ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

মায়ের চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ০১:১৩ পিএম
আপডেট: ১১ মে ২০২৪, ০১:১৩ পিএম
মায়ের চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই
সন্তানের জন্য একজন মা নীরবে হজম করে যান সব ধরনের কষ্ট ও যন্ত্রণা ছবি: পিক্সাবে

জীবনের সফলতার প্রতিটি পদক্ষেপেই যার অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই তিনি হলেন মা। সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি যে আত্মত্যাগ করতে পারে সেই নামটিই হলো মা। স্বার্থপর এই দুনিয়াতে নিঃস্বার্থভাবে শুধু মা-ই আমাদের ভালোবাসতে পারেন।

মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি গঠিত হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও গভীর। এই শব্দের চেয়ে অতি আপন শব্দ আর নেই। জন্মের পর মানুষের মুখে এই শব্দই বেশি উচ্চারিত হয়।

মাকে নিয়ে লেখা হয়েছে শত-সহস্র কবিতা, গান। সেই কবিতা ও গানে ব্যক্তি মা যেমন রয়েছে তেমনি দেশকে মা সম্বোধন করেও লেখা হয়েছে গান, কবিতা। বাংলা সাহিত্যে মাকে নিয়ে লেখা বিখ্যাত বেশ কিছু কবিতা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মনে পড়া’, শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে’, হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’, আল মাহমুদের ‘নোলক’, কালিদাসের ‘মাতৃভক্তি’ উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসেবে আগামীকাল বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছরই ক্যালেন্ডার ধরে দিবসটি আসে, চলেও যায়। এই দিনটিতে মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করেন সন্তান, তাকে ধন্যবাদ জানান, ভালোবেসে জড়িয়ে ধরেন।

১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালন হয়। এরপর ১৯১২ সালে এই দিবসকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। এই প্রচার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায়। এই প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই প্রতিটি দেশে মায়েদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়। বর্তমানে ৪০টিরও বেশি দেশ ওই উৎসব পালন করে থাকে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ‘মাকড়সা’

শুধু মানুষ নয়; প্রকৃতির অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও মায়ের ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। সন্তানের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দেয় এসব প্রাণী। তেমন এক প্রাণীর নাম মাকড়সা। মাকড়সার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। মা মাকড়সা সেই ডিম নিজের দেহে বহন করে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত। যখন বাচ্চা হয় তখন মা মাকড়সা বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজের শরীর বিলিয়ে দেয় তাদের খাবারের জন্য। বাচ্চা মাকড়সারা মা মাকড়সার দেহই খেতে শুরু করে ঠুকরে ঠুকরে। সন্তানের জন্য মা নীরবে হজম করে সব কষ্ট-যন্ত্রণা। এমনি করে একসময় মায়ের পুরো দেহই চলে যায় সন্তানদের পেটে। মাকড়সা মায়ের সন্তানের জন্য এ আত্মত্যাগের কারণেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে মাকড়সার স্থান অনেক ওপরে।

দেশে দেশে ‘মা’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহৃত ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর মধ্যকার উচ্চারণগত এই সাদৃশ্য কীভাবে ঘটল, তা এক বিরাট রহস্য। তবে ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। সেই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেক ‘ম’-এর মতো শোনা যায়। তাই প্রায় সব ভাষায়ই ‘মা’ ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘ম’ বা ‘এম’ দিয়ে শুরু হয়।

‘মা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মম’, যা পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ ‘মাম্মা’র পরিবর্তিত রূপ। ধারণা করা হয়, ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে লাতিন শব্দ ‘মাম্মা’ থেকে। যা ‘স্তন’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই শব্দ থেকে ‘ম্যামেল’ উৎপত্তি। যা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ইংরেজি প্রতিশব্দ। মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ‘মা’কে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দগুলোর উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি। আর সবগুলো শব্দের শুরুতেই ব্যবহৃত হয়েছে ‘এম’ অথবা ‘ম’ বর্ণটি। মাকে জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, ইতালিয়ান ভাষায় ‘মাদর’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, হিন্দি ভাষায় ‘মা’, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় ‘মাত’, সোয়াহিলি ভাষায় ‘মামা’ এবং আফ্রিকান্স ও বাংলা ভাষায় ‘মা’ বলে ডাকা হয়।

