![গরু পালন করে কোটিপতি](uploads/2024/06/05/Gaibandha-cow--(2)-1717572414.jpg)
বিদেশ থেকে ফিরে শাশুড়ির দেওয়া একটি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন গাইবান্ধার হুমায়ুন কবীর। পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে তিনি ১৬১টি গরুর মালিক। তার নন্দনকানন ক্যাটেল ফার্মে প্রায় ২ কোটি টাকার গরু রয়েছে।
সরেজমিনে সদর উপজেলার পূর্ব রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তার জন্য খামারের চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। খামারের ভেতরে সারি সারি গরু। কিছু গরুকে হুমায়ন কবীর গোসল করাচ্ছেন। পাশেই গো-খাদ্য প্রস্তুত করছেন খামারের কর্মচারীরা। ছোট-বড় ছয়টি টিনশেড ঘরে এসব গরু রাখা হয়েছে।
তার খামারের ১৬১টি গরুর মাঝে গাভি পাঁচটি। বাকি ১৫৬টি ষাঁড়। গরু ছাড়াও তার খামারে অর্ধশত ছাগল রয়েছে।
হুমায়ুন কবীর জানান, জীবিকার প্রয়োজনে একসময় বিদেশে পাড়ি জমান গাইবান্ধা শহরের ছেলে কবির। কিছুদিন বিদেশে থেকে ফিরে এসে বিয়ে করেন। এলাকার ঐতিহ্য অনুসারে বিয়ের পর তাকে একটি গরু উপহার দেন তার শাশুড়ি। এর কিছুদিন পর ওই গরু একটি বাছুর দেয়। বাছুরটি লালন-পালন করার জন্য প্রতিবেশী একটি পরিবারকে দায়িত্ব দেন তিনি। কিন্তু সে পরিবারটি বাছুরের ঠিকভাবে যত্ন না নেওয়ায় রাগ করে নিজেই বাছুরটি বাড়ি এনে লালন-পালন শুরু করেন। একপর্যায়ে বাছুরটি বড় হলে তা ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। একটি গরু বিক্রি করে এত টাকা লাভ দেখে গরু পালনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন কবির।
খামারের স্মৃতিচারণ করে তিনি জানান, প্রথম গরু বিক্রিতে লাভ হওয়ায় আরও কিছু টাকা দিয়ে নতুন পাঁচটি গরু কেনেন। এরপর একজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচটি গরু দিয়ে ১৬ শতক জমিতে গড়ে তোলেন তার গরুর খামার। এভাবে কিছুদিন পর আরও ২০টি গরু কেনেন। গরুর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খামারের জন্য জায়গার প্রয়োজন হয়। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে খামারের জন্য আরও ১৫ শতক জমি কেনেন।
খামারের সব কাজ নিজের হাতেই করতে পছন্দ করেন হুমায়ুন কবীর। তাকে সহায়তা করেন তার স্ত্রী তমা বেগম। এ ছাড়া খামারের কাজে সহায়তার জন্য পাঁচজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।
গরুর যত্নে কোনো আপস করেন না কবীর। সকাল-বিকেল দুই বেলা গরুগুলোকে গোসল করানো হয়। আর গরুর খাবারের জন্য বাইরের কেনা ফিড ব্যবহার করা হয় না। খামারেই খুদ, ভুট্টা, গম ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয় গরুর খাবার। সকাল-বিকেল দুই দফায় গরুগুলোকে খাবার দেওয়া হয়। হুমায়ুন কবীর নিজে উপস্থিত থেকে তত্ত্বাবধান করেন।
মূলত কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে নন্দনকানন ফার্মে গরু বিক্রি করা হয়। হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী তমা বেগম বলেন, ‘আমার মায়ের দেওয়া একটি গরু থেকে ধীরে ধীরে ১৬১টি গরু নিয়ে খামার করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক এখন প্রায় ২ কোটি টাকা। এবার কোরবানির ঈদে আমাদের সবগুলো গরু বিক্রি হলে পরের বছর খামারের পরিসর আরও বড় করব। আজ আমাদের সবকিছু হয়েছে আমার মায়ের সহযোগিতায়। আমার মা যদি আমাদের সহযোগিতা না করতেন তাহলে আমাদের এ খামার তৈরি করা সম্ভব ছিল না। তবে মা খামারের এ সাফল্য এতদূর পর্যন্ত দেখে যেতে পারেননি। যে বছর খামারে ৩০টি গরু ওঠানো হয়েছিল তার কিছুদিন পর বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তরুণ কুমার দত্ত খবরের কাগজকে জানান, উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণ এরকম বড় পরিসরে ১০টির বেশি খামার রয়েছে। সম্প্রতি ওই খামার পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সরকারি ভ্যাকসিনসহ চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় পরার্মশ দেওয়া হচ্ছে।