![সড়কের বাঁকে বাঁকে মৃত্যুঝুঁকি!](uploads/2024/02/12/1707716282.Khulna-Road-Story-111222.jpg)
খুলনার জিরোপয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়ার চুকনগর বাজারের দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৯১টি। প্রাণ গেছে ৫৭ জনের। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই চার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ছয়জন। শুধু এই সড়কই নয়, খুলনা জেলার প্রায় সব আঞ্চলিক সড়কের চিত্র প্রায় একই রকম।
দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি এসব সড়কে চলাচল করে ধীরগতির থ্রি-হুইলার। সড়কগুলোর বিভিন্ন অংশে যুক্ত হয়েছে প্রায় শতাধিক লিংকরোড (সংযোগ সড়ক), আছে বিপদজনক বাঁক ও উঁচু-নিচু খাদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংযোগ সড়কের গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে মূল সড়কে উঠলে দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া খাদের কারণে প্রায়ই গাড়ি উল্টে যায়। যাত্রীবাহী বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণেও ঘটছে প্রাণহানি। তারা সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এরই মধ্যে মহাসড়কের বিপদজনক বাঁক চিহ্নিত করে গতি নিরোধক তৈরি ও সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। খুলনার জিরোপয়েন্টে দুর্ঘটনা এড়াতে রোড ডিভাইডার (সড়ক বিভাজন) নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
জানা যায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়া আঙ্গারদহা এলাকায় ইট-বালুবাহী ট্রাক ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে পাঁচজন মারা যান।। দুর্ঘটনায় আহত আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘ট্রাক থেকে ইট আনলোড করে চালক ট্রাকটি চালিয়ে ডুমুরিয়া কুলবাড়িয়া গ্রামে এমএসবি ব্রিকসে আসছিলেন। পথে আঙ্গারদহা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে খুলনার জিরোপয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়ার চুকনগর বাজার পর্যন্ত দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। এই পথে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত সড়কে এই স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৯১টি। এতে ৫৭ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৪৩ জন। এরমধ্যে গত তিন বছরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৬৩টি। এতে ৩৯১ জন আহত ও ১৯ জন নিহত হয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত চারটি দুর্ঘটনায় ২৬ জন আহত ও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার মূল কারণ সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলাচল ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন। একই সড়কে দ্রুতগামী যানবাহনের পাশাপাশি ধীরগতির ইজিবাইক-মাহেন্দ্র থ্রি-হুইলার চলাচল করে। এতে সড়কটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
কেন এত দুর্ঘটনা?
খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক সড়কটি আগে ২০ ফুট প্রস্থ ছিল। যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি ৩৫ ফুট প্রস্থ করা হয়েছে। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। চালকরা বলছেন, সড়কে কয়েকটি বিপদজনক বাঁক ও গতিরোধক না থাকায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। এসব বাঁকের অপরপাশ থেকে কি ধরনের যানবাহন আসছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। আবার নিয়ম না মেনে অনেকে এই স্থানটিই ওভারটেকিংয়ের জন্য বেছে নেয়। যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা, পেছনের বাসকে সামনে আসতে না দেওয়ার প্রতিযোগিতার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে অনেক স্থানে উঁচু-নিচু বিপদজনক খাদ তৈরি হয়েছে। এসব খাদে পড়লে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যখন তখন উল্টে যাচ্ছে যানবাহন। সম্প্রতি এ ধরনের একটি দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে গেলে ২৬ জন আহত হন।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব জানান, মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত শতাধিক লিংকরোড বা পকেট রোড রয়েছে। এসব রোড দিয়ে ছোট-বড় যানবাহন যখন মহাসড়কে ওঠে তখন অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া গতি, থ্রি-হুইলার গাড়ি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও চালকের অসচেতনতায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।
সড়ক বিভাগ ও প্রশাসনের বক্তব্য
দুর্ঘটনা কমাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অতিরিক্ত বোঝাই, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় থ্রি-হুইলারের মালিক ও চালকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অনুমোদনহীন নছিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ট্রলি, ইজিবাইক সড়কে চলাচল করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপসহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান জানান, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে ডুমুরিয়া কাঁঠালতলা, বানিয়াখালি মোড়সহ বিপদজনক বাঁকে সতর্কীকরণ বার্তাসংবলিত বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন দেওয়া হয়েছে।
সওজ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, সড়কের উঁচু-নিচু কিছু স্থানে সংস্কার করা হয়েছে। বাকি স্থানগুলোতে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিপদজনক তিনটি বাঁক সোজা করা হয়েছে। এরমধ্যে ডুমুরিয়ার কাঁঠালতলা, বানিয়াখালি মোড় ও গুটুদিয়ায় বিপদজনত বাঁকে দুর্ঘটনা বেশি হত। এই বাঁকগুলো সরলীকরণ করা হয়েছে। ঝুঁকি কমাতে খুলনার জিরোপয়েন্টে ডিভাইডার নির্মাণের কাজ চলছে। পাশাপাশি বিপদজনক স্থানগুলোতে সড়কের প্রস্থতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।