কলি

কিন্টসুগি: ভাঙা জিনিস জোড়া দেওয়ার শিল্প

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০২:১৭ পিএম
কিন্টসুগি: ভাঙা জিনিস জোড়া দেওয়ার শিল্প

আমাদের জীবনে এমন অনেক কঠিন সময় আসে, যখন আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। মনে হয় এখানেই সব শেষ। কিন্তু শেষ থেকেও যে শুরু করা যায়, ভাঙনও যে আশ্চর্য সুন্দর উঠতে পারে, তার অনন্য উদাহরণ জাপানের কিন্টসুগি শিল্প। প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো এই শিল্প হচ্ছে অপূর্ণতাকে আলিঙ্গন করার শিল্প, অসম্পূর্ণতার সৌন্দর্যের শিল্প। যখন কোনো কাচ বা সিরামিকের জিনিস ভেঙে যায়, সেই ভাঙা টুকরোগুলো ওরা জোড়া লাগায় সোনার গুঁড়োর বার্নিশ দিয়ে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, ভাঙা কাচ কখনো জোড়া লাগে না। কিন্তু জাপানিরা এই প্রবাদকে মিথ্যে প্রমাণ করেছে। যদিও এই ভঙ্গুর জিনিস জোড়া লাগানোর জন্য অনেকটা সময় প্রয়োজন, তবে মেরামতের পর তা আগের চেয়ে আরও বেশি নান্দনিক হয়ে ওঠে। তখন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করাটা সার্থক মনে হয়।

কিন্টসুগি শিল্পের জন্ম সম্পর্কে জানা যায়, জাপানের এক সেনা কমান্ডার ইয়োশিমাসার প্রিয় একটি চায়ের কাপ ভেঙে যায় এবং তিনি এই কাপটি মেরামত করার জন্য চীনে পাঠিয়েছিলেন। তখন তা ধাতব স্ট্যাপলার দিয়ে মেরামত করে পাঠানো হয়। কিন্তু কমান্ডারকে তা খুশি করে না। এরপর জাপানিরা নিজেরাই ভিন্ন এবং নান্দনিক উপায়ে সিরামিক মেরামতের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এভাবেই একসময় কিন্টসুগি শিল্পের উদ্ভব হয়। কমান্ডারের ইচ্ছা অনুযায়ী নান্দনিকভাবে সমৃদ্ধ কাপ তৈরি করার লক্ষ্যে যে শিল্পের জন্ম হয়েছিল, তা যে এত জনপ্রিয় হবে এবং সুদীর্ঘ বছর ধরে টিকে থাকবে, তা হয়তো তখনো কেউ ভাবতে পারেনি।

যদিও কিন্টসুগি বস্তুর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত একটি শিল্প, তবে এটিতে একটি গভীর দর্শন রয়েছে। কিন্টসুগি দর্শন অনুসারে, ভাঙা, ক্ষয়প্রাপ্ত বা আগের রূপ হারানো কিছুই মূল্য হারায় না। বরং তা আগের চেয়ে আরও মূল্যবান এবং বিশেষ করে তোলা সম্ভব। জাপানিরা অপচয় করতে পছন্দ করে না। তারা রূপান্তরে বিশ্বাসী। যেকোনো ভঙ্গুর কিংবা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠা জিনিসকে তারা রূপান্তর করে নতুন কিছু তৈরি করে।

এই কিন্টসুগি শিল্প যেকোনো পণ্যে ভিন্ন মূল্য যোগ করার পাশাপাশি মানব সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্টসুগি দর্শন অনুসারে, যদি পর্যাপ্ত প্রচেষ্টা করা হয় এবং প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত বিন্দু সাবধানে এবং সূক্ষ্মভাবে মেরামত করা হয়, তবে যেকোনো জিনিস আগের চেয়ে অনেক সুন্দর এবং মূল্যবান হয়ে ওঠে।

