![কিশোরগঞ্জের চার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার](uploads/2024/02/25/1708841171.Kishoreganj.jpg)
কিশোরগঞ্জের ২৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩৭টি মাদ্রাসা ও ২০টি মাধ্যমিক স্কুলে নেই শহিদ মিনার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গাসংকট, অর্থনৈতিক অভাবসহ নানা জটিলতায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর ভাষাশহিদ স্মরণে ফুল দিতে ছুটতে হয় অন্যত্র।
কোনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ভাষাশহিদদের স্মরণে ফুল দিয়ে আসে।
কোনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহিদ মিনার নির্মাণের জায়গা। শহরের বেশির ভাগ স্কুলে জায়গাসংকটের কথা বলছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে তমালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শোলাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলে জায়গাসংকটের জন্য শহিদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাকি স্কুলগুলোতে জায়গাসংকট না থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার হাওর অধ্যুষিত অঞ্চল মিঠামইন উপজেলায় ৮০ ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো শহিদ মিনার নেই। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিতে যেতে হয় সদর উপজেলায়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৩২৮টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়ায় ১৯৪টি, কটিয়াদিতে ১১৯টি, হোসেনপুরে ১১০টি, করিমগঞ্জে ১২৫টি, ভৈরবে ৯১টি, কুলিয়ারচরে ৭৪টি, নিকলিতে ৬০টি, বাজিতপুরে ১১১টি, অষ্টগ্রামে ৮৩টি, মিঠামইনে ৭৫টি, ইটনায় ৭৩টি ও তাড়াইলে ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট মাদ্রাসা রয়েছে ১৪৫টি। কারিগরি স্কুলের সংখ্যা ১৭টি। উচ্চমাধ্যমিক/কলেজ রয়েছে ৪৫টি, স্কুল এবং কলেজ ২০টি ও জুনিয়র স্কুল রয়েছে ৪৫টি। এর মধ্যে ১৩৭টি মাদ্রাসা ও ২০টি মাধ্যমিক স্কুলে নেই শহিদ মিনার। বেশির ভাগ জুনিয়র স্কুল ও স্কুল অ্যান্ড কলেজে নেই শহিদ মিনার।
জেলা শহরের স্বনামধন্য ও প্রাচীন স্কুল সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয়। পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। ১৯৬৭ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্কুল প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও ভাষাশহিদ স্মরণে নেই শহিদ মিনার। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ফুল দিতে যেতে হয় গুরুদয়াল কলেজ প্রাঙ্গণে নির্মিত শহিদ মিনারে।
সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ে নাসিফা আফরিন জুঁই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিন বছরে তিনবারই অভিভাবক নিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দিতে গেছে। সে জানায়, স্কুল প্রাঙ্গণে যদি একটি শহিদ মিনার থাকত, তাহলে আর কষ্ট করে গুরুদয়াল কলেজে যেতে হতো না। স্কুলের সবাইকে নিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া যেত। শিশু বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী জুঁই চায়, তাদের স্কুলে একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করা হোক।
মো. ওয়াসি সরকারি আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ওয়াসির মা সাদিয়া আশরাফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘নির্দিষ্টসংখ্যক স্কাউট ছেলেমেয়েদের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ফুল দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় গুরুদয়াল কলেজ মাঠে। তবে ছোট বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আমরাই শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে যাই। স্কুলে শহিদ মিনার থাকলে হয়তো গুরুদয়াল কলেজের মাঠে ফুল দিতে যেতে হতো না। আমার বাচ্চা তো এ বছর পড়লেই শেষ। অন্য স্কুলে ভর্তি হবে সামনের বছর। তবে এই প্রাচীন স্কুলে এখনো শহিদ মিনার নির্মিত হয়নি, এটি দুঃখজনক। বাচ্চারা শহিদ মিনারের তাৎপর্য ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং জানবে- আমরা অভিভাবকরা তাই চাই। এ জন্য স্কুলে শহিদ মিনার নির্মাণ করা জরুরি। যেন সব বাচ্চা এই বাংলা ভাষাকে ভালোবাসে। মানসিকভাবে বাংলা ভাষার তাৎপর্য অনুধাবন ও ভাষার প্রতি সম্মানবোধ ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মজিব আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারিভাবে শহিদ মিনার নির্মাণে আমাদের কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয় না। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেসব স্কুলে শহিদ মিনার নেই, সেই স্কুলগুলোতে শহিদ মিনার নির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষানুরাগী বা এলাকার দানশীল কোনো ব্যক্তি যদি শহিদ মিনার নির্মাণে সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা আমাদের নিজস্ব তৎপরতায় সেই কাজ করতে চাই। এ বছর আমরা প্রত্যেকটি স্কুলে শহিদ মিনার নির্মাণ করার চেষ্টা করব।’