![ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীতকরণে সীতাকুণ্ডবাসীর ‘না’](uploads/2024/04/24/1713955586.Sitakundo.jpg)
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীতকরণ চান না সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দারা। এজন্য তিনটি বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ডবাসীর পক্ষ থেকে এসব কথা তুলে ধরা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ফসিউল আলম, সদস্যসচিব মাস্টার আবুল কাশেম, বিজয় স্মরণী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক লায়ন মো. গিয়াস উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন সদস্যসচিব মাস্টার আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান সরকার বর্তমান মহাসড়ক নির্মাণের জন্য মানুষের বাড়িঘর অধিগ্রহণ করে। একইভাবে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, বড় বড় মিল কারখানা স্থাপনের কারণেও সীতাকুণ্ডের মানুষকে বাপ-দাদার ভিটা হারাতে হয়। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শেষ হয়। বিশেষত এই মহাসড়কের পাশে চলাচলের জন্য সার্ভিস লেন নির্মাণ না করে বন্ধ করে দেওয়া হয় যুগ যুগ ধরে চলা রিকশা, অটোরিকশাসহ এলাকার মানুষের যোগাযোগের প্রধান বাহন ধীরগতির যানবাহন। এতে বিপাকে পড়েন এখানকার লাখ লাখ মানুষ। নতুন করে ১০ লেন করা হলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, হাট-বাজার, বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানসহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা চিরতরে হারিয়ে যাবে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে হাজার হাজার বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সীতাকুণ্ডের ৫ লাখ মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেন করার বিপক্ষে। যদিও এটির সঙ্গে দেশের অগ্রগতি-উন্নতি জড়িত। কিন্তু পূর্বে পাহাড়, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল বেষ্টিত উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সীতাকুণ্ড উপজেলার আয়তন প্রায় ৪৮৪ বর্গ কিলোমিটার। ছলিমপুর ভাটিয়ারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কোনো কোনো এলাকার ব্যাস সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারেরও কম। সমুদ্র ভাঙনের ফলে সীতাকুণ্ড উপকূলীয় এলাকার বহু মানুষ তাদের হাজার হাজার একর কৃষি জমি ও বসতভিটা হারিয়েছে।
১০ লেন করা হলে সীতাকুণ্ডে শতশত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন থাকবে না তেমনি পূর্ব থেকে পশ্চিম ও পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত কোনো যোগাযোগব্যবস্থা থাকবে না। কেননা এই ১০ লেনে কোনো আন্ডারপাস বা সার্ভিস লেন থাকবে না। এমনিতেই এখনো এপার-ওপার বিচ্ছিন্ন। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার যাতায়াতের পর্যাপ্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। ১০ লেন হলে প্রাণহানি আরও বাড়বে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেন না করার বিষয়ে বিকল্প তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ। প্রস্তাব তিনটি হলো-
১. বর্তমানে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং ইকোনোমিক জোন থেকে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর উপকূল পর্যন্ত মেরিনড্রাইভ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এখনো বাকি আছে ফৌজদারহাট থেকে সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এলাকা। এই মেরিনড্রাইভ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হলে কমবে সড়ক দুর্ঘটনা, সেইসঙ্গে জনদুর্ভোগ কমে নির্বিঘ্নে চলাচল করবে যানবাহন।
২. বিদ্যমান ৪ লেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের সিটি গেট থেকে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত ৪ লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এটি করতে ১০ লেনের চেয়ে কম খরচ হবে বলে সড়ক নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ, মানুষের জমি ও বড় বড় স্থাপনা অধিগ্রহণের পেছনে ব্যয় হবে না। সেই অর্থ বাঁচবে। তা ছাড়া সার্ভিস লেন বা আন্ডারপাস ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৮-১০ লেনের মহাসড়ক করার কোনো নজির বিশ্বে নেই। বরং জনসাধারণকে বাঁচাতে আছে ভিন্ন নজির। থাইল্যাণ্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে পাতায়া শহর যেতে প্রায় ১৪৭ কিলোমিটারব্যাপী ১২ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে আছে। যার প্রায় ৯৪ কিলোমিটারই উড়াল সড়ক। এর দুই পাশে চলাচলের জন্য রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত সড়ক ও উড়ালপথ।
৩. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে রেললাইনের পূর্বে ফৌজদারহাট থেকে চিনকী আস্তানা পর্যন্ত পাহাড়ের পাশ দিয়ে মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সীতাকুণ্ডবাসী।
মনির/সালমান/