![নকশি কাঁথায় ভাগ্য বদল ভোলার আমেনার](uploads/2024/05/13/vola-1715583598.jpg)
সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তারা। তেমনি একজন উদ্যোক্তা ভোলার আমেনা খানম। বাহারি ডিজাইনের নকশিকাঁথা তৈরি ও বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
নিজ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার নারীদের নকশিকাঁথা তৈরি করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তৈরি করেছেন অন্যদের জন্য আয়ের পথ।
ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের নারী উদ্যোক্তা আমেনা খানম। ২০০৯ সালে তার বিয়ে হয়। স্বপ্ন দেখতেন স্বামীকে নিয়ে সুন্দর একটি জীবন পার করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় ২০১৮ সালে। স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আমেনা খানম। তারপরও নিজের সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাতে ও পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে খুঁজতে থাকেন বিকল্প আয়ের পথ।
এক আত্মীয়র কাছ থেকে প্রথম কাঁথা তৈরির কাজ পান আমেনা। সাত মাস সময় নিয়ে একটি কাঁথা তৈরি করেন। বিনিময়ে ৩ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের অর্ডার আসতে থাকে। বর্তমানে আমেনার ইউনিক নকশি হাউসে প্রায় ৩৫ জন নারী কাজ করেন।
এদেরই একজন কুলসুম বলেন, ‘পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি আমি আমেনা আপার কাছে এসে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করি। সেলাই করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসারের বাড়তি খরচ মেটাই।’ মিনারা নামে এক স্কুলশিক্ষার্থী বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময় সেলাইয়ের কাজ করি। কাজ অনুযায়ী টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে আমি আমার হাতখরচ চালাই। টিউশন ফি দিই। পরিবারকেও দিই।’
স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা লিমা রহমান বলেন, ‘আমেনা আপার কাঁথাগুলো ব্যতিক্রমী ডিজাইনের। সবাই পছন্দ করেন। অন্যান্য কাঁথার তুলনায় আমেনা আপার কাঁথার মান খুবই ভালো। আপার তৈরি করা কাঁথাগুলো অনলাইনে বিক্রি করতে সহযোগিতা করে থাকি।’
আমেনা খানম জানান, নিজের তৈরি করা বাহারি সব ডিজাইনের কাঁথা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন তিনি। কাঁথা বিক্রি করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
আমেনা খানম বলেন, ‘আমার তৈরি কাঁথাগুলো একদম ইউনিক ডিজাইনের। বর্তমানে অনলাইনেও আমার তৈরি করা নকশি কাঁথার অর্ডার পাচ্ছি। প্রতিটি নকশিকাঁথা আকারভেদে ১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।’
নারীদের স্বাবলম্বী করার এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমেনা খানমের মতো যেসব নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন এবং যারা নিজেরা কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেন তাদের পাশে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সব সময় রয়েছে। তাদের জন্য সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক সহযোগিতার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেব, যেন সহজ শর্তে ঋণ পেয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে করতে পারেন।’
ভোলার এনআরবিসি ব্যাংকের ম্যানেজার আরিফুল হক রাকিব জানান, এনআরবিসি ব্যাংক অনেক আগে থেকে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য এনআরবিসি ব্যাংক সহযোগিতা করছে।