![বৃষ্টিতে পাহাড়ধস, বন্যার শঙ্কা](uploads/2024/07/02/Bandarban-1719891189.jpg)
বান্দরবানে গত শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধস ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে বান্দরবান-রুমা রোডের ধলিয়ানপাড়া এবং বারো মাইলের মাঝামাঝি জায়গার প্রধান সড়ক পাহাড়ধসে মাটি পড়ে। এতে বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা মাটি সরানোর ফলে ছোট গাড়ি চলাচল করতে পারছে। সড়কটি সচল করতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বান্দরবান জেলা ও রুমা উপজেলার দুটি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে বান্দরবান-রুমা সড়কের দুটি জায়গায়। এ ছাড়া রুমার সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। তবে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে সেনাবাহিনীর ২৬ ইসিবির সদস্য এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা কাজ করছেন। শিগগিরই সড়কটি আবার সচল করা সম্ভব হবে।
স্থানীয়রা জানান, জেলার ৭টি উপজেলাসহ জেলা শহরের শহরের টাংকি পাহাড়, বালাঘাটা, কালাঘাটা, ইসলামপুর, হাফেজঘোনা, বনরূপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কয়েক লাখ জনগণের বসবাস। টানা বৃষ্টি হলেই এসব এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এই পাহাড়ধসে গত ৫ বছরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬৩ জনের।
এর মধ্যে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট সদর উপজেলার কালাঘাটা, টংকাবতি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও থানচিতে ১০ জন নিহত হয়েছিল। এ ছাড়া গত মাসের ২৯ জুন নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলী এলাকায় কৃষিকাজ করতে গিয়ে আবু বক্কর (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড়ধসে প্রাণনাশের ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়েও মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার মাতামুহুরী ও সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ায় ও বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পৌর মেয়র শামশুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রচার চালাতে মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় শহরে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৭২ ঘণ্টা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বমোট ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী জানান, সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। টানা আরও দুই-তিন দিন বৃষ্টিপাত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন জানান, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে জেলার ৭ উপজেলায় ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।