বিশেষ কোনো পরীক্ষা এলেই তা টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক কিছু প্রতারক নেমে পড়েন প্রশ্নপত্র ফাঁসের মিশনে। এটা চাকরি হোক বা একাডেমিক- সবকিছুতেই ফাঁস করা চাই প্রশ্নপত্র। আর বেশিভাগ ক্ষেত্রেই এই ‘ফাঁস’ কথাটি গুজব। কিন্তু এই প্রশ্নফাঁস বিষয়টি যে কোনো সহজ কাজ নয়, এটা অনেকেরই বোধগম্য নয়।
তবে, প্রশ্নফাঁস বর্তমানে আলোচিত একটি বিষয়। বিশেষ করে পিএসসির প্রশ্নফাঁস নিয়ে ঘটে যাচ্ছে তুলকালাম কাণ্ড। যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, এই বিষয়টি বহুদিন ধরেই একটি সংঘবদ্ধ চক্র অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চালিয়ে আসছে। আর এই চক্রে যুক্ত রয়েছে বড় বড় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গাড়িচালক ও গ্যারেজকর্মীও।
বর্তমানে প্রশাসন এই প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি নিয়ে খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যার ফলে এটি খুবই দুরূহ একটি বিষয়। তার পরও সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা এবং চলমান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়েছে।
গেল ১২ ও ১৩ জুলাই দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষা নিয়ে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকেই প্রশ্নের ছবি ও সমাধানসংবলিত পোস্ট পাওয়া যায়।
এটি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানার। সংস্থাটি অন্তত ৫টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গণিত প্রশ্নের প্রথম পৃষ্ঠার ছবিসহ পোস্টের খোঁজ পেয়েছে। যারা এগুলোকে এনটিআরসিএর প্রশ্ন বলে দাবি করছে। এই পোস্টগুলো ৩ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত দেওয়া হয়।
এদিকে গত ৩০ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়েও একই অ্যাকাউন্টগুলোসহ একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্নফাঁসের দাবি করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা এবং এইচএসসির প্রশ্ন আগেই ফাঁস হয়েছে দাবিতে ফেসবুকে যে পোস্টগুলো করা হয়েছে সেগুলোর দাবি সঠিক নয়। পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নের ছবি ব্যতীত পোস্ট করে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওই পোস্ট সম্পাদনা করে প্রশ্নের ছবিটি যুক্ত করে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নসংবলিত পোস্টগুলোর এডিট হিস্ট্রি যাচাই করে দেখা যায়, ৩ জুলাই এইচএসসির প্রশ্নবিষয়ক পোস্ট করার পর পরে ১২ জুলাই নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ২টা ৫৯ মিনিটে ওই পোস্টে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
একই কায়দায় পরের দিন (১৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিবন্ধনের কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের দাবিও প্রচার করা হয়েছে। এই পোস্টের এডিট হিস্ট্রি যাচাই করে দেখা যায়, ১২ জুলাই বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে প্রশ্নফাঁস হয়েছে দাবি করে পোস্ট করার পর পরবর্তী সময়ে নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দুপুর ৩টা ২৪ মিনিটে ওই পোস্টে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবিটি যুক্ত করা হয়।
এ সংক্রান্ত দাবির সবগুলো পোস্টেই একই প্রতারণার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার। যে পাঁচটি অ্যাকাউন্ট থেকে এই দাবি ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে সেসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং Solaiman Chowdhury নামের অ্যাকাউন্টে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে এক ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে Rafiqul Islam Khan, Engr Nazmul Sarkar এবং ইঞ্জি. নাজমুল সরকার নামের তিনটি অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার উপ-প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েসের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইমরুল কায়েস নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সতর্কবার্তা দিয়ে জানিয়েছেন, “আমার ছবি ব্যবহার করে ফেক আইডি খোলা হয়েছে; ইতোমধ্যে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি।”
অন্যদিকে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের দাবিতে করা পোস্টগুলোও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বা এইচএসসির প্রশ্নফাঁস হওয়ার কোনো তথ্য গণমাধ্যমে আসেনি।
শিক্ষক নিবন্ধন ও এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্নের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দাবিগুলো সঠিক নয়। আগেও একাধিকবার একই কায়দায় বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের দাবি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, শিক্ষক নিবন্ধন ও এইচএসসির প্রশ্নফাঁসের দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টগুলো মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক। এসব প্রতারণা থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।
অমিয়/