ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো বই

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৪, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ০১:০১ পিএম
মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো বই
‘দেস দেসতিনেস দে লামে’ নামে এই বই বাঁধাইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে নারীর ত্বক। (সংগৃহীত)

চামড়ায় বাঁধানো বই কখনো দেখেননি এমন মানুষ বিরল। কিন্তু সেই চামড়া যদি মানুষের হয় তাহলে? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ জিনিস অবাস্তব নয় একেবারেই। রয়েছে অকাট্য প্রমাণও।

বই বাঁধাইয়ের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মানুষের চামড়া ব্যবহার করে বেশ কিছু বই একসময় বাঁধানো হয়েছে। এই কর্মটির একটি গালভরা নামও রয়েছে- ‘অ্যানথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’।

২০১৯ সালের একটি হিসাব বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন গ্রন্থাগারে ছড়িয়ে রয়েছে এমন বই। ‘অ্যানথ্রোপোডার্মিক বুক প্রোজেক্ট’ নামের সেই সমীক্ষা জানাচ্ছে, বিভিন্ন গ্রন্থাগারের ৫০টি বইকে সন্দেহ করা হয় মানুষের চামড়ায় বাঁধানো বলে। তার মধ্যে ৩১টি সম্পর্কে সন্দেহ ঘনীভূত হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে এগুলোর মধ্যে ১৮টিকে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিতভাবে মানুষের চামড়ায় বাঁধানো বলে চিহ্নিত করেছেন।

প্রায় ১০ বছর আগের কথা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে উদ্ধার করা হয় ‘দেস দেসতিনেস দে লামে’ (ডেস্টিনিজ অব দ্য সোল) নামের একটি বই।

জানা গেছে, ১৮৮০ সালে লেখা হয় এ বইটি। আত্মা ও মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে লেখা এ বইটির লেখক আর্সেন হোসায়ের। ১৯৩৪ সাল থেকে বইটি ছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফটন লাইব্রেরিতে। এরপর একটা পর্যায়ে বইটির মলাট নিয়ে সন্দেহ হওয়ার পর ব্যাপক অনুসন্ধান চালান বিজ্ঞানী ও পর্যবেক্ষকরা। অবশেষে ২০১৪ সালে এসে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হন গবেষকরা। বইটির মলাটে মানুষেরই চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে বলে শতভাগ নিশ্চিত হন তারা।

ইউনিভার্সিটি বলেছে, বইটির প্রথম মালিক বই সংগ্রাহক, চিকিৎসক লুডোভিক বোল্যান্ড সেই সময়ে মানসিকভাবে অসুস্থ এক নারীর শরীর থেকে চামড়া নিয়েছিলেন, যিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। অবশ্য কেন মানুষের চামড়া দিয়ে বই বাঁধাইয়ের মতো উদ্ভট কাজটি করেছিলেন ওই ব্যাখ্যাও বইয়ের ভেতর একটি চিরকুটে দিয়ে গিয়েছিলেন ডা. বোল্যান্ড। চিরকুটে ওই চিকিৎসক লিখেছিলেন, ‘মানব আত্মা নিয়ে লেখা একটি বই অবশ্যই মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধাই হওয়ার দাবি রাখে।’

বইটির বাঁধাই অপসারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে হার্ভার্ড বলেছে, ‘বইটির তদারককারীদের অতীতের ব্যর্থতা, যা মানুষের মর্যাদাকে আরও আপত্তিকর এবং যার দেহাবশেষ বাঁধাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল তাকে হেয় করেছে।’

অজ্ঞাত ওই নারীর এই দেহাবশেষের সম্মানজনক সৎকারের পাশাপাশি এখন ওই নারীর জীবন নিয়েও গবেষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাফটন লাইব্রেরি।

