গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় নিহত মো. ওয়াসিকুর রহমান ভূঁইয়ার মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের অবরোধে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চন্দ্রদিঘলিয়ায়ও মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বুধবারের (১৫ মে) মধ্যেই দোষীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মে) অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে গোপালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-পরবর্তী বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়া ও পরাজিত প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কামরুজ্জামানের সমর্থকের গুলিতে লিয়াকত আলীর সমর্থক মো. ওয়াসিকুর ভূঁইয়া (২৭) নিহত ও পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনায় বুধবার বেলা ১১টায় ওয়াসিকুর ভূঁইয়ার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভ মিছিলটি বঙ্গবন্ধু কলেজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চেনানিয়াকান্দিতে গিয়ে শেষ হয়। এতে চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। পরে দুপুর ১২টায় ওই স্থানে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ও বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার অপসারণসহ দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে অবেরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারা সেখানে সমাবেশ করে বুধবার রাতের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র জব্দ করা না হলে বৃহস্পতিবার অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম ও পুলিশ সুপার আল-বেলি আফিফা আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা এক ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন। তবে এ ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন চন্দ্রদিঘলিয়াবাসী।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক বলেন, ‘হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। যেহেতু জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তাই আমরা সাময়িকভাবে অবরোধ তুলে নিয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করছি, প্রশাসন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করবে।’
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আল-বেলি আফিফা বলেন, ‘অবরোধকারীদের সঙ্গে আমরা কথা বলে তাদের আশ্বস্ত করলে তারা অবরোধ তুলে নিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে হত্যার তদন্ত শুরু করেছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা না হলেও আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবং স্বচ্ছভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান কম ছিল। জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অবৈধ কোনো অস্ত্র ব্যবহার হলে তা উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।’