![বনে দুর্বৃত্তের আগুন, বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণী](uploads/2024/04/26/1714103122.Tangail.jpg)
শাল-গজারির বনে ঘেরা অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি টাঙ্গাইলের সখীপুর। যেদিকে দু চোখ যায় সেদিকেই সবুজের সমারোহ। কিন্তু চৈত্র-বৈশাখ মাস এলেই দুর্বৃত্তের আগুনে পোড়ে সখীপুরের শাল-গজারির বন। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া যেখানে প্রবেশ নিষেধ সেখানে ঘটছে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা। প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারি গাছ, ঝোপঝাড়, পোকামাকড়, কেঁচো ও কীটপতঙ্গ। বিনষ্ট হয় বন্য প্রাণীর আবাসস্থল।
গত এক মাসে সখীপুরের বনাঞ্চলে অন্তত ১৫টি জায়গায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ গত বুধবার বিকেলে উপজেলার বহেড়াতৈল বিটের আওতায় ছাতিয়াচালা সাইনবোর্ড এলাকায় একটি গজারি বনে আগুন দেওয়া হয়। এতে প্রায় পাঁচ একর গজারির বন আগুনে পুড়ে যায়।
গজারিয়া বিট কার্যালয়ের আওতাধীন অন্তত চারটি জায়গায় শাল-গজারির বনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। কালিয়ানপাড়া, গজারিয়া, কীর্ত্তনখোলা বংকী এলাকায় শাল-গজারির এসব বনে আগুন দেওয়া হয়। এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ একর বন পুড়ে গেছে। নলুয়া বিটের আওতাধীন দেওদীঘি বাজারের পশ্চিম পাশে দুটি গজারির বন, নলুয়া বিট কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে ৩০০ গজ দূরে একটি, ঘেচুয়া এলাকায় দুটি ও আমের চারা এলাকায়ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
গত বুধবার গজারিয়া বিটের সখীপুর-সিডস্টোর সড়কের কীর্ত্তনখোলা এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে বনে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে অন্তত চারটি শাল-গজারির বন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সখীপুরে চারটি রেঞ্জের আওতায় ১৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে শাল-গজারির বন রয়েছে। বসন্তে, তথা ফাল্গুন-চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রকৃতির নিয়মে শাল-গজারির পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের আশপাশের বাসিন্দারা জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাতের বেলায় আবার কখনো দিনের বেলাতেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
নলুয়া বিট কর্মকর্তা সাফেরুজ্জামান বলেন, ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি গজারির বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আমরা খুবই সতর্ক অবস্থায় আছি। এতে গতবারের চেয়ে বনে আগুন লাগার ঘটনা কম ঘটেছে। আমার কার্যালয়ে তিনজন স্টাফ রয়েছেন। চার-পাঁচ হাজার একর জমির বন দেখভাল করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই জনবল বাড়াতে হবে।’
তুহিন নামে একজন বলেন, ‘বনের কাছাকাছি নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। তারা লাকড়ি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনেক সময় গজারি বনে আগুন দিয়ে থাকেন। কেউ বনের জমি দখলের উদ্দেশ্যে বন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকেন। বনের ভেতরের সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরাও অনেক সময় বনে আগুন দেন। মূলত জমি দখল আর লাকড়ি সংগ্রহ করতেই আগুন দিয়ে থাকে দুর্বৃত্তরা।’
বাপা টাঙ্গাইল শাখার সভাপতি ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু লোকজন অযথা পাহাড়ে আগুন দিয়ে বন ধ্বংস করছে। পাশাপাশি পশু, পাখি বিলুপ্ত হতে চলছে।’
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।