শেরপুরে অজানা কারণে প্রায় চার বছর ধরে দুই শতাধিক দুগ্ধদানকারী মায়ের ‘পুষ্টি ভাতা’ বন্ধ হয়ে আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও পৌরসভায় মাসের পর মাস ঘুরাঘুরি করেও তারা ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও জানেন না কেন তাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে জেলা মহিলা অধিদপ্তর বলছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আমাদের এখানে আর কিছু করার নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মায়েদের স্বাস্থ্য এবং শিশুর পুষ্টিসেবা নিশ্চিত করতে ‘কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা’ কর্মসূচি চালু করে সরকার, যা ‘পুষ্টি ভাতা’ নামে পরিচিত। এ কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য শেরপুর পৌর এলাকায় ১ হাজার ১০০ প্রসূতি নারীকে উপকারভোগী হিসেবে বাছাই করা হয়। পরবর্তী সময়ে তারা তিন মাস পরপর ২ হাজার ৪০০ টাকা করে ভাতা পেতে শুরু করেন।
এই ভাতা ৩৬ মাস পর্যন্ত পাওয়ার কথা থাকলেও ১ হাজার ১০০ নারীর মধ্যে ২০০ জন বিড়ম্বনায় পড়েন। কেউ ভাতার টাকা পেয়েছেন ১২ মাস, কেউবা আবার পেয়েছেন মাত্র ১৫ মাস। অথচ শিশুর জন্ম থেকে ৩৬ মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মায়ের ২৮ হাজার ৮০০ টাকা হারে ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০০ জনের ভাতা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ওই মায়েরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও পৌরসভায় একাধিকবার ঘুরাঘুরি করার পর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেও কোনো ফল পাননি। ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মায়েদের বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই ভাতা চালুর দাবি তাদের।
পৌর শহরের কসবা কাঠগড় ভাটিপাড়া মহল্লার ভাতাবঞ্চিত কুসুম বেগম বলেন, ‘আমি কার্ড করেছি বাচ্চা পেটে থাকতে। কয়েকবার টাকা পেয়েছি। পৌরসভা ও মহিলা অধিদপ্তরের অফিসে গিয়েছি, ব্যাংকে গিয়েছি, টাকা আর পাইনি। এই ভাতার টাকার জন্য অনেক ঘুরেছি। এক অফিসে গেলে বলে ওই অফিসে যাও, ওই অফিসে গেলে বলে এই অফিসে যাও। কি আর করব, আমরাতো গরিব মানুষ। স্যারেরা যা বলে, আমরা তাই শুনি।’
একই মহল্লার বানেছা আক্তার বলেন, ‘তিনবার টেহা (টাকা) পাইছি। এরপর আর পাই নাই। পরে হুনলাম (শুনলাম) যে অফিসো (অফিসে) টেহা আইছে (আসছে)। অফিসো গেলাম, তারা কইলো ব্যাঙ্ক (ব্যাংকে) টেহা আহে (আসে) নাই। এই টেহা আর পাওন যাইবো না। এইডা খোঁইজা লাভ নাই। এই টেহা সরহারে (সরকার) খাইয়ে হারছে (নিয়েছে)। আমি গরিব মানুষ, আমার টেহা-পয়সে নাই, ঘর নাই, বাড়ি নাই। পুনাইডা (সন্তান) এডে-অডে (বিভিন্ন জিনিস) চায়, দিবারতো আর পাইনা।’
পাশেই থাকা ভাটিপাড়ার বাসিন্দা লিপি বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স এখন তিন বছর। কিছুদিন টাকা পেয়েছি, এখন আর পাই না। যদি মহিলা অধিদপ্তর বা ব্যাংকে যাই, তারা এক কথায় বলে দেন- টাকা সরকার দেই নাই, আমরা কোথা থেকে দেব। আমাদের টাকা দেয় না। তাড়িয়ে দেয়।’
শেরপুর পৌরসভার ভ্যাকসিনেটর সুপারভাইজার ও প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক আহাম্মেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি জানানোর জন্য অনেক ভাতাভোগী আমাদের কাছে আসেন। পরে আমরা মহিলা অধিদপ্তরে আবেদন করতে বলি। তারা যেন টাকা পান সেজন্য আবেদনের সঙ্গে আমরা সুপারিশও করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ভাতার টাকা পাননি। কিন্তু কেন পাচ্ছেন না এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’
জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক লুৎফুল কবীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘পৌরসভার মাধ্যমে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে আবেদন নিয়ে সংযুক্ত করে দুটি চিঠি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমাদের নির্দেশ দেবেন, সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
কেন ভাতার টাকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে লুৎফুল কবীর বলেন, ‘কী কারণে ভাতা বন্ধ রয়েছে তা আমরা জানি না। আমরা অভিযোগ জানার পর তাৎক্ষণিক পৌরসভার মাধ্যমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি। আমাদেরতো এখানে কিছু করার নেই। এটা অধিদপ্তরের কাজ। আমাদের যা যা করণীয় ছিল, সব করেছি।’