ঢাকা ১০ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ২৫ আগস্ট ২০২৪

সূচকের সামান্য উত্থানে বেড়েছে লেনদেন

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০১:১২ পিএম
সূচকের সামান্য উত্থানে বেড়েছে লেনদেন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সোমবার (১৫ জুলাই) মূল্যসূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে গতদিনের তুলনায় বেড়েছে লেনদেন।

টানা তিন কার্যদিবস পতনের পর সোমবার দেশের পুঁজিবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। 

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে এ বাজারটিতে মূল্যসূচকও কমেছে। 

এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৪০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯১টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পরও ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৮৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৭২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৪৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিকে দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৬২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

ডিএসইতে সোমবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড।

এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৪ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে।

দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টেকনো ড্রাগস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়েছে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা ফার ইস্ট নিটিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৩টির এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে সফল গাইবান্ধার অশোক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম
আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করে সফল গাইবান্ধার অশোক
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ছোট গয়েশপুর খেত থেকে মরিচ তুলছেন অশোক কুমার সরকার। ছবি: খবরের কাগজ

কৃষি উদ্যোক্তা অশোক কুমার সরকার। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ছোট গয়েশপুর গ্রামের মৃত কৃষক অমল চন্দ্র সরকারের ছেলে। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। উচ্চশিক্ষায় গ্রহণ করেও চাকরির পেছনে ছুটেননি। বাবার কাজকে ভালোবেসে কৃষিতে দৃঢ়ভাবে মনোনিবেশ করেন। চলতি বছর কয়েক লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেন তিনি। তার কঠোর পরিশ্রম এনে দিয়েছে সাফল্য। তার ওই সাফল্য স্থানীয় কৃষিক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

অশোক কুমার সরকার প্রথম দিকে এবার ৫০ শতাংশ জমিতে ‘বিজলী ২০২০’ জাতের মরিচ চাষ করে এলাকায় বেশ সারা ফেলেছেন। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহার করে তিনি স্বল্প সময়ে উচ্চমূল্যের মরিচ চাষে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন। 

শুধু মরিচ নয়, ওই যুবক কৃষক অভিনব পদ্ধিতে পুঁইশাক, পটল, করলা, বেগুনও চাষ করেন। এক জমিতেই কয়েক প্রকার ফসল ফলান তিনি। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি অতি দ্রুততার সঙ্গে উচ্চমানের ফলন পেয়েছেন। সারা বছর কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন। এ পদ্ধিতে মরিচ চাষ করে ভালো দাম পেয়েছেন। ধানের চেয়ে আয় বেশি। দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে ইতিমধ্যে ১ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। উচ্চ ফলনশীল ‘বিজলী ২০২০’ জাতের কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও জেলার হাট বাজারগুলোতে ৪০০ টাকারও বেশি প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছিল। এতে অশোক কুমারের লাভের পরিমাণ বেড়েছে।

পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে যুবক কৃষক অশোক কুমার সরকার বলেন, ‘সাধারণভাবে মরিচ চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না। নানাভাবে গাছ পচে নষ্ট হয়ে যায়। তবে মালচিং পেপার ব্যবহারে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ পদ্ধতিটি গাছকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও অতি বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে, সারের অপচয় রোধ করে, আগাছা দমন করে এবং মাটির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলন ভালো পাওয়া যায়।’

ইউটিউব দেখে মরিচের জাত সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর প্রথমে ১০ শতক জমিতে চাষ করে ভালো ফলন পান। এরপর তিনি সারা বছর ওই পদ্ধিতে মরিচ চাষ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকার মালচিং পেপার লেগেছে। সব মিলে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমি থেকে অন্তত ১২০ মণ কাঁচা মরিচ উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে ২০ শতক জমিতে পটল, ৩৩ শতক জমিতে বেগুন ও ২০ শতক জমিতে মরিচের চারা রোপণ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মতিউল আলম বলেন ‘মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এটি গাছের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং ফলন বাড়ায়। কৃষক লাভবান হয়।’

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার ব্যবহারের ফলে মরিচ চাষে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এ বছর জেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মালচিং পদ্ধিতে জেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে সম্ভাব্য কাঁচামরিচ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ১৬৮ টন ধরা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার অনেক খুশি। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ওই সফলতা কৃষিক্ষেত্রে নতুন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কৃষক অশোক কুমারের সাফল্য অন্য কৃষকদেরও প্রেরণা দিচ্ছে। এ পদ্ধতি পুরো জেলার কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে কাঁচা মরিচ উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব।’

