![ঈশ্বরদীতে জমে উঠেছে কাঁঠালের হাট](uploads/2024/07/02/Ishwardi-Jackfruits-1719898343.jpg)
লিচুর পর এবার আরেক পুষ্টিকর, সুস্বাদু ফল কাঁঠালে ঈশ্বরদীর গ্রামীণ হাটবাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর বোর্ডঘর পাইকারি কাঁঠাল ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কাঁঠাল কেনাবেচা।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা শত শত কাঁঠাল কিনে তা ট্রাকে বোঝাই করে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য। বোর্ডঘর ছাড়াও উপজেলার আওতাপাড়া, শিমুলতলা, বড়ইচারা, দাশুড়িয়ার হাটবাজারে প্রতিদিন প্রচুর কাঁঠাল কেনাবেচা হচ্ছে। ঢাকা, খুলনা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, সিলেট, কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা কাঁঠাল কিনতে এই জয়নগর বোর্ডঘর এলাকায় আসছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকাসহ উপজেলার সাত ইউনিয়নেই প্রচুর কাঁঠাল গাছ রয়েছে। কাঁঠাল গাছের বাগানও রয়েছে কোনো কোনো কৃষকের। ঈশ্বরদীতে কাঁঠাল গাছের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। উপজেলার সাহাপুর ও সলিমপুর ইউনিয়নে কাঁঠালের আবাদ সবচেয়ে বেশি। উপজেলার ১৬০ হেক্টর জমিতে এ বছর কাঁঠালের আবাদ হয়েছে।
জানা যায়, ঈশ্বরদীর কাঁঠাল দেশজুড়ে সমাদৃত। এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি ও সুস্বাদু। এখানে উৎপাদিত কাঁঠালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সলিমপুরের জয়নগর বোর্ডঘর। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত কাঁঠাল বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয় এই বোর্ডঘরে। এখানে দুই যুগের বেশি সময় ধরে পাইকারি কাঁঠাল কেনাবেচা হয়ে আসছে। উপজেলার বাইরে পাবনা, আটঘরিয়ার টেবুনিয়া, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকেও এ বোর্ডঘরে কাঁঠাল বিক্রি করতে আসেন কৃষকরা।
বোর্ডঘর ছাড়াও উপজেলার সাহাপুরের আওতাপাড়া হাট, বড়ইচারা, দাশুড়িয়া, মুলাডুলিতে কাঁঠাল কেনাবেচা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারদের কাঁঠাল কিনে দেওয়ার জন্য জয়নগর বোর্ডঘর এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি আড়ত। এখানকার খোলা জায়গায় ট্রাক, ভ্যান, পিকআপ, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কাঁঠাল নিয়ে আসা হয়। অস্থায়ী আড়তে কাঁঠাল কিনে জড়ো করে রাখা হয় পাইকারদের জন্য।
ছোট, মাঝারি থেকে বড় ভ্যানে কাঁঠাল বেঁধে বোর্ডঘরে এনেছেন কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ এনেছেন নছিমনে করে। সাহাপুরের জয়নাল প্রামাণিক নামে এক কৃষক ভ্যানে করে আনা ছোট-বড় সাইজের ১৭টি কাঁঠাল ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন আড়তদারের কাছে। খুলনার মজিবর রহমান নামের এক ফল ব্যবসায়ী ছোট-বড় সাইজের মিলে ২৫টি কাঁঠাল কিনেছেন। গড়ে প্রতিটি ৫৫ টাকা করে ২৫টি কাঁঠালের দাম পড়েছে ১ হাজার ৩৭৫ টাকা।
তিনি জানান, এখান থেকে একদিনে দুই হাজারের বেশি কাঁঠাল কেনা হয়। পরে তিনি খুলনায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করবেন। খুলনায় কাঁঠালের দাম বেশি, এখান থেকে কাঁঠাল কিনে বিক্রি করলে তার লাভ হবে।
বোর্ডঘরের আড়তদার আবুর আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই যুগের বেশি সময় ধরে জয়নগরের এই বোর্ডঘর মৌসুমের কাঁঠাল বিক্রির জন্য পরিচিত। কাঁঠালের মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল বিক্রি হয় এখানে। জুন মাসের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত এই বোর্ডঘর এলাকায় কাঁঠাল ব্যবসা বেচাকেনা হয়ে থাকে। আকার ভেদে ৫০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হয়ে থাকে। এখান থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল পাইকাররা কিনে অন্য জায়গায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ‘ঈশ্বরদীর মাটিতে কাঁঠাল গাছ দ্রুত বেড়ে উঠে। পৌর এলাকা ও উপজেলার সাত ইউনিয়নের ১৫৮ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল গাছ রয়েছে। দেশের অন্য এলাকার তুলনায় ঈশ্বরদীর কাঁঠাল অত্যান্ত সুস্বাদু। এখানকার কৃষকরা কাঁঠাল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।’