প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভোট ছাড়াই চলছে মেহেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। আদালতের নির্দেশের পরেও হয়নি নির্বাচন। ২০১২ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হলে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর আর আলোর মুখ দেখেনি নির্বাচন ব্যবস্থা।
আহ্বায়ক কমিটিই বর্তমানে জেলার ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবকত্ব করছে। জেলার ক্লাব কর্মকর্তাদের দাবি, নির্বাচিত কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গন। ফলে প্রতিভা বিকাশ করার সুযোগ পাচ্ছেন না অনেক খেলোয়াড়। কেউ কেউ হতাশায় ছেড়ে দিচ্ছেন খেলাধুলা।
জেলা প্রশাসন বলছে, মামলা থাকায় নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বাদী জানিয়েছেন, মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে।
মাঠে দেখা যায়, স্টেডিয়ামে জন্মেছে ঘাস আর আগাছা। এক সময় খেলোয়াড় ও দর্শকদের পদচারণায় মুখোরিত থাকতো স্টেডিয়ামটি। কিন্তু এখন বছরের বেশির ভাগ সময় ফাঁকা পড়ে থাকে এটি। নিয়মিত আয়োজন হয় না কোনো লিগ। ফলে দর্শক গ্যালারিতে জমেছে ময়লা-আবর্জনা। খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র জেলা স্টেডিয়ামের এমন অবস্থার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভিভাবক না থাকাকে দায়ী করছেন খেলোয়াড়, ক্লাব কর্তা এবং ক্রীড়াপ্রেমীরা।
এ মাঠ থেকেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ চূড়ায় জায়গা করে নিয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস। ঢাকা লিগ খেলেছেন অনেক ফুটবলার ও ক্রিকেটার। তবে এখন তরুণ খেলোয়াড়দের মুখে হতাশার ছাপ দেখা যায়।
ক্রিকেটার কিরণ বলেন, ‘আমরা খেলতে চাই। কিন্তু উদ্যোগ নেওয়ার মানুষ নেই। দীর্ঘদিন লিগের ব্যবস্থা না করার ফলে এখন ক্রিকেটাররা জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে জেলার খেলাধুলার পরিবেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’
ফুটবলার সেলিম বলেন, ‘মেহেরপুরের ফুটবল এখন ধ্বংসের পথে। বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম খেলা বাদ দিয়ে যুবসমাজ নেশাকে বেছে নিচ্ছেন। এর জন্য বেশি বেশি টুর্নামেন্ট খেলার আয়োজন না করাই দায়ী।’
এ দিকে খেলা না হওয়ার মূল কারণ হিসেবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভোট না হওয়াকে দায়ী করছেন এলাকার ক্রীড়াপ্রেমীরা। ২০১২ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মামলা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় নির্বাচন। এরপর বাদীও মামলা তুলে নেন। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালত নির্বাচনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হয়নি কোনো নির্বাচন। নির্বাচনের লক্ষ্যে ক্রীড়া অনুরাগীদের ব্যানারে সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়রা কর্মসূচি পালন করলেও কোনো কাজ হয়নি। সেসময়ে মামলার বাদী ক্লাব কর্তা লিটন জানান নির্বাচন বন্ধের কারণ।
তিনি বলেন, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ না দেওয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। কিন্তু সদস্যপদ দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হলে মামলা তুলে নিয়েছি। মামলা তুলে নিলেও ভোটের দেখা পাচ্ছি না।’
আরেক ক্লাব কর্তা রাজীব বলেন, ‘জেলার অধিকাংশ স্পোর্টস ক্লাবগুলো এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। খেলার অবস্থা বেহাল এবং খেলোয়াড়দের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভিভাবকহীনতাই দায়ী।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহ উদ্দিন আবলু বলেন, ‘আমি ভোটের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি। কিন্তু কোনো ফল পায়নি। সর্বশেষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশনা দিলেও তা মানা হয়নি।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জানান, মামলার সর্বশেষ তথ্য তার জানা নেই। তাই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে শত বাধার পরেও দ্রুত জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন হবে, আবারও প্রাণ ফিরে পাবে জেলার মাঠগুলো, এমনটাই মনে করেন জেলার খেলোয়াড়, ক্লাব কর্মকর্তা ও ক্রীড়াপ্রেমীরা।