![আমি আওয়ামী লীগের ছায়াতলের স্বতন্ত্র প্রার্থী](uploads/2023/12/25/1703482284.syl-pic-dulal-12112112.jpg)
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। ২০১৭ সাল থেকে বিএমএর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ২০০৫ সাল থেকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদ ডা. দুলাল সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। খবরের কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনে তার অবস্থান ও ভোটের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজ-এর সিলেট ব্যুরো অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক শাকিলা ববি।
খবরের কাগজ: পেশাজীবনের বাইরে এবারই প্রথম ভোটের রাজনীতিতে। নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
ডা. দুলাল: আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আমি এই দলের একজন ধারক ও বাহক। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি। নেত্রী যেহেতু এবার দলের লোকদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন তাই আমি প্রার্থী হয়েছি। আওয়ামী লীগের ছায়াতল থেকে বের হইনি। আমি আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমি আমার যোগ্যতার বলে প্রার্থী হয়েছি। জনগণ বলছেন, আপনার পরিবারের একটি ঐতিহ্য আছে, আপনার পরিবারে মুক্তিযোদ্ধা আছে, আপনার লেখাপড়া আছে। আমরা এমন যোগ্য মানুষকে এই আসনে চাই। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি।
খবরের কাগজ: দলীয় প্রার্থী না হয়ে স্বতন্ত্র হলেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ডা. দুলাল: আমি জনগণের কাছে আছি। জনগণ আমাকে গ্রহণ করেছেন। আমি বিগত দিনে যখন প্রার্থী ছিলাম না, তখনো জনগণের কাছে ছিলাম। সব সময়ই তাদের সুখে-দুঃখে আমি আমার এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। বিগত দিনগুলোতেও আমি ব্যক্তিগতভাবে জনগণের জন্য কাজ করেছি। কখনোই আমি কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজ করিনি। সেটার ফল এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পাচ্ছি।
খবরের কাগজ: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু আছে বলে মনে করছেন?
ডা. দুলাল: মাত্র নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত যতটুকু দেখা যাচ্ছে মোটামুটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। তবে অভিযোগ পাচ্ছি, আমাদের কর্মীদের নির্বাচনি অফিস না খোলার জন্য বলা হচ্ছে। একটি বিশেষ দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের কর্মীদের ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলছেন। স্থানীয়ভাবে বলা হচ্ছে নির্বাচনি বুথ দখল করে নেওয়া হবে। আমাদের একজন কর্মীকে আক্রমণও করা হয়। আমরা এসব বিষয় থানা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইউএনওর ওপরও আস্তা ধরে রাখতে পারছি না। আমার মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সরকারদলীয় প্রার্থীর নির্দেশে সিলেটের রিটার্নিং অফিসার ও তার অধীনস্থ কর্মপরিষদ আমার মনোনয়ন বাতিল করে। পরে আমি আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার পরিষদ এবং প্রধানমন্ত্রী বিভিন্নভাবে বলছেন। তারা বিভিন্ন নির্দেশনাও দিচ্ছেন। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে, বিশেষ করে সিলেট-৩ আসনে অবাধ-সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমি সন্দিহান। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হয়তো আরও পরিবর্তন দেখতে পাব। আমার রাজনৈতিক দল যেখানে অবাধ-সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব চেষ্টা করছে, সেখানে আমার দলের এক প্রার্থীর এ রকম হম্বিতম্বি সুষ্ঠু ভোটের অন্তরায়। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে, তিনি নাকি ঘোষণা দিয়েছেন ভোট যেভাবে যাকেই জনগণ দিক না কেন, তিনি যেকোনো মূল্যে সব ভোট তার নিজের বলয়ে নিয়ে আসবেন।
খবরের কাগজ: আপনাকে কেন ভোট দেবে জনগণ? নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর জন্য কী করবেন?
ডা. দুলাল: জনগণ আমাকে ভোট দেবে কারণ আমি জনগণের প্রার্থী। জনগণই আমাকে নির্বাচন করার সাহস দিয়েছেন। এ ছাড়া সব মিলিয়ে আমার রাজনৈতিক পথপরিক্রমা প্রায় ৫০ বছরের। ৩২ বছরের সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা। এ সময়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শুরু করে সংসদ সচিবালয়ে বিভিন্ন আইন প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি জনসেবা, সমাজসেবা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছি। এসব অভিজ্ঞতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আমার বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় আমি একজন সংসদ সদস্য হওয়ার মতো সব যোগ্যতা অর্জন করেছি।
আমি যেহেতু চাকরির সুবাদে আইন প্রণয়নের কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম তাই বারবার আমাদের সংবিধান পড়েছি। এই সংবিধান আমার হৃদয়ে লালন করছি। সেখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এই সবকিছু মিলে আমার এলাকার জনগণ মনে করছেন, এ আসনের জন্য আমি একজন যোগ্য প্রার্থী। আমি নির্বাচিত হলে সিলেট-৩ আসন দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জকে মডেল এলাকায় রূপান্তরিত করব। রাজনীতিতে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু বিভেদ নয়। আমি বিজয়ী হলে বিভেদ নয়, সবার মতামত নিয়েই এলাকাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলব।