ঢাকা ৯ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪

একাডেমি থেকে চাকরি, সব ক্ষেত্রেই প্রশ্নফাঁসের ডিজিটাল প্রতারণা

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:০২ পিএম
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৩ পিএম
একাডেমি থেকে চাকরি, সব ক্ষেত্রেই প্রশ্নফাঁসের ডিজিটাল প্রতারণা
অলংকরণ : মেহেদী হাসান

বিশেষ কোনো পরীক্ষা এলেই তা টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক কিছু প্রতারক নেমে পড়েন প্রশ্নপত্র ফাঁসের মিশনে। এটা চাকরি হোক বা একাডেমিক- সবকিছুতেই ফাঁস করা চাই প্রশ্নপত্র। আর বেশিভাগ ক্ষেত্রেই এই ‘ফাঁস’ কথাটি গুজব। কিন্তু এই প্রশ্নফাঁস বিষয়টি যে কোনো সহজ কাজ নয়, এটা অনেকেরই বোধগম্য নয়।

তবে, প্রশ্নফাঁস বর্তমানে আলোচিত একটি বিষয়। বিশেষ করে পিএসসির প্রশ্নফাঁস নিয়ে ঘটে যাচ্ছে তুলকালাম কাণ্ড। যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, এই বিষয়টি বহুদিন ধরেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চালিয়ে আসছে। আর এই চক্রে যুক্ত রয়েছে বড় বড় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গাড়িচালক ও গ্যারেজকর্মীও।

বর্তমানে প্রশাসন এই প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি নিয়ে খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যার ফলে এটি খুবই দুরূহ একটি বিষয়। তার পরও সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা এবং চলমান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়েছে।

গেল ১২ ও ১৩ জুলাই দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষা নিয়ে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকেই প্রশ্নের ছবি ও সমাধানসংবলিত পোস্ট পাওয়া যায়।

এটি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানার। সংস্থাটি অন্তত ৫টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গণিত প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিসহ পোস্টের খোঁজ পেয়েছে। যারা এগুলোকে এনটিআরসিএর প্রশ্ন বলে দাবি করছে। এই পোস্টগুলো ৩ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত দেওয়া হয়।

এদিকে গত ৩০ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়েও একই অ্যাকাউন্টগুলোসহ একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্নফাঁসের দাবি করা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এবং এইচএসসির প্রশ্ন আগেই ফাঁস হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে যে পোস্টগুলো করা হয়েছে সেগুলোর দাবি সঠিক নয়। পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওই পোস্ট সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নসংবলিত পোস্টগুলোর এডিট হিস্ট্রি যাচাই করে দেখা যায়, ৩ জুলাই এইচএসসির প্রশ্নবিষয়ক পোস্ট করার পর পরে ১২ জুলাই নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ২টা ৫৯ মিনিটে ওই পোস্টে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।

একই কায়দায় পরের দিন (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিবন্ধনের কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের দাবিও প্রচার করা হয়েছে। এই পোস্টের এডিট হিস্ট্রি যাচাই করে দেখা যায়, ১২ জুলাই বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে প্রশ্নফাঁস হয়েছে দাবি করে পোস্ট করার পর পরবর্তী সময়ে নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ৩টা ২৪ মিনিটে ওই পোস্টে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।

এ সংক্রান্ত দাবির সবগুলো পোস্টেই একই প্রতারণার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। যে পাঁচটি অ্যাকাউন্ট থেকে এই দাবি ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে সেসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং Solaiman Chowdhury নামের অ্যাকাউন্টে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে Rafiqul Islam Khan, Engr Nazmul Sarkar এবং ইঞ্জি. নাজমুল সরকার নামের তিনটি অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার উপ-প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েসের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইমরুল কায়েস নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, “আমার ছবি ব্যবহার করে ফেক আইডি খোলা হয়েছে; ইতোমধ্যে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি।”

অন্যদিকে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের দাবিতে করা পোস্টগুলোও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। 

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বা এইচএসসির প্রশ্নফাঁস হওয়ার কোনো তথ্য গণমাধ্যমে আসেনি। 

শিক্ষক নিবন্ধন ও এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্নের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দাবিগুলো সঠিক নয়। আগেও একাধিকবার একই কায়দায় বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের দাবি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, শিক্ষক নিবন্ধন ও এইচএসসির প্রশ্নফাঁসের দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক। এসব প্রতারণা থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।

