![পঞ্চগড়ে রাতের আঁধারে খেত থেকে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ](uploads/2024/03/05/1709634271.Tetulia_Onion.jpg)
অস্বস্তির বাজারে যখন বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, ঠিক সে সময়ে কৃষকের খেত থেকেই রাতের আঁধারে চুরি হচ্ছে পেঁয়াজ। এতে আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা। আর এই পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে খেতে রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন অনেকে।
আর্থিক স্বচ্ছলতা পেতে এবার পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকেছেন এ অঞ্চলের মানুষ। তবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলার মৌসুমে নতুন এ আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, রাতের অন্ধকারে খেত থেকেই চুরি হচ্ছে তাদের কষ্টের ফসল। প্রথমবারের মতো এমন কাণ্ড দেখে ইতোমধ্যে চুরি ঠেকাতে অনেকেই রাতে পাহাড়া দিচ্ছেন।
তারা বলছেন, রাতে তিন থেকে চার কাঠা জমিতে লাগানো পেঁয়াজ তুলে পাতাগুলো কেটে ফেলে রাখে চোরেরা। এক কাঠা জমিতে প্রায় আট থেকে ৯ মণ পেঁয়াজ হয়ে থাকে। ৮০ টাকা কেজি দরে বর্তমান নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এক কাঠা জমিতে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হয় বলে জানান তারা।
তা ছাড়া, রসুনের দামও অনেক বেশি। অনেকের পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুনও চুরি হয়েছে। অনেক কৃষক ধান বিক্রি করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন বলে জানান তারা। চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন আসল টাকাও নেই।
এই অবস্থায় অনেক কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, রাতে অনেকে পাহারা দিলেও বাড়তি ব্যায় মেটাতে পাহারাদার রাখার ব্যবস্থা করতে পারছেন না অধিকাংশ কৃষক। এ বিষয়ে প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অস্বস্তিতে রয়েছেন। রাতের অন্ধকারে কারা এসব চুরি করছেন তাদেরকে আইনে আওতায় আনা দুরুহ ব্যাপার মনে করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায, এ বছর জেলায় পাঁচ উপজেলায় মোট এক হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে উপজেলায় গত বছর পেঁয়াজের আবাদ হয়ে ছিল ১৮০ হেক্টর। চলতি বছরে ২১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডাক্তারপাড়া গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। মানুষের জমি জমা নিয়ে আমি কোনরকম কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি এক বিঘা জমির বর্গা নিয়ে তাতে আলু, রসুন ও পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পেঁয়াজ চাষ করেছি দুই কাঠার মতো। অনেক কষ্ট করে সেচ দিয়ে পেঁয়াজ বড় করেছি। ঘরে তুলবো পেঁয়াজ এমন সময় রাতের আধারে আমার খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি হয়েছে। এতে আমি বিপাকে পড়েছি।’
একই কথা বলেন ওই ইউনিয়নের ভদ্রেশ্বর ব্রম্মতোল গ্রামের কৃষক বিপ্লব কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘আমি ভাল জাতের পেঁয়াজের আবাদ করছিলাম। হঠাৎ রাতের আধারে আমার খেত থেকে পেঁয়াজ চুরি করে নিয়ে গেছে। সকালে খেতে গিয়ে দেখি পুরো খেত ফাঁকা। শুধু পড়ে আছে পেয়াজের গাছগুলো৷ যার এটা করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই প্রশাসনের কাছে।’
এ বিষয়ে কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক। তাই এবার পেঁয়াজের আবাদ করছি কিন্তু যেভাবে পেঁয়াজ চুরি হচ্ছে এতে আমি দুশ্চিন্তায় পড়েছি। রাতে কয়েক বার করে খেতে গিয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে। আমরা অনেকে আতঙ্কে আছি৷’
এদিকে এমন চুরি ঘটনায় বাজারের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন কৃষি বিভাগ। তবে চুরি ঠেকাতে কৃষকদের ফলন উত্তোলন পর্যন্ত মাঠ পরিদর্শনসহ সচেতন থাকার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজের বীজও বিনামূল্য দিয়েছি। দিন দিন এ উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ বাড়ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি উপজেলার ভজনপুর ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি অনেক দুঃখজনক। শুরু থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। যেহেতু এখন পেঁয়াজ তোলার সময় হয়েছে তাই কৃষকদের পেঁয়াজ খেতে বেড়া বাদ নেট দিয়ে ঘিরে রাখার পাশাপাশি নজরদারির বিষয়ে সচেতন ও পরামর্শ দিচ্ছি।
রনি মিয়াজী/জোবাইদা/অমিয়/