শেরপুরে তিন বছরেও সংগ্রহ হয়নি বাসকগাছের পাতা

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম
শেরপুরে তিন বছরেও সংগ্রহ হয়নি বাসকগাছের পাতা
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি গারো পাহাড়জুড়ে বাসকগাছের বাগান। ছবি: খবরের কাগজ

সুফল প্রকল্পের আওতায় শেরপুরের গারো পাহাড়জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ভেষজ চিকিৎসায় বাসক পাতার বাগান। কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও পরিপক্ব বাসকগাছ থেকে পাতা সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ নেই বন বিভাগের। তাই গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পাকা পাতা। বাগানে অংশগ্রহণকারীরা জানান, সঠিক সময়ে পাতা সংগ্রহ না করার ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তবে বন বিভাগ জানিয়েছে, খুব দ্রুতই নিলামের মাধ্যমে বাসক পাতা সংগ্রহ শুরু হবে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা। এই তিন উপজেলায় সুফল প্রকল্পের নামে টেকসই বনায়ন জীবিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে সীমান্তবর্তী বালিজুড়ি, রাংটিয়া ও মধুটিলা রেঞ্জে ৬ হাজার ৫৮০ একর জমিতে সুফল বাগান করে বন বিভাগ। এতে দেশীয় বৃক্ষ, ফল, ঔষধিসহ ৬০ প্রজাতির প্রায় ৫০ লাখ গাছ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ২৪৫ হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয় বাসক পাতার গাছ। এরই মধ্যে ভেষজ চিকিৎসায় বাসক পাতার বাগান পাহাড়জুড়ে ছেয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় পার হলেও পরিপক্ব বাসকগাছ থেকে পাতা সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ নেই স্থানীয় বন বিভাগের।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সীমান্ত সড়কজুড়ে ছেয়ে গেছে সবুজ পাতার বাগান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এটা কোনো চায়ের বাগান। আর কাছে গেলেই বোঝা যায় এটি ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত বাসক বাগান। বর্তমানে গাছগুলো অনেক বড় হয়েছে। গাছে অনেক পাতাও হয়েছে। অনেক জায়গায় আবার দেখা যায়, বাগানের ভেতরে পাকা পাতা পড়ে আছে। অনেক গাছে দেখা যায়, বাসকগাছে পাতা পেকে ঝুলে আছে। স্থানীয় অনেকেই ওই পাকা পাতা সংগ্রহ করছে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য।

বাগানের উপকারভোগী ও স্থানীয়রা জানান, সঠিক সময়ে পাতা সংগ্রহ না করার ফলে পাকা পাতা ঝরে পড়ছে। অথচ বাসকগাছ লাগানোর ছয় মাস থেকে এক বছর পর হলেই পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। পাতা সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।

বাগানের উপকারভোগী রহিম মিয়া বলেন, ‘সিলেটের যেমন চা-বাগান, আমাদের এদিকে তেমন বাসকবাগান। এই বাসক বাগানে আমরা বেশ কজন সদস্য আছি। এই বাগানের পাতা দিয়ে ওষুধ হবে এটা আমাদের বলা হয়েছে। আমরা সেভাবে দেখাশোনা ও পরিচর্যা করেছি। বন বিভাগ আমাদের বলেছে খুব দ্রুতই পাতা তুলে বিক্রি করবে এবং আমাদের লাভ হবে। কিন্তু দু-তিন বছর পার হলেও পাতা আর তোলে না। এভাবেই আছে এখনো। যদি পাতাগুলো তুলত, তাহলে আমরা কর্মস্থলে থাকতাম। কিছু টাকা-পয়সা পাইতাম। সংসারটা ভালো চলত।’

বাগানের অংশগ্রহকারী প্রদীপ ম্রং বলেন, ‘গারো পাহাড়ে অনেক বাসক পাতার চাষ হয়েছে। আমরা যতটুকু জানি, এগুলো এক বছর পর থেকেই পাতা তোলা যায়। কিন্তু গাছ বড় হয়ে পাতা ঝরে পড়ে যাচ্ছে, পাতা ওঠানোর কোনো খোঁজ নেই। তাই আমি বন বিভাগকে অনুরোধ করব, যাতে দ্রুতই পাতাগুলো তুলে বিক্রি করে।’

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সেন্ট্রাল ভাইস চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা ও শ্রীবরদী শাখার চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, ‘বন বিভাগ যে বাসকগাছের বাগান তৈরি করেছে, তার মধ্যে প্রায় চার বছর পরও পাতা আহরণ শুরু হয়নি। অথচ গাছ এক বছর পর থেকেই আহরণের উপযোগী হয়ে যায়। দ্রুত সময়ে পাতা আহরণ করে ওষুধ কোম্পানির কাছে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করলে স্থানীয়রা শ্রমিক হিসেবে উপকৃত হবেন এবং বাগানে অংশগ্রহণকারী হিসেবে লাভবান হবেন। এ ছাড়া ব্যাপক আকারে চাষ করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।’

ময়মনসিংহ বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘বন অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ঔষধি বাগান তৈরি করা হয়েছে এবং গাছগুলোর গ্রোথ সন্তোষজনক। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে বাসকগাছের পাতা বিক্রি শুরু হবে। এটা স্থানীয় জনগণের জন্য লাভজনক হবে।’

চট্টগ্রামে পণ্যসংকটে ভোগ্যপণ্যের বাজার, আকাশছোঁয়া দাম

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম
চট্টগ্রামে পণ্যসংকটে ভোগ্যপণ্যের বাজার, আকাশছোঁয়া দাম
ছবি: খবরের কাগজ

ভারী বর্ষণে ডুবেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চার দিন ধরে চট্টগ্রামে আসছে না ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ি। এদিকে চট্টগ্রামের বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে দেখা দিয়েছে পণ্যসংকট। আর এ অজুহাতে চাল, পেঁয়াজ ও সবজি, কাঁচা মরিচের দাম আকাশছোঁয়া বেড়েছে। 

পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তিন দিন ধরে চট্টগ্রামে কোনো ধরনের সবজিবাহী পণ্য আসছে না। বন্যায় কবলিত হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেনী ও কুমিল্লায় আটকে আছে চট্টগ্রামমুখী ৩২টি গাড়ি। আর এ কারণে চট্টগ্রামে সবজির বড় আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজারে কোনো ধরনের সবজি নেই। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে শসা, পটোল এসেছে ছোট পিকআপে। আর সেগুলো বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। 

রিয়াজউদ্দিন বাজারে শনিবার (২৪ আগস্ট) বিক্রি হয়েছে লাউ আর শসা। প্রতি কেজি লাউ ৪৫ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আড়তে আর কোনো ধরনের সবজি নেই। তবে কিছু আড়তদারের কাছে আগের কয়েক বস্তা কাঁচা মরিচ ছিল। সেগুলো পাইকারিতে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। অথচ পাইকারিতে পাঁচ দিন আগেও কাঁচা মরিচের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়।

রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘তিন দিন ধরে কোনো সবজি নেই আমাদের আড়তে। কারণ বন্যার কারণে গাড়ি আসতে পারছে না। আমাদের অনেক গাড়ি আটকে আছে। সবজি পচনশীল। তাই গাড়িতে থাকা অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাবে। আমরাও লোকসানে পড়ব। তবে আশপাশের উপজেলা থেকে একেবারে সীমিত পরিমাণে সবজি এসেছে। এটা চাহিদার তুলনায় কিছুই না।’

এদিকে স্থবিরতা নেমে এসেছে খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে। সেখানেও দেখা দিয়েছে পণ্যসংকট। আর এ অজুহাতে সব ধরনের বস্তাপ্রতি চালে বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। 

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত তিন দিনে মাত্র একটা গাড়িতে চাল এসেছে। পুরো বাজারে চালের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। সরবরাহ বেড়ে গেলে তখন দাম কমে যাবে। তবে বেচাবিক্রিতেও ভাটা পড়েছে।

একই পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা। 

এদিকে খাতুনগঞ্জে চায়না আদা ও রসুনের দাম খুব একটা বাড়েনি। বেশি বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দর। পাকিস্তানি পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। অন্যদিকে এতদিন ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম এক লাফে গিয়ে ঠেকেছে ১১০ টাকায়। চায়না আদার কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২১০ ও চায়না রসুনের কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কয়েক দিন ধরে পণ্যবাহী গাড়ি আসতে পারছে না। অনেক গাড়ি রাস্তায় আটকে আছে। বাজারে পণ্যসংকট দেখা দিয়েছে। তাই দাম বেড়ে গেছে। তবে বেচাকেনাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। কারণ আশপাশের উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেকে আসতে পারছেন না।’