অমিয়/

ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি ভুয়া

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম
ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি ভুয়া

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বলে প্রচার করা একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাছাড়া, ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে রবিবার (১১ আগস্ট) দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশ হয়েছে। এটিও ভাইরাল। প্রকৃতপক্ষে এই দুটি খবরই ছিল ভুয়া।

এই বিষয় দুটি সামনে আসার পর বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের টিম এ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে কোনো খোলা চিঠি দেননি বরং ফেসবুক থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম হয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভুয়া এই চিঠির তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিঠিটির উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, গত ৫ আগস্ট বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে মো. রাকিব আকন নামে এক ব্যক্তি এর সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করেছেন। পরবর্তীতে ভারতের আগরতলা ভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যত’ এর প্রিন্ট সংস্করণেও এটি চিঠি আকারে তারিখ উল্লেখসহ প্রকাশের পর এর প্রিন্ট সংস্করণের স্ক্রিনশট ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো- 

‘আমি পদত্যাগ করেছি, শুধু মাত্র লাশের মিছিল জেনো না দেখতে হয়। তোমাদের (ছাত্রদের) লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলো ওরা, আমি হতে দেয়নি, ক্ষমতা দিয়ে এসেছি। ক্ষমতায় আমি থাকতে পারতাম যদি সেন্টমার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিতাম। অনুরোধ রইলো তোমরা ব্যাবহার হয়ো না।

আমি বলে এসেছি আমার সোনার সন্তানদের যারা লাশ করে ঘরে ফিরিয়েছে তাদের জেনো বিচার করা হয়।

হয়তো আজ আমি দেশে থাকলে আরো প্রাণ ঝড়তো, আরো সম্পদ ধ্বংস হতো। আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি,
তোমাদের জয় দিয়ে এসেছি, তোমরা ছিলে আমার শক্তি, তোমরা আমাকে চাওনি, আমি নিজেই তখন চলে এসেছি, পদত্যাগ করেছি।

আমার কর্মিরা যারা আছেন, কেউ মনবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বার বার উঠে দাড়িয়েছে। আপনারই দাড় করিয়েছেন। আশাহত হবেন না। আমি শিঘ্রয় ফিরবো ইনশাআল্লাহ।  পরাজয় আমার হয়েছে কিন্তু জয়টা আমার বাংলাদেশের মানুষের হয়েছে। যে মানুষের জন্য আমার বাবা আমার পরিবার জীবন দিয়েছে। খবর পেয়েছি ইতিমধ্যে অনেক নেতা কর্মিকে হত্যা ও বাড়ি ঘরে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করেছে।

আল্লাহ অবশ্যই আপনাদের সহায় হবেন।

আমি আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবারও বলতে চাই, আমি কখনই তোমাদের রাজাকার বলিনি। আমার কথাটা বিকৃত করা হয়েছে। ঐদিনের সম্পূর্ণ ভিডিও তোমাদের দেখার অনুরোধ রইলো।

তোমাদের বিপদগ্রস্ত করে একদল তার সুবিধা নিয়েছে। তোমরা ঠিকই তা একদিন অনুধাবন করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। 

ভালো থেকো আমার দেশের মানুষ, ভালো রেখো আমার সোনার বাংলাকে,

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু,
শেখ হাসিনা...’

যদিও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানারের কাছে এটি তাদের পত্রিকায় ছাপা হয়নি বলে অস্বীকার করেছে। তবে পারিপার্শ্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, এটি ওই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছে। 

তবে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এই চিঠি নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।

অন্যদিকে, রবিবার (১১ আগস্ট) ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা তার পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। যেটি শেখ হাসিনার চিঠির বক্তব্য বলে জানানো হয়। পরে এসব গণমাধ্যমের সূত্রে খবরটি বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমই প্রচার করা হয়।

অধিকাংশ গণমাধ্যমই সূত্র হিসেবে ভারতের দ্য প্রিন্ট এবং ইকোনমিক টাইমসের সূত্র দিয়েছে৷ তবে এই দুই গণমাধ্যমসহ ভারতের কোনো গণমাধ্যমই কথিত চিঠিটির মূল উৎস সম্পর্কে জানাতে পারেনি।

