![ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক মরা গাছে মৃত্যুঝুঁকি](uploads/2024/03/27/1711514176.Dhamrai-Tree.jpg)
ধামরাইয়ের ওপর দিয়ে চেলে গেছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। রাজধানীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান সড়ক এটি। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। এ ছাড়া ধামরাই ও মানিকগঞ্জের স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র পথও এটি। কিন্তু ব্যস্ততম এই সড়কে সবাইকে চলতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে! রাস্তার দুপাশে মাথার ওপর ‘যমদূত’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৬০টি মরা গাছ। যেকোনো সময় সেগুলো কোনো গাড়ি বা পথচারীর মাথায় পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আতঙ্ক নিয়ে সবাই এই রাস্তা পার হন। একই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার আইঙ্গন এলাকায়। সেখানেও রয়েছে ৩০টি মরা গাছ।
স্থানীয়রা বলছেন, এই পথে চলতে গিয়ে তাদেরকে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। বিশেষ করে ঝড়-বাদলের সময় একটু বাতাস উঠলেই মনে হয় ‘এই বুঝি ভেঙে পড়বে’। দ্রত সময়ের মধ্যে তারা গাছগুলো অপসারনের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে বয়স বাড়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনকে গাছের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দাবি করেছে বন বিভাগ। আর সড়ক বিভাগ বলছে, এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ইসলামপুর থেকে বারবারিয়া পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশে ১৬০টির মতো ছোট-বড় মরা গাছ রয়েছে। এ ছাড়া ধামরাই বাজার থেকে কালামপুর যাওয়ার আঞ্চলিক সড়কের আইঙ্গন এলাকায় রয়েছে ৩০টি মরা গাছ। এগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
এলাকাবাসী বলছেন, এই মরা গাছগুলো নিয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। যেকোনো সময় দৈত্যাকার গাছগুলো মানুষের জীবনহানির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এর আগে উপজেলার কেলিয়া খাতরা এলাকায় মরা গাছ রাস্তায় পড়ে দীর্ঘ যানজটের কারণ হয়েছিল। এ ছাড়া ২০২০ সালের মার্চ মাসে বয়স্কভাতা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গাছচাপায় মারা গিয়েছিলেন পাঁচ ইজিবাইক যাত্রী। উপজেলার কাওয়ালীপাড়া-বালিয়া আঞ্চলিক সড়কে ঘটেছিল এ দুর্ঘটনা।
আতঙ্কের কথা জানাতে গিয়ে পথচারী আমিনুর রহমান বলেন, ‘সব সময় এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু ঝড় বৃষ্টির গাছ ভেঙে মাথায় পড়ার ভয়ে থাকি। প্রশাসন যদি মরা গাছগুলো কেটে সরিয়ে ফেলত, তাহলে দুর্ঘটনার ভয় আর থাকত না।’
ইসমাইল হোসেন নামে এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘মরা গাছগুলোর পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার গেছে। রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটিও। এর আগে একাধিকবার গাছ ভেঙে পড়েছে। বৃষ্টির সময় বাতাস উঠলে আমরা খুব ভয়ে ভয়ে ইজিবাইক চালাই। একদিকে মরা গাছ, অন্যদিকে বিদ্যুতের লাইন, সব মিলিয়ে ওই পথে চললে আমাদের মধ্যে মৃত্যু আতঙ্ক বিরাজ করে।’
মেহেদী হাসান নিরব নামে এক তরুণ বলেন, ‘মরা গাছের কারণে সচরাচর মোটরসাইকেল নিয়ে আইঙ্গন এলাকায় যাওয়া হয় না। বিশেষ প্রয়োজনে গেলেও মনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।’
কী কারণে মহাসড়কের পাশের গাছগুলো মারা গেছে জানতে চাইলে উপজেলা বন কর্মকর্তা মোতালিব আল মুমিন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সময় গাছগুলো মারা গেছে।’ মহাসড়কের এক পাশের গাছ মারা গেল, কিন্তু অপরপাশের গাছগুলোর কিছুই হয়নি। কেন এমনটি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই। তবে কিছু গাছের অনেক বয়স হয়েছে। এ কারণেও এমনটি হতে পারে।’
সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (নয়ারহাট শাখা) দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশে অনেক মরা গাছ রয়েছে। অনেকে এগুলোকে নিয়ে আতঙ্কে আছেন। গাছগুলো অপসারণের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। তখন আতঙ্ক কেটে যাবে।