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল হান্নান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সকালে কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখি কোনো ধরনের সবজি নেই। কাঁচা মরিচের কেজি ৮০০ টাকা। অবস্থা খুব একটা ভালো না। সবদিক দিয়ে আমরা সমস্যায় সময় পার করছি।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বন্যার কারণে গাড়ি চলতে পারছে না। সরবরাহ কমেছে, এটা ঠিক। তাই বলে এই অজুহাতে আগের কেনা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হবে কেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের উচিত, ভোগ্যপণ্যের দাম না বাড়িয়ে মানবিক হওয়া।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত আছে। কেউ কারসাজি করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে চাইলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চট্টগ্রাম থেকে সবজি রপ্তানি নেমেছে অর্ধেকে

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
চট্টগ্রাম থেকে সবজি রপ্তানি নেমেছে অর্ধেকে
চট্টগ্রামের দোহাজারী পাইকারি সবজির বাজার। ছবি: খবরের কাগজ

বাড়তি দরে সবজি ক্রয় এবং সমুদ্র ও আকাশপথে বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে বিদেশে সবজি পাঠাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে সবজি রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। 

চট্টগ্রাম বন্দর ও আকাশপথ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি রপ্তানি হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম থেকে ৩৩ হাজার ৯২৪ টন সবজি রপ্তানি হয়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ২০৩ দশমিক ৮৬ টন সবজি। ওই হিসেবে বছরের ব্যবধানে সবজি রপ্তানির পরিমাণ কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি সবজির চাহিদা রয়েছে। তাই সবজি রপ্তানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু দেশের কৃষকরা বাড়তি দরে সবজি বিক্রি করে। তার ওপর পাঠাতে গেলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। তাই এসব কারণে সবজি রপ্তানিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন রপ্তানিকারকরা।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলু রপ্তানিকারক মোহাম্মদ এমদাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথমতো বাংলাদেশে সবজির দাম অনেক বাড়তি। তার ওপর শুধু আকাশপথ নয়, সমুদ্রবন্দর দিয়েও খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যেমন, গত এপ্রিলে আমরা দুবাইতে এক কনটেইনার আলু পাঠাতে খরচ পড়ত ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ডলার। এখন গুনতে হচ্ছে ৪ হাজার ডলার। বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে রপ্তানিকারকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তাই এ খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তাও গড়ে উঠছে না। বরং ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।’ 

জানা গেছে, রপ্তানিকারকরা মূলত দেশের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, নরসিংদী এবং চট্টগ্রামের চকরিয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের কৃষকদের কাছ থেকে ভালো মানের সবজি সংগ্রহ করে থাকেন। রপ্তানিযোগ্য সবজির মধ্যে রয়েছে- শিম, বেগুন, টমেটো, ঝিঙা, পটোল, শসা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁকরোল, বরবটি, কচুর লতিসহ নানা ধরনের সবজি। 

এসব সবজি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেনসহ নানা দেশে সবজি রপ্তানি হয়। 

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলু, পাতাকপি, টমেটো, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি মিলে মাত্র ১৪ হাজার ২০৩ টন সবজি রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ১২৭ দশমিক ৬৬০ টন আলু, ১ হাজার ২৫১ দশমিক ২৭৬ টন পাতাকপি, ৫২ দশমিক ৩৫০ টন টমেটো, ৯ দশমিক ৫২৪ টন বেগুন, ৩৩৮ দশমিক ৮০ টন মিষ্টিকুমড়া, ১ দশমিক ৭০০ টন ফুলকপি রপ্তানি হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের আকাশ ও সমুদ্রপথ দিয়ে ফল রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১৫ টন ফল রপ্তানি হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ১১৬.৪ টন। এর মধ্যে ৯২.৪০০ টন পেয়ারা ও ২৪ টন লেবু রপ্তানি হয়েছে। 