দ্য প্রিন্ট দাবি করেছে, শনিবার (১০ আগস্ট) এই চিঠি বা বার্তাটি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। অথচ এর পাঁচদিন আগে থেকেই কথিত এই বার্তাটি ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে পাওয়া যাচ্ছিল। 

রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ইকোনমিক টাইমস এবং দ্য প্রিন্টের সংশ্লিষ্ট দুই সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই চিঠির উৎস প্রসঙ্গে। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। 

একই সময়ে শেখ হাসিনার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও বিষয়টি অবহিত করে সত্যতা জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার।

পরবর্তীতে জয় নিশ্চিত করেছেন, কথিত এই চিঠিটি তার মায়ের লেখা নয়। জয় বলছেন, “আমার মায়ের পদত্যাগের বিবৃতি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা পরে কোনো বক্তব্য দেননি।”

সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিয়েছেন, এটি ডাহা মিথ্যা।

অমিয়/

মৃত্যুর পুরোনো ঘটনা নিয়ে নতুন করে গুজব

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৬:১০ পিএম
মৃত্যুর পুরোনো ঘটনা নিয়ে নতুন করে গুজব
ছবি : সংগৃহীত

পুরনো ঘটনাকে নতুন বা সাম্প্রতিক ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার বিষয়টি এখন বেশ প্রচলিত একটা গুজব। কাগুজে দুনিয়ায় এমন গুজব ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। তবে, ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, আরও পরিষ্কার করে বললে- সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোটা ‘ডালভাত’ হয়ে গেছে। এটা এখন এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, মানুষের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকেও বিকৃত করে বা অতীতকে টেনে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীদের কষ্টের স্মৃতিকে ক্ষণিকের জন্য হলেও জাগিয়ে তোলা হচ্ছে।

সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচিত একটি বিষয় হলো রাসেল’স ভাইপার। এই সরীসৃপ প্রাণীটি নিয়ে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরণের আলোচনা সমালোচনা। ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাছাড়া কিছু পুরনো ঘটনাকে নতুন করে উপস্থাপন করার মতো ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে। যা গুজবের পর্যায়ে পড়ে। আর এসব গুজবের খবর যাচাই না করে ফেসবুকে শেয়ার করছেন কিছু শিক্ষিত মানুষ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো সব খবরই যে সত্যি নয়, তা এখনো অনেকের কাছে বোধগম্য নয়। এর একটা বড় কারণ হলো, মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে তাদের বিচরণ না থাকা (চোখ না রাখা) । ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে গণমাধ্যমের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন তারা। ফলে গুজব আর সত্যি এই দুটোকে আলাদা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফেসবুকে এক শিশুর ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, যশোরের নওয়াপাড়ায় বাড়ির উঠানে খেলার সময় রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

একই শিশুর ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট করেছেন চলচ্চিত্র নায়িকা এবং নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা রহমান। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করা পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, সিরাজগঞ্জে বাড়ির উঠানে খেলার সময় রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে এক ছোট শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

কিছু সময় পর তিনি পোস্টটি ডিলিট করে দেন। পরে একই ঘটনাটি যশোরের দাবি করে তিনি পোস্ট শেয়ার করেন। অর্থাৎ, দুইটি দাবিই তার প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা হয়েছে। 

বিষয়টি ঘেটে দেখা গেছে এই ছবির শিশুটি মারা গেছে ২০২২ সালে। সে বছরের ১২ অক্টোবর কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নন্দীর পাড়ায় সাপের কামড়ে সাদেক মো. জিহান (৪) নামে এই শিশুটির মৃত্যু হয়। তবে এসব খবরে শিশুটি কোন সাপের কামড়ে মারা গেছে তা উল্লেখ করা হয়নি। 

অথচ এই খবরটিকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবি করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

রাসেল’স ভাইপারের আক্রমণে সম্প্রতি যশোরের নওয়াপাড়া বা সিরাজগঞ্জে কারও মৃত্যু হয়েছে কি-না গণমাধ্যমে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত কুমার দাস এবং সিরাজগঞ্জ খবর-এর সম্পাদক জহির রায়হান রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, সেখানেও রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে কোনো শিশু মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। 

শিশু মৃত্যুর পুরোনো ছবি দিয়ে যশোর এবং সিরাজগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর। এটিকে গুজব বলে যেমন উড়িয়ে দেওয়া যায়, তেমনি মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চারও করা যায়। তবে চলমান সময়ে এটিকে বিশ্বাস করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে অনেকটাই স্বাভাবিক!