সিরামিক আসলে শক্তিশালী, সুন্দর, কিন্তু মানুষের মতোই ভঙ্গুর। কখনো এমন কিছু ঘটতে পারে, যা মানুষের জীবনে গভীর ক্ষতচিহ্ন রেখে যায় এবং মেরামত করা অসম্ভব বলে মনে করা হয়। তবে সেসব পরিস্থিতি অতিক্রম করা এবং অনেক বেশি মূল্যবান এবং শক্তিশালী বন্ধন দিয়ে ভাঙা জায়গাগুলো মেরামত করাও যে জীবনের একটি অংশ, কিন্টসুগি শিল্প থেকে আমরা তা জানতে পারি। আপনি কীভাবে নিজেকে নিরাময় করতে পারেন এবং আপনার ভাঙা জায়গাগুলো মেরামত করতে পারেন, তা আবিষ্কার করতে পারেন এই শিল্পের মাধ্যমে। কিন্টসুগি আপনাকে আপনার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে।

জাপানিরা তাদের ঘরে কিন্টসুগি শিল্পের তৈরি শো-পিস রেখে দেয়। যখন তাদের মেন্টাল ব্রেকডাউন হয়, তারা ওই শো-পিসগুলোর দিকে তাকায় এবং সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়, বুকে বাঁধে নতুন আশা। এসব শো-পিস তাদের জীবনের ভুলত্রুটি কিংবা ব্যর্থতা উদযাপনের স্মারক। এ ব্যাপারটা তাদের ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।

জাহ্নবী

 

স্বাধীনতার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০২:১২ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০২:১২ পিএম
স্বাধীনতার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ

ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে সন্ধ্যার অন্ধকার। অনেক আগেই সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশের প্রান্তসীমানায়। অপ্সরা এখনো সমুদ্রপাড়ে একা দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে কেউ নেই। নেই বাড়ি ফেরার তাড়া। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে অপ্সরা নিজেকে নরক থেকে স্বর্গে স্থানান্তরিত করেছে। গতকাল ঠিক বিকেলে সে তার চেয়েও বড় একটি কাজ করে ফেলেছে। যার কারণে আজ যে এখানে। 

বয়স যখন তার দশ বছর, বাবা-মা মারা যায় এক সড়ক দুর্ঘটনায়। এরপর থেকে সে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকতো। ঠিক সঙ্গে বললে ভুল হবে। তারা তাকে রাখেন কেবল কাজের মেয়ে হিসেবে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা তাকে খাটিয়ে মারতেন। সারা দিন কাজ করেও একটু ফুরসত পেত না সে। বিনাবাক্যে একটার পর একটা কাজ করে যেতে হতো। কাজে ফাঁকি তো দূরের কথা, সামান্য ভুল হলেই রক্ষা নেই। গায়ে হাত, লাঠির আঘাত তো রোজকার ঘটনা। আর সেদিন ঘটেছিল লঙ্কাকাণ্ড!

ঘনিষ্ঠ কিছু মেহমান এসেছিলেন বাড়িতে। বরাবরের মতো রান্নার দায়িত্ব বর্তায় অপ্সরার ওপর। দুই হাতে দশ হাতের কাজ শেষ করেও তার কপালে দুঃখ ঠিকই রয়ে গিয়েছিল। সবগুলো রান্নাই খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু একটি তরকারিতে লবণ বেশি হয়েছিল বলে অপ্সরার চাচা বেজায় রেগে যান। মেহমান বিদায় হওয়ার পর যাচ্ছেতাই বলেন অপ্সরাকে। শুধু কথা নয়, ইচ্ছেমতো মারধরও করেন। মারধরের একপর্যায়ে চাচি তার হাতে আগুনের ছ্যাঁকা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। আগুনের ছ্যাঁকায় অপ্সরার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও কেউ একটু পানিও দেয়নি।

শেষমেশ অপ্সরা পরিকল্পনা করে পালিয়ে যাওয়ার। কিন্তু যাওয়ার আগে আরেকটি কাজ করে যায় অপ্সরা। তার চাচা-চাচির ভবলীলা সাঙ্গ করে। কিন্তু এতে তার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। বরং আনন্দ হচ্ছে, মুক্ত হওয়ার আনন্দ।

আজ থেকে সে আর খাঁচায় বন্দি পাখির মতো নয়, পরাধীনতার শৃঙ্খল ছেড়ে স্বাধীনতার আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ সে। এখন থেকে পুরোটা আকাশই তার; ঠিক পাখির মতো। কিন্তু দিনশেষে সব পাখিই ঘরে ফেরে সন্ধ্যা নামার আগে। রাতের আকাশটা যে তাদের নয়। অপ্সরাও তো পাখির মতো, তাহলে রাতের আকাশ কী তার জন্যও নয়?

