![কলাপাড়ায় বিক্রির সময় ট্রাকসহ ৪ টন সরকারি বই জব্দ](uploads/2024/02/13/1707806153.kolapara-boi-photo.jpg)
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চার টন সরকারি বই ফেরিওয়ালাদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করার সময় একটি ট্রাকসহ জব্দ করেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ।
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মহিপুর থানার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটলেও জনসম্মুখে আসে আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে।
জানা যায়, বইগুলো বিক্রি করেন মোয়াজ্জেমপুর ছালেহিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুবকর সিদ্দিক। সংবাদ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ট্রাকে থাকা প্রায় চার টন বই জব্দ করেন। যার বাজারমূল্য আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকা।
জানা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি, ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, ক্যারিয়ার শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চারুপাঠ, কৃষি শিক্ষা, আনন্দপাঠ, গার্হস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই বিক্রি করেছেন তিনি।
উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর সালেহিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একেএম আবুবকর সিদ্দিক ও বাংলার প্রভাষক হাসান রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গোপনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের সরকারি বিনামূল্যের বই কেজি দরে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দেন। পরে স্থানীয়রা ফেরিওয়ালাদের কাছে সরকারি বই দেখতে পেয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জবাবে তারা প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে বইগুলো কিনেছেন বলে জানান।
ফেরিওয়ালা কাওছার শেখ জানান, তিনি বইগুলো মোয়াজ্জেমপুর ছালেহিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে কিনেছেন। বইগুলোর গায়ে ‘২০২১ শিক্ষাবর্ষ’ ও ‘২০২২ শিক্ষাবর্ষ’ লেখা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মামুন বলেন, ‘‘আমরা সন্ধ্যার পরে মাদ্রাসার সামনে একটি ট্রাক ও কয়েকজন লোককে দেখতে পাই। বিষয়টি আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হলে আমরা স্থানীয় কয়েকজনকে খবর দিই। তারা বিষয়টি টের পেয়ে দ্রুত স্কুল মাঠ ত্যাগ করেন। আমরা পরবর্তী সময়ে এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে ট্রাকসহ তাদের আটক করি। সেখানে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এই স্কুল থেকে কিছু বই কিনেছি’। দেখতে চাইলে তারা উপস্থিত লোকজনের সামনে বইগুলো দেখান।”
সরকারি বই বিক্রির বিষয়ে অভিযুক্ত আবুবকর সিদ্দিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একা নই, স্কুলের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে রেজুলেশন করে পুরোনা বইগুলো বিক্রি করেছি।’
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা বিক্রি করা বইগুলো জব্দ করেছি। অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ বলেন, ‘সরকারি বই বিক্রি করার সময় একটি ট্রাক জব্দ করি। পরে ট্রাকসহ বইগুলো মহিপুর থানায় হস্তান্তর করেছি। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাতের আঁধারে বই বিক্রি করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে আমরা বইগুলো জব্দ করেছি। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে নিয়মিত মামলা করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা আইসিটি) মরিয়ম বেগম বলেন, তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বই বিক্রির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
হাসিবুর রহমান/জোবাইদা/অমিয়/