অমিয়/

বেশি গুজব ছড়ানো হয় ফেসবুকে

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
বেশি গুজব ছড়ানো হয় ফেসবুকে
ছবি : সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফেসবুক। বিশ্বে কত মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে মেটার প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৯৬ কোটি। ২০২৩ সালে এটা ২ শতাংশ বেড়েছে। বলা যায়, এটা ক্রমেই বাড়ছে।

ফেসবুক ব্যবহারে বিশ্বে তিন নম্বর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম অবস্থানে ভারত এবং দ্বিতীয় অবস্থান ফিলিপাইনের। আর এই বিপুল পরিমান ব্যবহারকারীকে পুঁজি করে একটি শ্রেণি অপতথ্য প্রচার করে রোজগারে নেমেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা, গুগল, ইউটিউব, টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যখন ডিজিটাল ক্রিয়েটর হিসেবে ভিউ/ইম্প্রেশন/ক্লিকের ভিত্তিতে রোজগারের ব্যবস্থা করেছে তখন থেকেই বেড়ে গেছে এর মাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রচার। আর এসব ভূয়া তথ্য অনেকে সত্যি ভেবে বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন।

বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার গত মে মাসে সর্বোচ্চ ২৩৪টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ৩৮টি ফ্যাক্টচেক প্রকাশিত হয়েছে প্রতারণা বিষয়ে। এই সময়ে একক প্লাটফর্ম হিসেবে ফেসবুক ছড়িয়েছে এমন শনাক্তকৃত গুজবের সংখ্যা ১৮৭টি। একই সময়ে টিকটকে ৪৯টি, ইউটিউবে ৩৫টি এবং এক্স (সাবেক টুইটার) থেকে চারটি গুজব শনাক্ত করা হয়েছে।

গেল মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে প্রচারিত ১৪টি গুজব শনাক্ত করা হয়েছে, যা একক ব্যক্তি হিসেবে গত মাসে সর্বোচ্চ।

তালিকায় এর পরেই আছেন ক্রিকেটার ও সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। তার ১৩টি গুজব শনাক্ত হয়েছে।

তাছাড়া গুজবে ছিল হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন ফুটেজ, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ড ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে গুজব খবর।

সম্প্রতি গণমাধ্যমের নিউজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের ক্ষেত্রে ফটোকার্ডের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই ফটোকার্ডে প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয়। এই ফটোকার্ডের তথ্যগুলো মুছে নতুন কিছু লিখে ফেসবুকের মতো সামাজিক অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমেও শেয়ার করা হয়। তাছাড়া পুরোনো ফুটেজ ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়।

এসব গুজবের ঘটনা লাগামহীন ভাবে প্রচার হচ্ছে ২০২৩ সাল থেকে। এর আগেও গুজব ছিল কিন্তু তা খুবই কম।

গত মে মাসে এমন ২০টি ফ্যাক্টচেকে দেখা গেছে- নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ১৩টি, গণমাধ্যমের নাম ও লোগো ব্যবহার করে পাঁচটি এবং অন্য গণমাধ্যমের ফুটেজ ব্যবহার করে ছয়টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

এই গুজবের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারন। বিভিন্ন গ্রুপ বা ব্যাক্তি তাদের ফলোয়ার/লাইক বাড়াতে এই কাজটির প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। যত বেশি ভিউ তত বেশি পয়সা, এর পেছনে ছুটতে গিয়ে অনেকেই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিভিন্ন ফুটেজের অংশবিশেষ যুক্ত করে একটা মনগড়া ভয়েস যুক্ত করে দেয়। আর মানুষের ইন্টারনেট আসক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা ফায়দা লুটে নেয়। বিষয়টি কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক, ক্লিক করলেই লাভবান হয়ে যাচ্ছেন ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়া ব্যক্তি।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব ভুয়া ফুটেজ মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে।

দায় কার?
এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কতটুকু দায়, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কতটুকু দায়!