পাঠানটুলা, সিলেট

জাহ্নবী

বরষার কদমফুল

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম
বরষার কদমফুল
ছবি: খবরের কাগজ

প্রতিদিনই বিকেলে বিষণ্নতায় মন ছেয়ে যায় প্রীতির। দিনে দিনে প্রীতির সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতির জায়গাটায় বিশেষ সংকট দেখা দেয়, তবু নিজের কাছে অবিশ্বাস্যরকম ভাবলেশহীন সে। প্রীতি দেখতে আহামরি রূপসী না হলেও ছিপছিপে গড়নের অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। মানুষ স্বভাবতই রাগ-ক্ষোভ, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করলেও তার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো।

প্রীতির কাছে বিকেলের ক্ষণটা ভীষণ পছন্দের। বর্ষায় প্রীতির মন বিষণ্নতায় অধিক আচ্ছন্ন থাকে। আজকের দিনের বিরামহীন বৃষ্টি তাকে মোটেই একঘেয়েমিতে ঢেকে দেয়নি। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়েছে সে। শরীরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনের বাড়বাড়ন্ত আবেগকে যে বয়স চাইলেও দমাতে পারে না, সে বয়সটা প্রীতির সঙ্গে ছায়ার মতো লেপ্টে থাকে। কোনোকিছুতেই আর আলগা হয় না।

সময়টা টের পাওয়া লোকেরও একদম অভাব নেই। ভ্রমর যেমন ফুলকে অনুসরণ করে, তেমনই পড়শির চোখেও যৌবনের অস্তিত্ব বারবার ধরা দেয়।

বরষার কদম প্রীতির ভীষণরকম প্রিয়। তার শোবার ঘরের পাশে আগে একটি কদম গাছ ছিল। কিন্তু বাড়ি সংস্কারের সময় গাছটি কাটা পড়ায় সে খুব ব্যথিত হয়। যারপরনাই অবাক হয়। কারও মনেই গাছটির জন্য এতটুকু কষ্ট অনুভূত হয়নি। আজ বিকেলবেলায় প্রীতির ঘরের জানালা দিয়ে ভেতরে ছুড়ে দেওয়া পূর্ণ যৌবনের একগুচ্ছ কদম ফুল এসে মেঝেতে পড়ে। কৌতূহল নিয়ে কদম ফুলের দিকে তাকায় প্রীতি। সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির আদলে ভেতরটাও হিমশীতল করে দিয়ে যায় অদ্ভুত অজানা এক শিহরণ। 

ব্যাকুল পিয়াসীর মতো দারুণ এক সুখানুভূতি ছুঁয়ে দেয় তাকে। দৌড়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখ পড়ে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন যুবক। অপলক তাকিয়ে থাকে অচেনা-অজানা যুবক। প্রীতিও নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে বুঝে উঠতে চায় অপরিচিত এই যুবকের চাহিদা কী? এই প্রথম পূর্ণ যৌবনের অনুভূতি টের পায় নিষ্পাপ সারল্যের প্রীতি। নিজের বোধকে জাগ্রত করে উপলব্ধির ব্যাপকতা বাড়িয়ে সময়ের উপযোগী করে তুলতে চায়।

ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটি হাঁটতে থাকে। ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দৃষ্টিসীমার দূরত্ব বেড়ে যায়, ছেলেটি ঝাপসা হয়ে আসে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ছেলেটি আর পেছনে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস তোলপাড় করা ঝড় শুরু হয় যুবতী মনের অন্দরে। বৈশাখী ঝড়ের আদলে এই ঝড় সবকিছু নতুন করে চেনায়। ফুল চেনায়। যৌবন চেনায়। কাছের কাউকে চেনায় নিবিড়ভাবে!

গাজী তারেক আজিজ, ফুলগাজী, ফেনী/আবরার জাহিন

গাছ হাঁটতে পারে?

