![সিলেট বিভাগে পানিবন্দি ২৩ লাখ মানুষ](uploads/2024/06/20/Sylhet_Bonna2-1718900532.jpg)
ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট বিভাগের তিন জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাড়ে ২৩ লাখ মানুষ। সিলেট ব্যুরোপ্রধান, নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিলেট ব্যুরো: ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটের নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ছয় পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি না হলেও উন্নতি হয়নি। দ্বিতীয় দফা বন্যায় সিলেট জেলাজুড়ে ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। তার মধ্যে সিলেট মহানগরীতে বন্যাকবলিত ৫৫ হাজার মানুষ।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১০ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০ মিলিমিটার। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০ মিলিমিটার। পাশাপাশি আজ সিলেট বিভাগে সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ভারতের হাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ভারতের চেরাপুঞ্জিতে কোনো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি। এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যার ফলে সিলেটের সব কটি নদ-নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে।
এর আগে গত ১৩ জুন ভোর থেকে শুরু হওয়া বজ্রসহ বৃষ্টি ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত চলমান থাকার কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। শুক্রবার দিনের বেলা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমলেও সন্ধ্যার পর থেকে আবারও শুরু হয় বৃষ্টি। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ছিল। এরপর আবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমলেও রবিবার রাত থেকে আবারও টানা বৃষ্টিপাত এখনো চলমান আছে। যার ফলে সিলেটে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসন জানায়, এ সময় পর্যন্ত সিলেট মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১ হাজার ৬০২টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে বন্যাকবলিত রয়েছে ৫৫ হাজার মানুষ। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৮০টি। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩৬১টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়। প্রথম দফা বন্যায় সড়ক, মহাসড়ক, ঘরবাড়ির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় দফায় আবার বন্যাকবলিত হলো সিলেটের মানুষজন।
সুনামগঞ্জে ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি
সুনামগঞ্জ জেলাজুড়ে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত তিন দিন ধরে জেলার ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীপাড়ের বসতঘর থেকে পানি নামলেও বাড়ছে হাওরে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর পাড় থেকে পানি কিছু কমলেও এখন শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, হাজিপাড়া, নতুনপাড়া, বাঁধনপাড়া, হাছননগর, মল্লিকপুর, নবীনগর ও কালীপুর এলাকায় কোথাও কোমর থেকে হাঁটু সমান পানি রয়েছে। এসব পানি স্থির হয়ে আছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বানভাসি মানুষ ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ৬৯১ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারের দেওয়া ত্রাণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, ২৪ ঘণ্টায় পানি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস থাকায় পানি আরও বৃদ্ধি হতে পারে।
মৌলভীবাজারে ঢলের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২ লাখ ৮১ হাজার ৯২০ জন মানুষ পানিবন্দি আছে। ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার ২৫৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ৭০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এদিকে ঢলের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের শ্যামেরকোনা গ্রামে ঢলের পানি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
মৃত শিশুরা হলো শ্যামেরকোনা গ্রামের জমির আলীর ছেলে হৃদয় আহমদ (১৬) ও একই গ্রামের ফয়সল মিয়ার ছেলে সাদী আহমদ (৮)।