অমিয়/

অনলাইন জুয়া, ভুয়া বিজ্ঞাপন ও একজন সাকিব

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ০১:১৫ পিএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
অনলাইন জুয়া, ভুয়া বিজ্ঞাপন ও একজন সাকিব
ছবি: সংগৃহীত

ক্যাসিনো নামটি ২০১৯ সালের আগে খুব কমসংখ্যক মানুষ জানত। ওই বছর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে শতাধিক ব্যক্তি আটক হওয়ার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে নামটি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাসিনো জিনিসটা কী, এটা সাধারণের বোধগম্য হতে খানিকটা সময় নিয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে বিষয়টি খোলাসা করে দেয় ফেসবুকের বিজ্ঞাপন।

হঠাৎ করেই ফেসবুকে ভাসতে থাকে অনলাইন ক্যাসিনোর বিজ্ঞাপন। নামিদামি তারকাদের ছবি দিয়ে কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ছবি ও ফুটেজ ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন। ফেসবুকে বাংলায় সবচেয়ে বেশি অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হয়েছে তার ছবি।

ধারণা করা হয়, প্রস্তর যুগের আগেও জুয়া খেলার প্রচলন ছিল। যিশুখ্রিষ্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগে ইরাক, সিরিয়া, তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায় বাজি ধরে পাশা খেলার মতো এক ধরনের খেলা হতো। খ্রিষ্টের জন্মের হাজার বছর আগে চীনে পশুর লড়াইয়ের ওপর বাজি ধরার প্রচলন ছিল। ১৬৩৮ সালে ইতালির ভেনিসে প্রথম জুয়ায় আসর বসে। যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসকে বলা হয় জুয়ার নগরী। ইংল্যান্ডেও জুয়া বৈধ। 

তবে হালে অনলাইন জুয়ার প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আর এর সবচেয়ে বড় শিকার ক্রিকেটের এই তারকা ও সংসদ সদস্য।

বাংলাদেশে আইনত জুয়া অবৈধ। তা ছাড়া, কোনো ধর্মই জুয়াকে বৈধতা দেয়নি। ইসলাম ধর্মে তো জুয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

সম্প্রতি অনলাইনে জুয়া খেলার বিজ্ঞাপন নিয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক স্বীকৃত তথ্য যাচাইকারী এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া নিয়ে কাজ করে থাকে।

এই প্রতিষ্ঠানটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে জুয়ার অ্যাপের প্রচারণার বিষয়টি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের কোনো সেলিব্রিটি তারকা এই প্রচারণায় অংশ না নিলেও তাদেরকে জড়িয়ে নিয়মিতই এসব বিজ্ঞাপন রীতিমতো ফেসবুকে বুস্ট করে প্রচার করা হচ্ছে।

পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এসেছে, ভুয়া এসব বিজ্ঞাপনের প্রচারণার প্রধান শিকার হয়ে উঠেছেন সাকিব আল হাসান। গত তিন মাসে শুধু সাকিবকে জড়িয়ে প্রচারিত এমন ১৯টি ভুয়া প্রচারণা শনাক্ত করা হয়েছে।

তা ছাড়া, ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মোস্তাফিজুর রহমান, চিত্রনায়ক শাকিব খান, মনোয়ার হোসেন ডিপজল, সংগীতশিল্পী এবং অভিনেতা তাহসান রহমান খান, কনটেন্ট নির্মাতা তাওহীদ আফ্রিদি এবং ইফতেখার রাফসানও হয়েছেন এসব ভুয়া বিজ্ঞাপনের শিকার।

বাংলাদেশের জুয়ার বিজ্ঞাপনে আইনগত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনলাইনে জুয়া খেলার অ্যাপগুলো দেদার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থার অ্যাড লাইব্রেরি অনুসন্ধান করে প্রতিদিন হাজারো জুয়ার অ্যাপের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতে দেখা যায়।

এসব প্রচারণায় ভিডিও বিকৃতি করে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সাকিব আল হাসানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারের অংশে তার কণ্ঠ নকল করে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন অডিও জুড়ে দিয়ে ভিডিওগুলো জুয়ার বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