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:২১ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:২১ পিএম
গাছ হাঁটতে পারে?
ছবি: আবরার জাহিন

পৃথিবীতে ছোট-বড় মিলিয়ে অনেক ধরনের গাছ আছে। কোনোটি বড় আবার কোনোটি ছোট। এসব গাছের কোনোটির কাণ্ড মোটা আবার কোনোটির কাণ্ড লিকলিকে চিকন। কোনো কোনো গাছ আকাশ সমান উঁচু হয় আবার কোনো গাছ খাটোতেই সুন্দর। গাছেরও যে জীবন আছে তা আমরা জানি। গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে মানুষের প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন গাছ চলতে পারে? ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে আসছি গাছ যেখানে জন্মায় সেখানেই শিকড় দিয়ে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিস্ময়ের এই পৃথিবীতে এমনো গাছ আছে যারা চলতে পারে। মাটি আঁকড়ে না থেকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে হেঁটে বেড়ায়।

অদ্ভুত এই গাছের নাম ‘ক্যাশাপোনা’। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘ওয়াকিং পাম’ বা ‘চলন্ত পাম’। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘Socratea exorrhiza’। পামজাতীয় এই উদ্ভিদটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার রেইন ফরেস্টে দেখা মেলে। গাছটির উচ্চতা প্রায় ২৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ হওয়ায় এর শিকড়ে শ্বাসমূল এবং ঠেসমূলের উপস্থিতি রয়েছে। তবে এর অস্বাভাবিক শিকড় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রেইন ফরেস্টে দেখা মেলে এই গাছের। এই জায়গার মাটি আলগা এবং সেখানে পানি ধারণক্ষমতা খুব কম। তাছাড়া প্রায় সেখানে ভূমিক্ষয় হয়। তাই এর শিকড় হেঁটে চলে।

মাটি আলগা হওয়ায় শিকড়গুলো মাটি থেকে উঠে আসে। আবার এই অঞ্চলে সূর্যের আলো ঠিকমতো পৌঁছায় না। তাই একটু সূর্যের আলোর ছোঁয়া পেতে স্থান পরিবর্তন করে গাছটি। পাশাপাশি নতুন ঠেসমূল তৈরি করে গাছটি। আগের শিকড়গুলো রেখে যায় এবং সেই স্থানে নতুন উদ্ভিদ গজায়। গাছটি রেখে যায় তার অঙ্কুর। গাছটি এভাবে জলবায়ুতে বেঁচে থাকতে হেঁটে চলে। গবেষকরা বলেন, গাছটি প্রতিদিন তার স্থান থেকে দুই বা তিন সেন্টিমিটার নড়ে। বছরে তা প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পৃথিবীতে অনেক পাম জাতীয় উদ্ভিদ আছে। তবে ‘ক্যাশাপোনা’ উদ্ভিদই হাঁটতে পারে। এই পাম জাতীয় উদ্ভিদগুলো অ্যামাজনের আদিবাসী লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করে এবং ঘর নির্মাণে ব্যবহার করে। তাছাড়া এই গাছে হলুদ এক ধরনের ফলও হয়ে থাকে।

এই গাছের চলনে বৃষ্টিও ভূমিকা রাখে। বৃষ্টি অনেক প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা দিয়ে থাকে, যা এটিকে যথেষ্ট শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। ফলে গাছটি তার পরিবেশের চারপাশে চলাফেরা করতে পারে। যেহেতু এই অঞ্চলে পানি ধারণক্ষমতা কম তাই বৃষ্টি অনেকাংশে সাহায্য করে গাছটিকে।

১৯৮০ সালে জীববিজ্ঞানি জন এইচ বোডলি ক্যাশাপোনা গাছের এই হেঁটে চলার ব্যাপারটা ব্যাখা করেন। তিনি বলেন, গাছটি নতুন শিকড় তৈরি করে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে আগের স্থানে অঙ্কুরোদগোম করে। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, এই গাছে সূর্যের আলো পৌঁছানোর জন্যও গাছটি তার শিকড় দিয়ে স্থান পরিবর্তন করে।

স্লোভাক একাডেমি অব সায়েন্সেস ব্রাটিসলার আর্থ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের প্যালিওবায়োলজিস্ট পিটার ভারসানস্কি বলেন, তিনি এই প্রথম এই ধরনের উদ্ভিদ দেখেছেন। শিকড়গুলো নতুন মাটি খুঁজতে স্থান পরিবর্তন করে বলে তিনি মনে করেন। তিনি দুই মাস সেই অঞ্চলে অভিযান চালান এবং ১৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ খুঁজে পান। এই গাছটির নাম তিনি বিপন্ন উদ্ভিদের তালিকায় উঠান।