ইংরেজ গ্রন্থ বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড ব্রুক-হিচিং তার ‘দ্য ম্যাডম্যান’স লাইব্রেরি’ গ্রন্থে এই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে গিয়ে প্রথমেই যে প্রশ্নটি তুলেছেন তা হলো- এত কিছুর চামড়া থাকতে কেন মানুষের চামড়া দরকার পড়ল এসব বইয়ের বাঁধাইকর্মে? আরও বিস্ময়ের ব্যাপার, এসব বাঁধাইকর্ম কিন্তু সংঘটিত হয়েছিল ১৮ এবং ১৯ শতকের ইউরোপে। অর্থাৎ যে সময়ে যুক্তিবাদের প্রবল বন্যা এসে ভাসিয়ে দিচ্ছে যাবতীয় কুসংস্কার আর উদ্ভট প্রথা, সেই সময় মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল এসব বই।

ব্রুক-হিচিং জানাচ্ছেন, ইউরোপ এবং আমেরিকায় সেই সময় মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো হতে থাকে প্রধানত দুই ধরনের বই। এক. বিভিন্ন অপরাধের ‘কেস স্টাডি’ এবং দুই. চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত বইপত্র।

১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় গুজব রটে যে, প্যারিসের উপকণ্ঠে মিউডন শহরে মানুষের চামড়কে বই বাঁধানোর উপযোগী করে তোলার জন্য এক ট্যানারি বানানো হয়েছে। সম্ভবত বিপ্লবের ভয়াবহতা থেকেই এমন গুজবের জন্ম হয়েছিল।

এই মুহূর্তে বিশ্বে মানুষের চামড়ায় বাঁধানো যে কটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার মধ্যে অন্যতম ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলের প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত খুনের আসামি জন হরউডের চামড়ায় বাঁধানো একটি বই। এই বইয়ে বর্ণিত হয়েছিল হরউডের অপরাধ, বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের বর্ণনা।

১৮২৮ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় ১৬টি ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তে ধরা পড়ে, এই খুনগুলো করেছিলেন উইলিয়াম বার্ক এবং উইলিয়াম হেয়ার নামের দুই ব্যক্তি। তারা মরদেহগুলো রবার্ট নক্স নামের এক শরীরবিদ্যা বিশেষজ্ঞের কাছে  বিক্রি করেন। নক্স সেগুলো তার পরীক্ষায় ব্যবহার করতেন।

১৮২৯ সালে বার্কের ফাঁসি হয়। তার চামড়া দিয়ে একটি বই বাঁধানো হয়। বার্কের ‘ডেথ মাস্ক’ এবং সেই বই রক্ষিত আছে এডিনবরার সার্জন’স হল মিউজিয়ামে।

১৮৬৩ সালে বাঁধানো এক বইয়ের নাম ‘ডি হিউম্যানি কর্পোরিস ফ্যাব্রিকা’। এর লেখক আন্দ্রে ভেসালিয়াস নামে ১৬ শতকের এক চিকিৎসক। তাকে আধুনিক শরীরবিদ্যা চর্চার জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই গ্রন্থের একটি কপি মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধান হোসে শাভায়ে নামে এক বাঁধাইকর। কথিত, শাভায়ে নাকি সারা জীবনে মানব ত্বক ব্যবহার করে চারটি বই বাঁধিয়েছিলেন।

১৯০৩ সালে নিউইয়র্কের গ্রোলিয়ের ক্লাবে বই বাঁধাই সংক্রান্ত এক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। তার একটি অংশে রাখা হয় উদ্ভট কিছু বই। সেখানে জার্মান চিত্রকর হোলবাইনের বিখ্যাত ছাপাই ছবির সিরিজ ‘ডান্স অব ডেথ’-এর একটি সংকলন গ্রন্থ। ১৯ শতকে বাঁধানো এই বইটিতেও ব্যবহৃত হয়েছিল মানুষের চামড়া।

শিকাগোর নিউবেরি লাইব্রেরিতে ১৮৪৮ সালের একটি আরবি পাণ্ডুলিপি রক্ষিত আছে। তার সঙ্গে একটি ‘নোট’ পাওয়া গিয়েছিল যাতে বলা ছিল যে, পাণ্ডুলিপিটি মানুষের চামড়ায় বাঁধানো। এই পাণ্ডুলিপিটির কথা আমেরিকান লেখক অড্রে নিফেনেগ্গার তার জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দ্য টাইম ট্রাভেলার্স ওয়াইফ’ (২০০৩)-এ উল্লেখ করেছেন। প্রসঙ্গত, এই উপন্যাসের পটভূমিকা নিউবেরি।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহে তিনটি এমন বই রয়েছে বলে জনশ্রুতি ছিল। পরে বিশেষজ্ঞরা সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পান, তার মধ্যে দুটি ভেড়ার চামড়ায় বাঁধানো। আর একটি বই লুডোভিক বোল্যান্ডের বাঁধানো সেই গ্রন্থ।

