ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ১৫ মাস ধরে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস-পার্শ্ববর্তী হোটেলের মানহীন খাবার খেয়ে প্রায়ই অনেকে অসুস্থ হচ্ছেন। এ ছাড়া খাবারের পেছনে বাড়তি খরচ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে অর্থকষ্টে ভুগতে হচ্ছে। টাকা বাঁচাতে তুলনামূলক কম দামের খাবার খাওয়ায় অনেকে পুষ্টির চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্যাফেটেরিয়া সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেঁধে দেওয়া দামে খাবার বিক্রি করতে গিয়ে তাদেরকে লোকসান গুনতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে তারা ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন। তবে ভর্তুকি পাওয়া গেলে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। যদিও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ভর্তুকি দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ক্যাফেটেরিয়া চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। এর আঁচ লাগে ইবি ক্যাফেটেরিয়াতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাবারের দাম আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ওই দামে খাবার বিক্রি করতে গিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজারকে টানা লোকসান গুনতে হয়। বাধ্য হয়ে তখনকার ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম কলম ২০২৩ সালের ১২ মার্চ ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ করে দেন। পাঁচ মাস পর ম্যানেজার রাজিব মণ্ডলের হাত ধরে ক্যাফেটেরিয়া চালু হলেও মাস পেরোনোর আগেই তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের কম দামে খাবার খাওয়ার শেষ ভরসার জায়গাটি এখন পর্যন্ত তালাবদ্ধ রয়েছে। এলোমেলো চেয়ার-টেবিলের ওপর পড়েছে ধুলার আস্তর।
কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সবুজ হোসেন হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ভালো খাবারের জন্য শিক্ষার্থীদের অধিকারের জায়গা ক্যাফেটেরিয়া। অথচ আমাদের ক্যাফেটেরিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। বাধ্য হয়ে আমরা হল ডাইনিং ও বাইরের মানহীন খাবার খেয়ে দিন পার করছি। দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিন ধরে ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকে কি-না আমার জানা নেই।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাবিহা বুশরা বলেন, ‘ক্যাম্পাসের অন্য জায়গায় ভালো খাবার পাওয়া যায় না। ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে আমাদের হল ক্যান্টিন ও দোকানের মানহীন খাবার খেতে হয়। প্রায়ই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। শরীরে পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হয় না। পড়াশোনায় এর প্রভাব পড়ে। অথচ ১৫ মাস ধরে ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ। আমরা মানসম্মত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষার ফাঁকে এখান থেকে মানসম্মত খাবার খেতে পারতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকায় তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তাদের এখন বাইরের হোটেল থেকে অতিরিক্ত দামে খাবার কিনতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
ক্যাফেটেরিয়ার সাবেক ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম কলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি) থেকে খাবারের দাম অনেক আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই দামে খাবার বিক্রি করা সম্ভব না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্যাফেটেরিয়া ছেড়ে দিতে হয়। এতে আমাদের নিজস্বতা বলে কিছু থাকে না। ক্যাফেটেরিয়া চালানোর জন্য কোনো ভর্তুকিও দেওয়া হয় না।
টিএসসিসির পরিচালক চাইলেই এটি চালু হওয়া সম্ভব।’ প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকি পেলে ক্যাফেটেরিয়া চালানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌফিক এলাহী খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন। অথচ ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা হলসহ বাইরের যে খাবারগুলো খাচ্ছেন তাতে তাদের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। মানসম্মত খাবারের অভাবে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে তারা লেখাপড়ায় শতভাগ মনোনিবেশ করতে পারছেন না।’
এ বিষয়ে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. মহববত হোসেন বলেন, ‘এখনো টিএসসিসির পরিচালকের দায়িত্ব হস্তান্তর হয়নি। আমার কার্যক্রম শুরু হলে প্রথম কাজ হবে মানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য পুনরায় ক্যাফেটেরিয়া চালু করা।’
টিএসসিসির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়ার জন্য কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না। যারা চালানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তারা লাভের মুখ দেখতে না পাওয়ার কথা জানিয়ে ক্যাফেটেরিয়া চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।’