ইকুয়েডরের এই অঞ্চলে শুধু ওয়াকিং পাম নয়, আরও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পাওয়া যায়। যা পৃথিবীর অন্য কোনো জায়গায় পাওয়া যায় না। ইকুয়েডরের এই সংরক্ষিত অঞ্চলকে ইউনেস্কো সংরক্ষিত অরণ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। জায়গাটির নাম ‘সুমাকো বায়োস্ফিয়ার’। দুর্গম এই জায়গায় ভ্রমণ করতে প্রায় একদিন সময় লাগে।

/আবরার জাহিন

বিশ্বের চার ব্যতিক্রম স্কুল

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম
বিশ্বের চার ব্যতিক্রম স্কুল
ছবি: সংগৃহীত

প্রচলিত স্কুলে শিক্ষার্থীরা স্কুলব্যাগ, খাতা-কলম আর ড্রেস পরে ক্লাসে যায় এবং পাঠদান নেয়। মাঝে মধ্যে শিক্ষকদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট পায় এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেগুলো মূল্যায়ন করার মধ্য দিয়ে শিক্ষক শিশুর প্রতিভা এবং দক্ষতার প্রতিফলন ঘটান। কিন্তু এমন কিছু স্কুল আছে যেখানে পাঠদান একটু ব্যতিক্রম। এমন চার স্কুল নিয়েই আজকের আয়োজন।

উইচ স্কুল: এ স্কুলটি মূলত জাদুবিদ্যার প্রয়োজনীয়তা এবং এর ওপর বিশ্বাস করাকে শেখায়। আমেরিকার শিকাগো ইলিনয় ও সালেম ম্যাসাচুসেটে উইচ স্কুলের ক্যাম্পাস রয়েছে। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে রেভ এড হাব্বার্ড। স্কুলটি সাধারণত অনলাইনে কোর্স অফার করে। ২০০১ সালে যখন স্কুল যাত্রা শুরু করে তখন এর ছাত্রছাত্রী ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার। ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও স্কুলটি এখনো সফলভাবে চলছে। সারা বিশ্ব থেকে এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। 

ব্রুকলিন ফ্রি স্কুল: নাম অনুসারেই ফ্রি স্কুল ব্রুকলিন। এটি ইউএসএতে অবস্থিত। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই স্কুলের কোনো নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম বা শিক্ষার্থীদের অনুসরণ করার মতো কোনো নিয়ম নেই। স্কুলের পেছনে ধারণা হলো শিশুদের তাদের পথ খুঁজে পেতে অনুমতি দেওয়া। যাতে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কী শিখতে চায় এবং কোন ক্লাসে তারা যোগ দিতে চায়। যদি তারা ক্লাসে বসতে আগ্রহী না হয়; তাহলে তারা ঘরেই থাকতে পারে। বিভিন্ন কারণে স্কুলটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এলফ স্কুল: এ স্কুলটি আইসল্যান্ডের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবস্থিত। এটি প্রধানত এলভস এবং আইসল্যান্ডের লোককাহিনি সম্পর্কে শিক্ষা দেয় যারা সাধারণ মানুষের কাছে অদৃশ্য। ১৯০০ সালে এই স্কুলটি চালু হওয়ার পর থেকে ৯০০০ জনেরও বেশি লোক স্কুলে ভর্তি হয়েছে যার বেশির ভাগই বিদেশি। স্কুলটি এলভস শিক্ষার সার্টিফিকেশন  দেয়, যা এক দিনের মধ্যে অর্জন কর যায়। তারা জনপ্রিয় আইসল্যান্ডিক লোককাহিনি নিয়ে গবেষণা করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ম্যাগনাস স্কারফিওইনসন এই বিষয়ে বিভিন্ন বই লিখেছেন।

মহর্ষি স্কুল: এই স্কুল ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মহর্ষি স্কুলে গণিত, বিজ্ঞান বা ইংরেজির মতো বর্তমান বিশ্বের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো শেখানো হয় না। তাদের শিক্ষার পদ্ধতি চেতনাভিত্তিক, যেখানে তারা অতীন্দ্রিয় ধ্যান শেখায়। শিক্ষাদানের অপ্রচলিত রূপ সত্ত্বেও এই স্কুলটি অভিভাবকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে এবং যুক্তরাজ্যের শীর্ষ স্কুলগুলোর মধ্যে সেরা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।  

/আবরার জাহিন