মানব ত্বকে বাঁধানো বই তাদের ছায়া ফেলেছে সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতেও। আমেরিকান সাহিত্যিক এইচপি লাভক্র্যাফটের (১৮৯০-১৯৩৭) ‘দ্য হাউন্ড’ গল্পে এক কবর-চোরের সংগ্রহে থাকা এমন একটি বইয়ের উল্লেখ আছে।

লাভক্র্যাফটের গল্পে সেই চোর দাবি করছে, সে মানুষের চামড়ায় বাঁধানো একটি পোর্টফোলিও হস্তগত করেছিল যেখানে বেশ কিছু উদ্ভট ছবি ছিল। চোরের দাবি, সেই ছবিগুলো নাকি স্পেনীয় চিত্রকর ফ্রান্সেস্কো গোইয়ার (১৭৪৬-১৮২৮) আঁকা। কিন্তু গোইয়া কখনো তা স্বীকার করেননি। প্রসঙ্গত, তথাকথিত ভয়ের ছবি আঁকার জন্য গোইয়ার খ্যাতি ছিল।

আমেরিকান হরর ছায়াছবি ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘ইভিল ডেড’-এ বেশ কয়েকবার ব্যবহৃত হয়েছে ‘নেক্রোনমিকন এক্স-মর্টিস’ নামের একটি বইয়ের প্রসঙ্গ। সেই বই যে শুধু মানুষের ত্বকে বাঁধানো তা-ই নয়। তা নাকি মানুষের রক্তে লিখিত। প্রসঙ্গত, ‘নেক্রোনমিকন’ লাভক্র্যাফটের বিভিন্ন রচনায় উল্লিখিত একটি কল্পিত বই, যা নাকি সুমেরিয়ার এক কালো-জাদুকরের লেখা।

আজকাল মানুষের চামড়া দিয়ে বই মলাট করাকে উদ্ভট বা ঘৃণ্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হলেও এক সময় অবশ্য এর প্রচলন ছিল। বোল্যান্ড লিখেছিলেন, ‘‘ষোড়শ শতাব্দী থেকে ‘অ্যানথ্রোপোডার্মিক’ শব্দটি বেশ প্রচলিত, যার অর্থ হচ্ছে মানুষের চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট করা। ওই শতকে এর প্রচলন ছিল।’’

তখন কেউ অপরাধ করলে তার চামড়ায় তা লিখে দেওয়া হতো। অনেক সময় কেউ কেউ মরে যাওয়ার পর তার চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট বানিয়ে তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের অনুরোধও করে যেতেন।   

ইন্টারনেট অবলম্বনে

কলি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর খামার

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর খামার
ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এবং কৃষিকাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষিকাজের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করত মানুষ। কৃষিকাজের সুবাদে মানুষ তৈরি করেছে খামার। এককালে গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে খামার দেখতে পাওয়া যেত। গরুর, ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগির খামার ছিল কৃষকদের বাড়ির অংশ। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে খামার তেমন দেখা না গেলেও বিভিন্ন রূপে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে দেখা মেলে খামারের।

বিভিন্ন কোম্পানি অর্থনৈতিক খামার তৈরি করে। যা ডেইরি ফার্ম নামেও পরিচিত। বর্তমানে ডেইরি ফার্ম থেকে আমিষ উপাদানের একটা বিরাট অংশ পাওয়া যায়। আজকে আমরা জানব বিশ্বের সবচেয়ে বড় খামার সম্পর্কে। যা অন্যতম বৃহত্তম দেশ চীনে অবস্থিত।

বিশ্বের বড় বড় স্থাপনা, বাঁধ, বিল্ডিং নির্মাণে চীনের জুড়ি মেলা ভার। বিশাল উঁচু উঁচু বাঁধ কিংবা কৃত্রিম সূর্য বানানো চীন তৈরি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খামার। চীনের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মুদানজিয়াং সিটি মেগা ফার্ম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেইরি ফার্ম এবং অন্যতম বৃহত্তম কৃষি খামার। প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার একর জমিতে অবস্থিত এই খামার মূলত ডেইরি ফার্ম। দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল এই খামার।

২০১৫ সালে রাশিয়ান দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা দেয় তখন রাশিয়ান এবং চীনা বিনিয়োগকারীরা চুক্তি করে গড়ে তুলে বিশাল এই খামার। রাশিয়া এবং চীনের বিশালসংখ্যক দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এই খামার।

মুদানজিয়াং সিটি মেগা ফার্মে প্রায় ১ লক্ষাধিক গরু রয়েছে। যেখানে থেকে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন লিটার দুধ উৎপাদন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং উরুগুয়ে থেকে দুগ্ধজাত গরু এই খামারে আমদানি করা হয়। গরুগুলোকে শস্য ও পশুখাদ্যের মিশ্রণ খাওয়ানো হয়। গরুগুলোকে মাঠে চরানোর পরিবর্তে ঘরের ভেতর রাখা হয়। বিশাল জমির ওপর সারি সারি ঘর। আর সেইসব ঘরের ভেতর গরু রাখা হয় আমেরিকান পদ্ধতিতে।

যেখানে খুব সীমিত সূর্যের আলো এবং পর্যাপ্ত বাতাস পাওয়া যায়। গরুগুলোর থাকার বিছানা দিনে দুবার পরিবর্তন করা হয়। গাভিগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় দিনে তিনবার দুধ দেয়। গাভির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অধিক দুধ দোহনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বর্তমানে এই খামার যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম খামার থেকে ৫০ গুণ বড়।

শুধু রাশিয়া নয় চীনের জনগনের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সাহায্য করছে। প্রতি বছর এখানে গাভি উৎপাদন ৩০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা রাশিয়ার আগের আমদানির তুলনায় বেশি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর খামারটিও চীনে অবস্থিত। চীনের আনহুইতে অবস্থিত খামারটি সিটি মেগা ফার্মের প্রায় অর্ধেক। 
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এগ্রিকালচার ডেইরি, ডেইলি মেইল

/আবরার জাহিন

নারীদের ভয়ে ঘরে বন্দি ৫৫ বছর!

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:১০ পিএম
নারীদের ভয়ে ঘরে বন্দি ৫৫ বছর!
ছবি: সংগৃহীত

স্বভাবতই মানুষ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি আকর্ষণ অনুভব করে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এটাই স্বাভাবিক। পুরুষরা নারীদের প্রতি এবং নারীরা পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে কিন্তু আফ্রিকান শহর রুয়ান্ডার এক ব্যক্তি তার জীবনের ৫৫ বছর নারীদের ভয়ে একটি ঘরে কাটিয়েছেন! ভাবা যায়!

কলিটক্সে নজামউইতা (Callitxe Nzamwita) নামের ৭১ বছর বয়সী সেই পুরুষ জানিয়েছেন, তিনি নারীদের দেখলে আতঙ্কিত হন এবং ভীষণ ভয় পান। তাই ৫৫ বছর ধরে কোনো নারীকে দেখেননি তিনি এবং এটা তিনি করেছেন নিজের ইচ্ছাতেই! তার এই নারী আতঙ্কের কারণে তিনি ৫৫ বছর ধরে নিজেকে এমনভাবে বন্দি করে ফেলেছেন, যাতে তাকে নারীদের মুখোমুখি না হতে হয়। নারীদের দেখবেন না বলে এই ব্যক্তি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আর এজন্য কলিটক্সে নজামউইতা প্রায় ১৫ ফিট উচ্চতায় নিজের জন্য বাড়ি তৈরি করেছেন। নারীদের দেখবেন না বলে এই ব্যক্তি সর্বদাই সচেতন থাকেন। তাই সেখানকার নারীরা তার ঘরের দিকে বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং এবং পোশাক নিক্ষেপ করলেও তিনি তাতে সাড়া দেন না। তার ঘরের দরজাও খোলেন না। যখন সবাই চলে যায় তখন বাইরে ফেলা খাবার এবং পোশাক তিনি ঘরের ভেতরে নিয়ে যান এবং ব্যবহার করেন।

