![কুষ্টিয়ায় দাবদাহে পানির সংকট, নষ্ট হচ্ছে ফসল](uploads/2024/04/21/1713673196.Kustia.jpg)
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে কুষ্টিয়া। একদিকে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, অন্যদিকে জিকে প্রকল্পের পাম্প অচল থাকায় মাঠেঘাটে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র পানির সংকট। কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে আগাম জাতের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবারও তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির ওপরে। ফলে প্রাণিকূল গরমে অসহায় হয়ে পড়েছে। বারবার পানি পান করলেও তৃষ্ণা মিটছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের প্রখরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়কে মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কুষ্টিয়ার জেনারেল হাসপাতালে বাড়ছে ডাইরিয়া এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক রোগী বেড়েছে আশঙ্কাজন ভাবে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ৫৫ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। ধারণ ক্ষমতারে বেশি রোগী হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একদিকে যেমন চলছে তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে কুষ্টিয়ার জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) সেচ প্রকল্পের তিনটি পাম্প অকেজো হয়ে পড়ে আছে প্রায় দুই মাস ধরে। ফলে মাঠের পর মাঠ পানির জন্য হাহাকার থাকলেও প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিতে পারছে না কৃষক। যারা বোরিং (শ্যালো ইঞ্জিন) মেশিন দিয়ে ধানের মাঠে পানি দিচ্ছিলেন তারাও পড়েছেন বিপাকে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ মেশিন অকেজো হয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এখন ধানের ফুল আসার সময়। এখন যদি মাঠে পর্যাপ্ত পানি না দেওয়া যায়, তাহলে দাবদাহের ফলে এসব ফুল (শীষ) নষ্ট হয়ে যাবে এবং এর থেকে চিটা তৈরি হবে। দাবদাহ থেকে ধানের ফলন বাঁচাতে মাঠে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে।’
মিরপুরের শরিফুল নামের এক কৃষক জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। এখন ধানগাছে ফুল আসার সময়। কিন্তু অতিরিক্ত রোদে ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই সময় খেতে পানি থাকা জরুরি, কিন্তু জিকে থেকে পানি নেওয়া যাচ্ছে না। এবার ধানের ফলন ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য তার।
বশির উদ্দিন নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে যাচ্ছে। সামান্য পানি দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। একদিকে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। আবার গরমে মাঠেও যাওয়া যাচ্ছে না। এবার মনে হয় না খেয়েও মরব, আবার গরমে পুড়েও মরব।’
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদের দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল শনিবার কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শুক্রবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীতে আরও কয়েক দিন এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে।