বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন এক বুক স্বপ্ন নিয়ে নবীনদের পদচারণা শুরু হয়। হেসে-খেলে বছর পার হওয়ার পরই দৃষ্টিকোণ, প্রখরতা এবং শিক্ষাগুরুদের কাছে ভিন্ন পরিচয়ে ধরা দেন স্নাতক পর্যায়ে থাকা প্রতিটি শিক্ষার্থী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্তত তেমনই। স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীরই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্দিষ্ট হয়। বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বাউন্ডুলে হওয়ার ঘটনা অহরহ। এর মধ্যে যারা শিক্ষাগুরুদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সময়ের সঠিক ব্যবহার করে এগিয়ে চলেন, পরবর্তী সময়ে তারাই ছুঁতে পারেন সাফল্যের চূড়া। তাদের বলা যেতে পারে তীরের খোঁজে অচিন দেশের নাবিক যেমন। কথা হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে, যিনি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে হয়েছেন সেরা। সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পেয়েছেন সফলতা। এ মেধাবীর গল্প লিখেছেন আহমেদ ইউসুফ
‘আমার সব অর্জন কিংবা ভালো ফলের জন্য বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ বাবা কখনো আমাকে নিরুৎসাহিত করতেন না। বরং যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি একটা কথাই বলতেন, এগিয়ে যাও। তুমি পারবে, আমিও এগিয়েছি।’ এভাবেই বাবার অনুপ্রেরণার গল্প জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা আশরাফুল ইসলাম।
২০১৭-১৮ সেশনের এই গ্র্যাজুয়েট স্নাতকে ৩.৭৮ এবং স্নাতকোত্তরে পেয়েছেন সিজিপিএ ৩.৮০। তিনি জানান, ‘আমার স্বপ্ন হলো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরি করা। এই স্বপ্নটা বাবার জন্যই। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তত বেশি গ্রহণ করতে পারেননি। তবে আমার স্বপ্নই যেন তার স্বপ্ন। তার একটাই কথা, আমাকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে চাকরি করতে হবে। বাবার দৃঢ়বিশ্বাস, ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করব। আমিও তাই বিশ্বাস করি।’
এই মেধাবী শিক্ষার্থী জানান, ‘প্রতিটি মানুষেরই স্বপ্ন থাকে। আমারও রয়েছে। স্বপ্নের জন্য পরিশ্রম করলে সবারই সফলতা আসে।’
উত্থান এবং পতন যেন ছন্দের মতোই। অর্থাৎ জোয়ার এলেই ভাটার পথ সুগম হয়। আশরাফুল জানান, সফলতার পেছনের গল্পের সেই ছন্দের কথা। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরে চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত আসতে অনেকগুলো বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলের জন্য প্রথম বর্ষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি প্রথম বর্ষে এসেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হই। একই সঙ্গে অ্যাপেনডিসাইটিসের একটি অপারেশন করতে হয়। সে সময় বন্ধু এবং শিক্ষকদের সহায়তা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। এর বাইরে শুরু থেকেই আমার পরিবার একটা কথাই বলত, ‘তুমি পারবে।’ বিষয়টি আমার আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর ভালো করার জন্য আমি বলব ভালো বন্ধু নির্বাচন অনেক জরুরি।'
খারাপ ফলের নেপথ্যের কারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, ফল ভালো না করার অন্যতম কারণ হলো, সঠিক পরিকল্পনা না থাকা, অনাগ্রহ, আত্মবিশ্বাস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব। আবার নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে অসচেতন হলে কিংবা শিক্ষকের লেকচার মনোযোগ দিয়ে না শোনা খারাপ ফলের অন্যতম কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সিজিপির গুরুত্ব বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘সিজিপিএ কতটা জরুরি সেটা যখন একজন শিক্ষার্থী কোনো প্রতিযোগিতা, ভালো প্রাইভেট ফার্ম কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন করেন, তখন বোঝা যায়। কারণ এসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রথমেই একজন প্রার্থীর সিজিপিএ দেখে বিবেচনা করে। এটা ফার্স্ট ইম্প্রেশনের মতো। কাজেই এটাকে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। সিজিপিএ ভালো থাকলে কর্তৃপক্ষ ধরেই নেয় যে, এই প্রার্থী চার বছরের স্নাতক কিংবা এক থেকে দেড় বছরের স্নাতকোত্তরে নিয়মিত তার ফল ভালো রেখেছেন। অর্থাৎ সে সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করতে জানে। এটা আপনাকে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় অনেক দূর এগিয়ে রাখবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তবে কারও যদি সিজিপিএ খারাপ হয়ে যায়, কিছু করার নেই। সেক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় থাকে। এক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটি, জিআরইর মতো কাজগুলোয় গুরুত্ব দিলে ভালো করা সম্ভব। আমার মনে হয়, সব ধরনের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে সময় দেওয়া উচিত নয়। আপনাকে বাছাই করতে হবে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
নিজের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে দুটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তরুণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আদান-প্রদান করছি। এ ছাড়া কয়েকটি গবেষণা কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। প্রত্যাশা রয়েছে, শিগগিরই বাইরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসব। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে এনরোল করেছি, কিছু জটিলতার কারণে যেতে পারছি না। আশা করছি ২০২৫ সালের সামারে যেতে পারব।’
হাসান