চট্টগ্রামের কাঁচা সবজি রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মাহবুব রানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘করোনার আগেও চট্টগ্রাম থেকে একশ জনের অধিক ব্যবসায়ী সবজি রপ্তানি করতেন। বিদেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের রপ্তানি করা সবজির চাহিদা রয়েছে। সেখানে কম দামে ভারত, পাকিস্তান, ব্যাংকক এবং ভিয়েতনামের সবজি পাওয়া যায়। কিন্তু বাঙালি প্রবাসীরা দেশপ্রেমের তাগিদে নিজের দেশের পণ্যটা বেশি দাম দিয়ে হলেও কিনেন। কিন্তু দেশে সবজির দাম বেড়ে যাওয়া এবং পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সবজি রপ্তানি থেকে অনেকে বিমুখ হয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ছয় মাসে ১৭ বার কার্গো বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তাই সবজি রপ্তানিতে ধস নেমেছে। বর্তমানে ভারতের মুম্বাই থেকে কানাডায় আকাশপথে পণ্য পাঠাতে প্রতি কেজি সবজিতে খরচ পড়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭০ টাকা। আর আমাদের বাংলাদেশ থেকে কানাডায় সবজি পাঠাতে খরচ পড়ছে ৭২০ টাকা। সমুদ্রপথেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এত টাকা দিয়ে তো বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব নয়। এ বছর ফলের মধ্যে আম রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা ও সুযোগ ছিল। আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁর কৃষকদের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিমানভাড়া বেড়ে যাওয়ায় আমরা আর রপ্তানিতে সাহস করিনি।’ 

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সবজি রপ্তানি কমেছে। ফল রপ্তানির হারও খুব একটা বাড়েনি। বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে এমনটা হয়েছে। সেটা আমরা অবগত আছি। বিষয়টি সমাধানে আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলছি। পাশাপাশি রেফার কনটেইনারে করেও সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠানো যায়। সময়সাপেক্ষ হওয়ার কারণে অনেকে আগ্রহ দেখান না। কিন্তু আমরা রপ্তানিকারকদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করছি। তাই আকাশপথের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, ঢাকার অনেক রপ্তানিকারক এখন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’

অস্ট্রেলিয়ায় ‘বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্রাঙ্গণ’

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম
অস্ট্রেলিয়ায় ‘বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্রাঙ্গণ’
অস্ট্রেলিয়ার একটি ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সরকার গত সপ্তাহে একটি বিশাল সৌরবিদ্যুৎ ও ব্যাটারি কারখানার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্প থেকে সিঙ্গাপুরে জ্বালানি রপ্তানি করবে দেশটি। প্রকল্পটি ‘বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্রাঙ্গণ’ নামে পরিচিত। খবর এএফপি ও ডেইলি সাবাহের।

নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সানকেবলের বিনিয়োগ করা ২ হাজার ৪০০ কোটি (২৪ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্পের জন্য পরিবেশগত অনুমোদন দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এবং এর মাধ্যমে অন্তত ৩০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে দেশটি।

এই প্রকল্পটির মধ্যে রয়েছে সৌর প্যানেল, ব্যাটারি কারখানা এবং অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে তারের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগের বিষয়টি। প্রযুক্তি খাতের শত কোটিপতি (বিলিয়নিয়ার) ও পরিবেশকর্মী মাইক ক্যানন-ব্রুকসের পৃষ্ঠপোষকতায় হতে যাচ্ছে প্রকল্পটি।

এএফপির খবরে বলা হয়, যদিও কয়লা ও গ্যাস রপ্তানিতে অস্ট্রেলিয়া এক বিশ্বনেতা এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার পরিবেশবান্ধব (সবুজ) জ্বালানি গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক, তা সত্ত্বেও দেশটির পরিবেশমন্ত্রী তানিয়া প্লিবারসেক দাবি করেছেন যে, এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্রাঙ্গণ। সেই সঙ্গে জ্বালানি খাতের ‘বিশ্বনেতা’ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সক্ষমতার জানান দেবে প্রকল্পটি।

আশা করা যায়, ২০৩০ সালে এই প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে এবং দেশীয় ব্যবহারের জন্য চার গিগাওয়াট (জিডব্লিউ) বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে কারখানাটি। এর মধ্যে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে দুই গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সিঙ্গাপুরে পাঠানো (রপ্তানি) হবে। এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে অস্ট্রেলিয়া।