কলিটক্সে জানান, আমি নিজেকে আলাদা করে রেখেছি এবং আমার বাড়িতে বেড়া দেওয়া আছে কারণ আমি নিশ্চিত করতে চাই যেন নারীরা আমার কাছাকাছি না আসে। প্রতিবেশীরা জানান, যখনই তিনি তার বাড়ির আশপাশে কোনো নারী আছেন এমন অনুভব করেন, তখনই তিনি বাড়ির ভেতরে চলে যান এবং নিজেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, কলিটক্সে গাইনোফোবিয়া নামক একটি মানসিক রোগে ভুগছেন, যেখানে নারীদের প্রতি ভয় তৈরি হয় একজন পুরুষের মনে।

মূলত গাইনোফোবিয়া বা গাইনেফোবিয়া হলো নারীদের একটি রোগাক্রান্ত এবং অযৌক্তিক ভয়, এক ধরনের নির্দিষ্ট সামাজিক ফোবিয়া। এটি প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি আধুনিক ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক গবেষক এবং লেখক গাইনোফোবিয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনিতে রহস্যময়, জাদুকর দেহ-পাত্র বা ভীতি প্রদর্শনকারী মহান দেবী হিসেবে নারীর ধারণা প্রচলিত।

ভারতে দেবী কালী দ্য টেরিবল হলেন বিশ্বের মাতা এবং মানবজীবনের ভয়ংকর, বিভীষিকাময় এবং রক্তপিপাসু ধ্বংসকারী। তিনি নারী অবতারের বিস্তৃত অ্যারের মাধ্যমে তার ধ্বংসকে আংশিকভাবে প্রকাশ করেন এবং মহান দেবী হিসেবে নারীকে প্রায়শই প্রাচীন গ্রিক পুরাণে মৃত্যুর দেবী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রাচীন গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে কমপক্ষে সাতজন নারী দেবীকে স্তন্যদানকারী মা এবং মৃতদের রানি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

নারীকে ভয় পাওয়া প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনির পাশাপাশি আধুনিক ক্ষেত্রেও পাওয়া যায় আর তা ডাক্তারদের ভাষ্যমতে গাইনোফোবিয়া নামক এক ধরনের মানসিক রোগ। আর কলিটক্সে নজামউইতা গাইনোফোবিয়ায় আক্রান্ত। কলিটক্সে নজামউইতা জানান, কীভাবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ অর্থাৎ নারীরা তার ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। ১৬ বছর বয়সে তিনি অনুভব করেন যে, নারী ঘনিষ্ঠতার ভয় সহ্য করা খুব বেশি কঠিন। আর তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, যেহেতু তিনি তার চারপাশের নারীদের সহ্য করতে পারেন না তাই তিনি তার বাড়ির চারপাশে একটি কাঠের বেড়া তৈরি করেন এবং তারপর থেকে ৫৫ বছর তার বাড়ির বাইরে পা রাখেননি। নারীদের ভয় পাওয়ার কারণেই তিনি নিঃসঙ্গ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

/আবরার জাহিন

 

এক টুকরো গোশত

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
এক টুকরো গোশত
ছবি: খবরের কাগজ

দুই হাঁটু একপ্রকার বাঁকা হয়ে ছেলেটি হাঁটছে। ছেলেটির দুই হাতের তালু একসঙ্গে যেন লাগানো। বয়সের চোখে হাসিবের দিকে তাকালে বলতে হবে ১৫ বছরের এক কিশোর। হাসিবের অদ্ভুত চলনে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই।

হাসিব তার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী বাহাদুর শাহ পার্ক চক্কর দিচ্ছে। হঠাৎ করেই হাসিব পার্কের মেঝেতে বসে পড়ল। তার বাঁ চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। চোখের পানির সঙ্গে গালে থাকা বালুগুলো নিচে পড়ছে। প্রতিটি মানুষের হরেক রকম বিশেষণ থাকলেও হাসিবের একরকম বিশেষণ। তা হলো অদ্ভুত। যেমন- হাসিব কখনো কান্না করে না। তবে খুব দুঃখবোধ যখন হাসিবকে কাঁদায়, তখন শুধু বাম চোখ দিয়ে কান্না করে।

হঠাৎ গরুর হাম্বা শব্দটি হাসিবকে কাঁপিয়ে তুলল। মেইন রাস্তার অনেকগুলো ট্রাক থেকে একপ্রকার গগনবিদারী আওয়াজ হলো। হাসিব ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল, প্রায় ১০টি ট্রাকে গরু আর গরু। এমন পরিবেশ দর্শনে উপস্থিত সবাই আনন্দে চিৎকার শুরু করল। আর হাসিব হাসতে শুরু করল। হাসিব নিজেও জানে না এ হাসির কারণ।

রাত নামল। সেই সঙ্গে হাসিবের চোখে ঘুমও নামল। ঘড়ির কাঁটা বলছে, এখন রাত ৯টা বাজে। হঠাৎ আকাশে কীসের যেন আওয়াজ হলো। এ ভয়ংকর আওয়াজে হাসিব থতমত খেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল। হাসিব চোখ কচলাতে কচলাতে দেখতে পেল, এ শহর আতশবাজির আর্তনাদে মিথ্যা আনন্দে মত্ত। হাসিব পাশে থাকা একটি ছেলেকে বলল, ‘ভাই এইল্লা না ফুটাইয়া টেহাডা বালা কামে লাগাইলে অয় না?’ ছেলেটি এ কথা শুনে একটি বাজিতে আগুন লাগিয়ে হাসিবের দিকে নিক্ষেপ করল। বাজির বিকট আওয়াজে হাসিব ‘ও মাগো’ বলতে ভুল করল না। সে কিছু না বলে ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। এভাবেই রাতের আকাশে অজস্র টাকা আতশবাজির রূপে নিঃশেষ হলো।

পবিত্র ঈদুল আজহার সালাত আদায়ে সবাই ঈদগাহে সমবেত হয়েছে। সম্মানিত ইমাম সালাম ফিরানোর পর খুতবা পেশ করলেন। সবাই বুকে বুক মিলিয়ে প্রশান্তির প্রশ্বাসে বলছে, ঈদ মোবারক।

হাসিব সালাত শেষে বাহাদুর শাহ পার্কে আসল। পার্কে এসে দেখতে পেল, অনেকেই পশু জবাই করেছে। নিচে পড়ে থাকা একটা পলিথিন নিয়ে হাসিব ভাবতে লাগল, সবাই দেখি গোশত সংগ্রহ করতেছে, তাইলে আমিও শুরু করি। যেই ভাবা সেই কাজ। হাসিব পলিথিন নিয়ে একটি জবাই করা গরুর মালিককে বলল, ‘ভাই কয়েক টুকরো গরুর গোশত দিবেন’। গরুর মালিক এক টুকরো গোশত দিয়ে বলল, ‘বোকা! কয়েক টুকরো নয়; বলবি এক টুকরো গোশত দেন। যে কথা বললে গোশত পাবি, সে কথাটা বলবি’।

এবার হাসিব বাহাদুর শাহ পার্কের বাইরে রাস্তার পাশে জবাই করা গরুর মালিককে বলল, ‘ভাই এক টুকরো গোশত দিবেন’? এ কথা শোনামাত্র লোকটি বিরক্তির সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘সর তো পাগল ছাগল’। এমন আচমকা ধাক্কায় জিপ গাড়ির চাকার নিচে হাসিবের মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।

বাহাদুর শাহ পার্কের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশরা পার্কের একটি ফাঁকা স্থানে হাসিবের লাশ দাফন করল। হঠাৎ একদিন কবরের উপরে একটি ফেস্টুন দেখা গেল। সেখানে লেখা ছিল ‘এক টুকরো গোশত’। আমি এ কবরের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘হাসিব তুমি জানবে না, কেউ তোমার কাহিনিটা সমাজের কাছে পৌঁছে দিয়েছে’। হঠাৎ করে অনুভব করি, আমার বা চোখ থেকে পানি ঝরছে। 