এসব বিকৃতি থেকে রেহাই পায়নি গণমাধ্যমের সংবাদ বুলেটিনও। দেশি-বিদেশি এসব বুলেটিন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিকৃতি করা হচ্ছে দর্শকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এক পেজে কিছুদিন বিজ্ঞাপন চালানোর পর সে পেজে বিজ্ঞাপন চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আবার অন্য কিছু পেজে বিজ্ঞাপন চালানো হয়। এভাবে বিজ্ঞাপন চলতে থাকে। এ ছাড়া যে পেজগুলো থেকে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়, সে পেজগুলোর টাইমলাইনে সংশ্লিষ্ট পোস্টগুলো থাকে না।

পেজগুলোর ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণে জানা যায়, এ পেজগুলোর বেশিরভাগই দেশের বাইরে থেকে পরিচালনা করা হয়।

সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এসব বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই করতে যান না। ফলে এতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন ভিক্টিম। বুস্ট করা এসব বিজ্ঞাপনকে সত্য ভেবে কমেন্টে সাকিবকে গালমন্দ করছেন অনেকেই।

সাকিবই কেন বিজ্ঞাপনের মুখ? এর পেছনে রয়েছে ছোট একটু ইতিহাস। ২০১৯ সালের অক্টোবরে জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার তথ্য গোপন করায় এক বছরের জন্য আইসিসি কর্তৃক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে বেটউইনার নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটের পণ্যদূত হন সাকিব, যা বেটউইনার নামে এক বেটিং প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নাজমুল হাসান পাপন তখন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যদি সাকিব এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল না করেন, তা হলে বিসিবি তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। এরপর সাকিব ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করেন।

এই ঘটনার বছরখানেক পরেই বাবুএইটিএইট নামের একটি অনলাইন জুয়ার পোর্টালের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় সাকিবকে। ভিডিওতে সাকিব বলছেন, “বাবু এইটিএইট স্পোর্টস বাংলাদেশের এক নম্বর স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলার আপডেট পাবেন।” কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এই সাইটটি আসলে একটি জুয়ার সাইট, যেখানে ক্রিকেট নিয়ে বাজি ধরার পাশাপাশি ক্যাসিনো, স্লট গেমের মতো জুয়াও খেলা যায়। এসব ঘটনাপ্রবাহ সাকিবকে জুয়ার ভুয়া বিজ্ঞাপনগুলোর শিকার বানানোর ক্ষেত্রে প্রভাবক হয়ে থাকতে পারে। 

তা ছাড়া, সাকিবের জনপ্রিয়তা ও পূর্বের জুয়াসংশ্লিষ্টতার অভিযোগের কারণে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনের জন্য তাকে ব্যবহার করা সহজ এবং কার্যকর বলে মনে করছে বিজ্ঞাপন প্রচারকারীরা।

মেটা’র নীতিমালা কী বলে?
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান মেটার অনলাইন জুয়া এবং গেমিং বিজ্ঞাপন নীতিমালা রয়েছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপনদাতাদের মেটার লিখিত অনুমতি এবং স্থানীয় আইন মেনে চলার প্রমাণ দেখানোর কথা বলা আছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন চালানো যাবে শুধু মেটার নির্ধারণ করা নির্দিষ্ট কিছু দেশে। নীতিমালায় অনুমতি নিয়ে জুয়াসংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চালানো যাবে এমন ৩৪টি দেশের নাম উল্লেখ থাকলেও এর মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই।

তবে অনুমতি ছাড়া শুধু জুয়াসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান, সরকারি লটারি এবং বিনামূল্যে খেলার গেমগুলোর প্রচার করা যাবে।

বর্তমান আইনে বাংলাদেশে জুয়া বেআইনি হলেও এই আইন ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রণীত হয়েছিল। বাংলাদেশ পুলিশ ১৮৬৭ সালের পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছে। এই আইন অনলাইন জুয়ার মতো নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অপ্রতুল।

অনেকেই শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য জুয়া খেলা শুরু করেন। পরে তাদের অনেকেই এতে আসক্ত হয়ে পড়েন। আর এই আসক্তি তাদের বিভিন্ন অপকর্মের দিকে ঠেলে দেয়। জুয়া খেলে হেরে যাওয়া টাকা ফেরত পেতে তারা বারবার জুয়া খেলেন। ফলে এক সময় তা মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

অমিয়/

ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফাঁদে বেহাত হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য, যাচাই করার পরামর্শ

