![ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ, দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা](uploads/2023/12/09/1702093294.Onion.jpg)
ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজার আবারও অস্থির হয়ে পড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৩ টাকা। অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ঠেকেছে ১১০ টাকায়। এদিন চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার বন্ধ থাকলেও বহদ্দারহাটসহ অন্যান্য বাজারের ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দাম নিচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৮ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অভ্যন্তরীণ প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকার খুচরা বিক্রেতা বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মো. আজিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত বুধবার দোকানের জন্য কেজি প্রতি ১০০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি। বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ আনতে গেলে দাম বেড়ে তা হয়ে যায় ১০৫ টাকা। সেই পেঁয়াজ আজ (গতকাল) খুচরায় বিক্রি করছি ১১০ টাকায়। বহদ্দারহাট পাইকারি দোকান থেকে পেঁয়াজ আনতে গেলে দাম বলেছে ১৪৫ টাকা। তাই পেঁয়াজ না কিনেই ফিরে এসেছি।’
চাক্তাইয়ের মেসার্স আফরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আলিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুক্রবার বাজার বন্ধ থাকলেও কিছু দোকান খোলা ছিল। যারা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। চীন, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসছে। আশা করছি, দাম আর খুব একটা বাড়বে না।’
এদিকে গতকাল খাতুনগঞ্জে পাইকারি দোকানগুলো বন্ধ থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এদিন তা ১০৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাবে দাম বেড়েছে বলে জানান তারা।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডলারসংকটের কারণে ঠিকমতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। এ কারণে ভারতে থেকে পেঁয়াজের আমদানি কম। তাই দামটা বেড়েছে। আমাদের দেশীয় পেঁয়াজ বের হলে তখন দাম কমে যাবে।’
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। আমাদের এখানে এখন কোনো পেঁয়াজ নেই। এর প্রভাব আমাদের দেশীয় পেঁয়াজের ওপর প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি আমাদের দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ আসতে আরও সময় লাগবে।’ সব মিলিয়ে বর্তমানে বাজারে থাকা পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাজারে তো এখন পেঁয়াজ আছে। রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা তো দিল কালকে। কাজেই পেঁয়াজের দাম তো এখন বাড়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা অজুহাত পেয়েছেন, তাই দামটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএফটি) এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ৮ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।
এই নোটিশ জারির আগে পেঁয়াজের গাড়ি লোড হয়ে থাকলে সেটি সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছে যাবে। অথবা পেঁয়াজভর্তি গাড়ি বা জাহাজ ভারতীয় পোর্ট অতিক্রম করলে সেটি এই নির্দেশনার আওতায় পড়বে না। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো দেশের সরকারের অনুরোধে ভারত সরকার চাইলে পেঁয়াজ রপ্তানির নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবে।