![রিমালের তাণ্ডবে ৬ রুটে ফেরি বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা](uploads/2024/05/30/Pirojpur-Ferri-Story-1717039436.jpg)
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে পিরোজপুর থেকে ফেরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করা ছয়টি ফেরিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ১০ রুটের কয়েক লাখ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
যাত্রীরা বলছেন, তিন দিনেও ফেরি চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত এ সংকটের সমাধান প্রয়োজন। যদিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, ঝড়ের কবলে পড়ে ছয়টি ফেরিঘাটসহ পার্শ্ববর্তী অ্যাপ্রোচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো ঠিক করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কচা নদীতে মঠবাড়িয়া-ভান্ডারিয়া-খুলনা রুটের চরখালী ফেরিঘাট, বলেশ্বর নদীতে মাছুয়া-বাগেরহাট-শরণখোলা ফেরিঘাট, সন্ধ্যা নদীতে ইন্দেরহাট-স্বরূপকাঠি ফেরিঘাটসহ পিরোজপুর জেলায় মোট চারটি নদীতে ছয়টি ফেরিঘাট রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সবগুলো ফেরিঘাটই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই গত তিন দিন ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সবগুলো রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে। এতে ১০টি রুটের কয়েক লাখ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন।
এ ছাড়া ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় এসব রুটের যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে নদী পার হচ্ছেন। আগে পিরোজপুর থেকে মঠবাড়িয়া যেতে বাসে খরচ হতো ৮০-১০০ টাকা, কিন্তু এখন যাত্রীকে গুনতে হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা। যাত্রীরা বলছেন, সব রুটেই যাতায়াত খরচ বেড়েছে।
চরখালী ফেরিঘাটে কথা হয় খুলনা থেকে আসা মঠবাড়িয়াগামী যাত্রী ইউনুস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে বাসে করে পিরোজপুর থেকে আসতে খরচ হতো ৯০ টাকা। এখন ফেরি না চলায় সেই একই পথের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩০০ টাকায়। মাঝে মধ্যে আরও বেশি দিতে হয়। গাড়ি পাওয়া যায় না। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক।’
ওই ঘাটে ট্রলারে করে নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন মাসুমা বেগম। এখনো ফেরি চালু না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগে ফেরিতে করে নির্ভয়ে নদী পার হতাম। এখন বাচ্চা কোলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে নদী পার হচ্ছি। তিন দিন হয়ে গেল ঝড় হয়েছে। এখনো কেন ফেরি চালু করার সময় হয়নি’, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
রিমালের প্রভাবে শুধু ফেরিঘাটেরই ক্ষতি হয়নি, লণ্ডভণ্ড হয়েছে ঘাটের পাশের শতাধিক দোকানসহ একাধিক স্থাপনা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবার হয়েছে। অসংখ্য মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই ঝড় কেড়ে নিয়েছে। তবু তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছেন। নতুন করে বানাচ্ছেন দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
৪৫ বছর ধরে বিভিন্ন ঘাটে চা বিক্রি করেন আব্দুল রহিম (৮১)। বলেন, ‘জীবনের বেশির ভাগ সময়ই এই ঘাটগুলোতে কেটেছে। অনেক কষ্ট করে সারা জীবনের পুঁজি দিয়ে একটা চায়ের দোকান দিয়েছিলাম। রিমালের তাণ্ডবে সব শেষ হয়ে গেল। বেঁচে থাকার জন্য আমার আর কোনো অবলম্বন রইল না।’
খাবার হোটেল ব্যবসায়ী বাচ্চু হোসেন বলেন, ‘চরখালী ফেরিঘাটে প্রায় ৪০টির মতো ছোট-বড় দোকান ছিল। এর মধ্যে ৩০টিই ঝড় ও বন্যায় ভেঙে তছনছ হয়েছে। এখন আমাদের দুঃখ বলার কোনো জায়গা নেই। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের সহযোগিতা করুন।’
এদিকে ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত সবগুলো ফেরিঘাট পুরোপুরি চালু হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ঘাট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ।
বলেছেন, ‘ঝড় ও বন্যায় অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। এগুলো মেরামত করে পুনরায় চালু করতে কয়েকদিন সময় প্রয়োজন। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফেরির পাশাপাশি ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক দুর্যোগে সড়ক বিভাগের ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাধবী রায়। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’ ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী পিরোজপুর সদরে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে একজন, ভান্ডারিয়ায় পানিতে ডুবে দুজন ও ইন্দুরকানী উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজনসহ মোট চারজন মারা গেছেন।