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফাঁদে বেহাত হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য, যাচাই করার পরামর্শ
প্রতীকী ছবি

ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি বহুবছর ধরেই চলে আসছে। আগে বিষয়টি খুবই সুক্ষভাবে যেমন- কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বা ছোট ছোট পোস্টার ছাপিয়ে বিভিন্ন কায়দায় করা হতো। তবে প্রযুক্তির যুগে এসে এটি বেশ খোলাখুলি বিষয় হয়ে গেছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক শ্রেণির প্রতারক ভুয়া বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুরাতন বিজ্ঞাপনকে কায়দা করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। আর এসব বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কিছু মানুষ।

দেশের অধিকাংশ মানুষ সহজ সরলভাবে জীবন যাপন করেন। আর কিছু অসাধু মানুষ এই মানুষগুলোকে টার্গেট করে চাকরির বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির ভুয়া বিজ্ঞাপন অনলাইনে প্রচার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

আসা যাক চাকরির ভুয়া বিজ্ঞাপনের বিষয়ে। দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। তাছাড়া চাকরি করছেন কিন্তু আরও ভালো চাকরি পাওয়া আশায় থাকেন বিশাল একটা অংশ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভুয়া নিয়োগের ফাঁদ পাতা হচ্ছে। আর এসব বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই না করে এই ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মানুষ।

এটা যে শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতির বিষয় তা নয়। এসব ক্ষেত্রে তথ্য চুরির আশঙ্কাও রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব সরকারি ও বেসরকারি চার ধরণের প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগ সংক্রান্ত অভিনব প্রতারণার সন্ধান পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ নামে একটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান। যাদের প্রধান লক্ষ্য দেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য বের করে আনা।

রিউমর স্ক্যানার ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, দেশের সাতটি সিটি কর্পোরেশন, ২০টি পৌরসভা, ৬০টি হাসপাতাল এবং অন্তত ২০টি পাসপোর্ট অফিসের নাম, লোগো ব্যবহার করে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য। যারা ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকরি প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত প্রথমে ইমেইল পাঠানোর অনুরোধ করে এবং পরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার জাল পেতেছে। 

আর এসব কথিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোকে বিশ্বস্ত করে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার লোগো। 

সাত সিটি কর্পোরেশনে ভুয়া নিয়োগের ফাঁদ খোঁজতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, চলতি বছর ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং গাজীপুর বাদে বাকি সিটি কর্পোরেশনগুলো ভুয়া নিয়োগের ফাঁদে পড়েছে। এদের মধ্যে তারিখ বদলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নামে দুইবার একই ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারির তারিখে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রথম ভুয়া বিজ্ঞপ্তি আসে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের। বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, পরিচ্ছন্ন পরিদর্শন, ইপিআই সুপারভাইজার, হিসাবরক্ষক, সহকারী হিসাবরক্ষক এবং এমএলএসএস পদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে, কোনো পদের বিপরীতেই সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে পদভেদে জেএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত।

বিজ্ঞপ্তিতে ছয়টি শর্ত যুক্ত করা হয়। এর একটি শর্তে বলা হয়, প্রার্থীদের পাঠানো জীবন বৃত্তান্ত যাচাই বাছাই করার পর খুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠানো হবে। এই এসএমএস পাওয়ার চার ঘন্টার মধ্যেই ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে।

বিষয়টি খেয়াল করলে দেখা যায়, সাধারণত কোনো সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক ড্রাফটের জন্য এত কম সময় বেঁধে দেওয়া হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। আর জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে ব্যবাহার করা হয়েছে জিমেইল পরিসেবার ইমেইল ([email protected])। 

রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, প্রথম আলোর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারির (আবেদনের শেষ তারিখ) প্রিন্ট সংস্করণ যাচাই করে এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি। তাছাড়া খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সানজিদা বেগমও এমন কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন।

এরপর গত ৩০ মার্চ পর্যন্ত আরও ছয়টি সিটি কর্পোরেশনের নামে একই কায়দায় সাতটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে ফেসবুক।

যদিও এসব ভুয়া বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রচারের পর সংশ্লিষ্ট একাধিক সিটি কর্পোরেশন সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনের ভুয়া নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিগুলোর ক্ষেত্রে ‘সিটি কর্পোরেশন’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। লকড অবস্থায় থাকা অ্যাকাউন্টটিতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের লোগো দেওয়া আছে প্রোফাইল ছবিতে।