সানকেবল অস্ট্রেলিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যামেরন গার্নসওয়ার্দি বলেছেন, এই অনুমোদন প্রকল্পটির যাত্রায় একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। 
খবরে বলা হয়, এই অনুমোদন কার্যক্রম, প্রকল্পটি জন্য একটি সবুজ সংকেত হওয়া সত্ত্বেও, এটির বহু প্রক্রিয়া ও অন্যান্য কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনো রয়ে গেছে। কারণ, প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ সিঙ্গাপুরের জ্বালানি বাজার কর্তৃপক্ষ, ইন্দোনেশিয়ার সরকার ও অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।

গার্নসওয়ার্দি বলেছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে চূড়ান্ত বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সানকেবল এখন তাদের পরিকল্পনার পরবর্তী পর্যায়ে প্রচেষ্টা চালাবে।

এএফপি বলছে, পরিবেশ দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ক্রমেই দূরে সরে আসার জন্য বড় বড় সৌর প্রকল্প চালু করার দৌড়ে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। এ ক্ষেত্রে চীন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং প্রতিটি দেশের সম্মিলিত সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ সক্ষমতা তৈরি করছে চীন।

চলতি বছরের শুরুতে তারা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে। এই প্রকল্পটি হলো ‘মিডং’ সৌরবিদ্যুৎ কারখানা। এটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ৩ দশমিক ৫ গিগাওয়াট। এর বিপরীতে অস্ট্রেলিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তীব্র তাপ, বন্যা ও দাবানলের শিকার হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের প্রধান কয়লা ও গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবেই রয়ে গেছে।

যদিও অস্ট্রেলিয়ানরা ঘরোয়া সৌর প্যানেল ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম উৎসাহী জাতি, তবুও সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেছে।

সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩২ শতাংশই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে এসেছে, যা দেশের জ্বালানি খাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪৭ শতাংশ অবদানের তুলনায় অনেক কম। 

প্লিবারসেক এই প্রকল্পকে অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাশিত জ্বালানি ঘাটতি পূরণ এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় ১৪ হাজার ৩০০ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি উপায় হিসেবে দেখছেন। সেই সঙ্গে এই জন্য তিনি প্রকল্পটির প্রশংসাও করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এনার্জি চেঞ্জ ইনস্টিটিউটের পরিচালক কেন বল্ডউইন বলেছেন, এত বড় পরিসরে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ রপ্তানির ক্ষেত্রে এই প্রকল্পটি বিশ্বের প্রথম। তিনি এএফপিকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ সম্পদ বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে মাথাপিছু হিসাবের দিক থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে দ্রুত হারে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ ইনস্টল করছে। 

বল্ডউইন বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে যদি জলবায়ু নিরপেক্ষ লক্ষ্য অর্জন করতে হয়, তাহলে এই গতি ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া গত পাঁচ বছরে সৌর ও বায়ুবিদ্যুতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু নিরপেক্ষ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এই বিনিয়োগ দ্বিগুণ এবং একটা পর্যায়ে গিয়ে তিন গুণে উন্নীত করতে হবে। বল্ডউইন আরও বলেন, ২০৩০-এর দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় ১০০ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ সক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তবে সানকেবলের প্রকল্পটি এই চাহিদার মাত্র ৪ গিগাওয়াট সরবরাহ করতে পারবে।

ক্লাইমেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী অ্যামান্ডা ম্যাকেনজি বলেছেন, নতুন সৌর হাবটি অস্ট্রেলিয়াকে ‘পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পাওয়ার হাউস’ হিসেবে গড়ে তোলার একটি সাহসী পদক্ষেপ হবে এবং এ ধরনের প্রকল্পগুলো ‘জ্বালানি সরবরাহকে সমৃদ্ধ করা’ এবং জলবায়ু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

অ্যামান্ডা ম্যাকেনজি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে বাড়ির ছাদ, অন্যান্য বড় প্রকল্প এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সব স্তরে সৌরবিদ্যুৎ এবং এটির সঞ্চয় কার্যক্রম সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত করতে হবে।

সানকেবলের এই প্রকল্প ক্যানন-ব্রুকসের জন্যও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা একটা সময় ক্যানন-ব্রুকস এই প্রকল্পটিকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ কাজ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তবে পরে আবার তিনি এই প্রকল্পের একজন উৎসাহী বিনিয়োগকারীতে পরিণত হয়েছেন।