![বাংলাদেশের সুন্দর ঝরনা](uploads/2024/07/05/a-1720161894.jpg)
বাংলাদেশে ঝরনার অভাব নেই। বর্ষাকালে এই ঝরনাগুলোর রূপ হয়ে ওঠে আরও সুন্দর। চাইলে আপনিও দেখে আসতে পারেন দৃষ্টিনন্দন এসব ঝরনা। আজ থাকছে দেশের দৃষ্টিনন্দন কিছু ঝরনার কথা। লিখেছেন আবুল হাসান
তিনাপ সাইতার ঝরনা
বাংলাদেশের বৃহত্তম জলপ্রপাত তিনাপ সাইতার বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে অবস্থিত। অনেকের কাছে পাইন্দু সাইতার নামে পরিচিত। তিনাপ সাইতার হার্ড ট্রেকিংয়ের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। ধৈর্য এবং শারীরিক সামর্থ্য থাকলেই কেবল তিনাপ সাইতারের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তিনাপ সাইতার দেখতে হলে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে আবার একই পথে ফিরে আসতে হয়।
নাফাখুম জলপ্রপাত
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত নাফাখুম জলপ্রপাত পানি প্রবাহের পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত হিসেবে আখ্যায়িত। অনেকে এই জলপ্রপাতকে বাংলার নায়াগ্রা নামে আখ্যায়িত করেন। মারমা ভাষায় খুম মানে জলপ্রপাত। নাফাখুম যেতে হলে থানচি বাজার থেকে সাঙ্গু নদী পথে নৌকা দিয়ে রেমাক্রি যেতে হয়। আর রেমাক্রি থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা হাঁটলে তবেই দেখা মিলে প্রকৃতির এই অনিন্দ্য রহস্যের।
আমিয়াখুম জলপ্রপাত
বান্দরবানের অবস্থিত আমিয়াখুম জলপ্রপাত অনেকের কাছে পরিচিত বাংলার ভূস্বর্গ হিসেবে। কেউ কেউ আবার এই আমিয়াখুমকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত মনে করেন। সবুজ পাহাড় আর পাথরের মধ্য দিয়ে সাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে জলধারা বয়ে চলে। প্রবহমান জলের শব্দতরঙ্গ আর ঝরনার বুনো সৌন্দর্য আজীবন মনের গেঁথে থাকার জন্য যথেষ্ট।
ধুপপানি ঝরনা
রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়িতে রয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর ধুপপানি ঝরনা। ২০০০ সালের দিকে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই স্থানে আরাধনা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে স্থানীয় মানুষের মাধ্যমে ঝরনাটি সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে। ধুপপানি ঝরনা নামের অর্থ সাদা পানির ঝরনা। এই ঝরনাটি ভূমি থেকে প্রায় ১৫০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ধুপপানি ঝরনার আশপাশে হরিণ, বুনো শূকর, বনবিড়াল এবং ভাল্লুকসহ বেশ কিছু বন্য প্রাণী বসবাস করে। প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকেও এই ঝরনার পানি আছড়ে পড়ার শব্দ শোনা যায়।
সাইংপ্রা ঝরনা
বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলাযর কির্স তং পাহাড়ের গা বেয়ে চলা সাইংপ্রা ঝরনা এক অনন্য আদিম সৌন্দর্যের ধারক। এই ঝরনা দেখতে যাওয়া মোটেও সহজ নয়। পিচ্ছিল ট্রেইল ধরে হাঁটার সময় প্রতি মুহূর্তে থাকতে হয় সর্বোচ্চ সতর্কতায়। যদিও চারপাশের অপরূপ প্রকৃতি যাত্রাপথে মোটেও হতাশ করে না। আর অনিন্দ্য সুন্দর এই সাইংপ্রা ঝরনার রয়েছে মোট তিনটি ধাপ।
বাকলাই ঝরনা
অভিযাত্রীদের মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ঝরনার নাম বাকলাই। ঝরনাটির উচ্চতা প্রায় ৩৮০ ফুট। বান্দরবনের থানচি উপজেলার বাকলাই গ্রামে অবস্থিত এই ঝরনায় যাওয়ার পথ বেশ দুর্গম। ফলে বান্দরবান শহর থেকে ঝরনা দেখে ফিরে আসতে ৪-৫ দিন সময় লেগে যায়। তাই পাহাড়ের দুর্গম পথে ভ্রমণের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া বাকলাই ঝরনায় যাওয়া মোটেও উচিত নয়।
জাদিপাই ঝরনা
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত জাদিপাই ঝরনা বাংলাদেশের প্রশস্ততম ঝরনার মধ্যে অন্যতম। আর বর্ষাকালে এই জলপ্রপাতের পানি প্রবাহের পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণকারীরা জাদিপাই ঝরনার রূপ দেখতে আসেন। কেওক্রাডং থেকে প্রায় ২৫০০ ফুট নিচে জাদিপাই ঝরনার অবস্থান হওয়া সেখান থেকে হেঁটে ঝরনায় যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
দামতুয়া জলপ্রপাত
দামতুয়া ঝরনা থেকে কয়েক শ গজ উপরে দামতুয়া জলপ্রপাতে অবস্থান। আর দামতুয়া জলপ্রপাতের ধাপগুলো যেন প্রকৃতির হাতে গড়া একেকটি অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন। দামতুয়া জলপ্রপাত দেখতে হলে বান্দরবানের আলীকদম বাসস্ট্যান্ড থেকে থানচির নতুন রাস্তা ধরে প্রায় ১৭ কিলোমিটার এগিয়ে গাইডের সাহায্যে পাহাড়ি বনের আরও গভীরে যেতে হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু থানচি রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় চারপাশের অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়ি দৃশ্য কল্পনাকে হার মানায়।
খৈয়াছড়া ঝরনা
সীতাকুণ্ডের মিরসরাইয়ে অবস্থিত খৈয়াছড়া ঝরনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝরনাগুলোর একটি। ঝরনার ৯টি ধাপের নান্দনিক সৌন্দর্য দেখে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ মুগ্ধ হয়। গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকাবাঁকা মেঠো পথ আর পাহাড়ের হাতছানিতে অনন্য খৈয়াছড়ার আবেদন উপেক্ষা করা কঠিন বলেই প্রকৃতিপ্রেমীরা খৈয়াছড়া ঝরনাকে বাংলাদেশের ঝরনা রানি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
হামহাম জলপ্রপাত
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি বনাঞ্চলের গভীরে একদল পর্যটক গাইড শ্যামল দেববর্মাকে সঙ্গে নিয়ে হামহাম জলপ্রপাত আবিষ্কার করেন। ২০১০ সাল প্রকাশিত ঝরনাটি স্থানীয়দের কাছে চিতা ঝরনা হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১৪০ ফিট উচ্চতা হতে নেমে আসা ঝরনার বুনো সৌন্দর্য দেখার আশায় প্রতি বর্ষায় সারা দেশ থেকে ভ্রমণকারীরা হামহামের উদ্দেশে যাত্রা করে।
জাহ্নবী