পর্যবেক্ষণে রিউমর স্ক্যানার দেখেছে, যখন যে সিটি কর্পোরেশনের নামে এই অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি ছাড়া হয় তখন সেই সিটি কর্পোরেশন বিষয়ক তথ্য অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়।

এসব বিজ্ঞপ্তি দেখে জীবন বৃত্তান্ত পাঠিয়েছেন এমন কয়েকজনের খোঁজ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানতে পারে, রংপুর, বরিশাল এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ইমেইল ভিন্ন হলেও এই ব্যক্তিদের একই নম্বর (09638763186) থেকে এসএমএস দেওয়া হয়েছে।

এসএমএসে ওই ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন জানিয়ে ৩০৫ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করার জন্য আরেকটি মোবাইল নম্বর (+8801612079312) দেওয়া হয়েছে। তিন ব্যক্তিকেই এই নম্বরেই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নগদের মাধ্যমে ৩০৫ টাকা পাঠাতে বলা হয়েছে।

পৌরসভার নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও একই ধাঁচে প্রতারণা করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে গাইবান্ধা এবং পটুয়াখালী পৌরসভার দুইটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। সিটি কর্পোরেশনগুলোর ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মতো এই দুই বিজ্ঞপ্তিতেও ‘প্রথম আলো’র লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। যথারীতি এই দুই বিজ্ঞপ্তিও পত্রিকাটির কোনো প্রিন্ট সংস্করণে পাওয়া যায়নি। 

এই দুই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তির নাম ও পদবী ভিন্ন থাকলেও স্বাক্ষর একই ছিল৷ গাইবান্ধা পৌরসভার ক্ষেত্রে জীবন বৃত্তান্ত পাঠাতে দেওয়া ইমেইল ঠিকানা [email protected]। পটুয়াখালী পৌরসভার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে [email protected] এই ইমেইল ঠিকানা।

গত ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত আরও অন্তত ১৮টি পৌরসভার নামে একই কায়দায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এসেছে ফেসবুকে।

সরকারি বেসরকারি হাসপাতালেও একই কায়দায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে ফেসবুকে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে গত ১৬ মে পর্যন্ত দেশের অন্তত ৩২টি জেলার অন্তত ২৬টি সরকারি ও ৩৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের নামে ভুয়া নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে। 

চলতি বছর প্রচার হওয়া ৩০টি হাসপাতালের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মধ্যে ২০টিই সরকারি প্রতিষ্ঠান।  

রিউমর স্ক্যানার দুইটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টেরও সন্ধান পেয়েছে যারা গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে হাসপাতাল সম্পর্কিত এই ধরণের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট করে আসছেন। এর মধ্যে Md Habib এবং Angel Ava অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করার প্রমাণ মিলেছে। 

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর নাম ও লোগো ব্যবহার করে ‘Hospital Authority’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই কায়দায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।  

২০২২ সালে ২০টি জেলার পাসপোর্ট অফিসের নামেও ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের তথ্য পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। সে বছরের অন্তত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে প্রচার করা হয়। এসব ক্ষেত্রে ৯টি ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।

২০২২ সালে চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসের নামে এ সংক্রান্ত ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের প্রেক্ষিতে এটিকে ভুয়া উল্লেখ করে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক ও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক জানান, ‘পাসপোর্ট অফিসের নিয়োগ আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। যেখানে নিয়োগের যাবতীয় তথ্যসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার নাম ও স্বাক্ষর থাকবে। তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টারটি তৈরি করা হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইলের ফ্রন্ট।’

আক্ষেপের বিষয় হলো, এসব সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে আসার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়েই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হলেও কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না এসব প্রতারণা।

ডিজিটাল জালিয়াতির ফাঁদে পা দিয়ে অনেক চাকরিপ্রত্যাশীই আর্থিক প্রতারণার পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই প্রতারকদের হাতে দিয়ে দিচ্ছেন। এতে ব্ল্যাকমেইল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। 

এজন্য যে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নজরে আসার পর শুরুতেই এটি আসল কি-না তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি।

অমিয়/