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া লড়াই পরিণত হয় গুরু-শিষ্যের লড়াইয়ে। ফাইনালে দুই দলের লড়াইয়ে বেশির ভাগ সময় বল দখলে রাখে গুরুর দল কলম্বিয়া। তবে অতিরিক্ত সময়ে লাউতারো মার্তিনেজের গোলে শিরোপা ওঠে শিষ্য লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনার হাতে। ২০২১ সালে ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটানো আর্জেন্টাইনরা স্কালোনির হাত ধরে জিতল টানা চতুর্থ শিরোপা।
২০১৮ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর হোর্হে সাম্পাওলির বিদায়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব ওঠে স্কালোনির কাঁধে। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পাওয়া স্কালোনি হয়তো নিজেও ভাবেননি দিন কয়েক পর হবেন ভারমুক্ত। সরাসরি আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের দায়িত্ব থেকে সরাসরি জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ায় তার যোগ্যতা নিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের কানাঘুষা। হয় নানা ধরনের সমালোচনা। শেষ পর্যন্ত সবাইকে স্তব্ধ করে আলবিসেলেস্তা ডাগআউটে পাকাপোক্ত করে নেন নিজের জায়গা। শুধু জায়গা পোক্ত করে শান্ত থাকেননি। দূর করে আর্জেন্টিনার শিরোপা খরা। তার অধীনে দীর্ঘ ২৮ বছর পর কোনো শিরোপা ঘরে তোলার স্বাদ পায় আলবিসেলেস্তাররা।
তিন ফাইনাল হারে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে তৈরি হয় সমালোচনা। ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনাল হারের ওই বৃত্ত থেকে বের হয় মেসি-ডি মারিয়ারা। স্কালোনির হাত ধরে আসা সাফল্যে আর্জেন্টিনা হয়ে ওঠে আরও বেশি উজ্জীবিত। কোপার ওই সাফল্যের পর আলবিসেলেস্তাদের হাতে ওঠে ফিনালিসিমার শিরোপা। এমনকি ওই সাফল্যে উজ্জীবিত আর্জেন্টাইনরা দীর্ঘ ৩২ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঘরে তোলে বিশ্বকাপ শিরোপা। দলকে টানা তিন শিরোপার স্বাদ এনে দেওয়া স্কালোনি এখন আর্জেন্টাইনদের চোখের মণি। দলকে তিন শিরোপা এনে দিয়েও ক্ষান্ত হননি এই মাস্টারমাইন্ড। দলকে গতকাল টানা দ্বিতীয় কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতান।
দলকে একের পর এক সাফল্য এনে দেওয়া স্কালোনি ফাইনাল শেষে কথা বলেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে এখন অনেক এনার্জি দরকার, সত্যিকার অর্থে আমি এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আমার সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি আছে। প্রেসিডেন্টকে (ক্লাদিও তাপিয়া) বলব যে আমার সঙ্গে যেন আরও ১৫ বছরের চুক্তি করেন। তারপর আমি সেটি সম্পন্ন করব।’ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর আমার কঠিন সময় গেছে, ভালো অবস্থায় ছিলাম না। আমি এই কথা বলার কারণ, কয়েক মাস যাবত (আর্জেন্টিনার সঙ্গে নতুন চুক্তি ও বেতন নিয়ে) অচলাবস্থা ছিল। যখনই আমার কাছে সমস্যা মনে হয়েছে, আমি জানিয়েছি। তবে এখন ভালো আছি, সেসব (চুক্তিকেন্দ্রিক জটিলতা) পেরিয়ে এসে আশা করছি এই পথচলা অব্যাহত থাকবে।’ পাশাপাশি ম্যাচ শেষে মেসিকে নিয়ে বলেন, ‘সে স্বার্থপর বলে খেলতে চায় না। বরং এ কারণে খেলতে চায় যে, সে তার সতীর্থদের নিয়ে জিততে চায়। তাদের পিছিয়ে রাখতে চায় না, এমনকি সে পরিস্থিতিতেও (ইনজুরি)।’
কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়ের পর মাঠ নিয়ে স্কালোনির কথায় ছিল অভিযোগের সুর। তার চাওয়া বিশ্বকাপের আগে উন্নতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের মাঠ। তার কথায়, ‘আমি বুঝতে পারছি (বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো) ফুটবল মাঠেই হবে। আমেরিকান (সকার) মাঠে নয়। অন্যান্য ভেন্যু ব্যবহার করা হবে। কিন্তু আমার কাছে আর কোনো তথ্য নেই। আমি কল্পনা করি, এটি ভিন্ন হবে। তা-ই হওয়া উচিত। আমরা সবাই সেটিই আশা করি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা সব অসুবিধা পার করেছি।’