![সিলেটে বন্যায় পানিবন্দির সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়াল](uploads/2024/06/19/Sylhet_Bonna-1718802003.jpg)
টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ছয় উপজেলার তিন নদীর পানি ছয় পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলাজুড়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরীতে বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ।
বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে সর্বশেষ এ তথ্য জানায় জেলা প্রশাসন।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা) পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০০ মিলিমিটার। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৭.২ মিলিমিটার। বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫ মিলিমিটার।
এদিকে আজ সিলেট বিভাগে সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই সতর্কবার্তায় ভূমিধসের আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা) পর্যন্ত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে সিলেটের সবকটি নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘সিলেটে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা আরও পাঁচদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তাই সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ভোররাত থেকে বজ্রসহ বৃষ্টি ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত চলমান থাকায় সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। শুক্রবার দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমলেও সন্ধ্যার পর থেকে তা আবারও শুরু হয়। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ছিল। এরপর আবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমলেও রবিবার রাত থেকে শুরু হয়ে তা এখনো চলমান। যার ফলে সিলেটে নদ-নদীর পানি বাড়ছে দ্রুতগতিতে।
এদিকে বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে জেলা প্রশাসন জানায়, এখন পর্যন্ত সিলেট মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১২৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যা আক্রান্ত রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে বন্যাক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসা-বাড়িতে। অনেকেই সড়কের পাশে ট্রাক, পিকআপে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউবা আবার আত্মীয়দের বাড়িতে উঠেছেন। আশ্রয়কেন্দ্র ও অন্যান্য জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষজন খুবই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে আজ সিলেট পৌঁছেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুহিবুল ইসলাম। তিনি দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর মিরাবাজারের কিশোরী মোহন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন ও বন্যাক্রান্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এর আগে গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। বন্যায় সড়ক, মহাসড়ক, ঘরবাড়ির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আবারও বন্যা আক্রান্ত হলেন সিলেটের মানুষজন।
শাকিলা ববি/সালমান/