লেখক: ইবনু মাসউদ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা /আবরার জাহিন

পকেট মোমবাতি

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
পকেট মোমবাতি
ছবি: সংগৃহীত

১৯ শতকের শেষ দিকে ও ২০ শতকের শুরুতে ইউরোপীয় পতিতালয়গুলোয় এক ধরনের ছোট মোমবাতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। ‘বুগিস দে পোচে’ (পকেট মোমবাতি) নামের এ মোমবাতিগুলো পতিতালয়ের মোমবাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বিশেষ কারণে এটি ব্যবহারের জন্য এ নামে ডাকা হতো।

বলছি ভিক্টোরিয়ান যুগের কথা। সে সময় ইউরোপে স্কুলের চেয়ে বেশি ছিল পতিতালয়ের সংখ্যা। তবে সমাজের ঊর্ধ্বস্থ নারীরা এ ধরনের পেশার সঙ্গে কখনোই জড়াতেন না। যে সময়ের ঘটনা, তখন নারীরা এত বেশি বৈষম্যের শিকার হতেন যে, পতিতাবৃত্তি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তারা তেমন উপার্জন করতে পারতেন না।

পতিতা নাম দিয়ে এ গোষ্ঠীকে বোঝানো হতো যে তারা অত্যন্ত নিচু শ্রেণির। সমাজের উত্তম ও ঊর্ধ্বস্থ নারীরা কখনোই এ ধরনের পেশার সঙ্গে জড়িত হতেন না। যেসব নারী এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতেন, তাদের বলা হতো ‘ফলেন উইমেন’ অর্থাৎ ‘পতিত নারী’। সে সময় ইউরোপে পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে বৈধ ছিল। এমনকি পুরুষদের এতে উৎসাহিত করা হতো। সে যুগের পুরুষরা যৌন ইচ্ছার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন বলে মনে করতেন, যাতে তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। এমনকি বর্তমান সময়েও ইউরোপের প্রায় সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ রয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম পেশাগুলোর একটি হলো পতিতাবৃত্তি। তবে কোনোকালে কোনো দেশের মানুষই বিষয়টি নিয়ে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি। ১৮৮০ থেকে ১৯০৫ সালের মধ্যে ‘বুগিস দে পোচে’ নামের ম্যাচবক্সের মতো বাক্সে ছোট এক ধরনের মোমবাতি পাওয়া যেত। বাক্সের কভারে থাকত কোনো নারীর ছবি। বাক্সের একপাশে থাকা একটি ছোট গর্তে রেখে মোমবাতিগুলো ব্যবহার করা হতো। ফ্যাকাশে সাদা এসব মোমবাতি সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ মিনিট জ্বলতে পারত।

মূলত মোমবাতিগুলো টাইমার হিসেবে ব্যবহার করতেন তখনকার যৌনকর্মীরা। খদ্দের পতিতার ঘরে অবস্থানের পরপরই একটি মোমবাতি জ্বালানো হতো। মোমবাতি না নেভা পর্যন্ত সময় পাবে খদ্দের। অনেক সময় কেউ কেউ মোমবাতির সুতা এমনভাবে ছেঁটে রাখতেন, যাতে কম সময়ে নিভে যায়। তবে পতিতালয়ে এভাবে মোমবাতি ব্যবহারের ঘটনাটির সত্যতা উদঘাটন করতে গিয়ে কেউ কেউ বলছেন, এটি আসলে একটি গুজব ছাড়া কিছুই নয়। ‘পকেট মোমবাতি’ কথাটির চেয়ে ‘পতিতালয়ের মোমবাতি’ অনেক বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম। তাই এমন একটি মুখোরচক ইতিহাস রচনার মাধ্যমে এ পণ্যটি প্রচার এবং বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

ছোট মোমবাতিগুলো ব্যবহার করা হতো যখন একটি ম্যাচের কাঠির চেয়ে আরেকটু বেশি সময় আলোর প্রয়োজন পড়ে। আরও জানা গেছে, গোল্ড রাশ বছরগুলোয় এ ধরনের মোমবাতি পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ছিল। তখন এ মোমবাতিগুলো ঠিক ৭ মিনিটের জন্য জ্বলেছিল। ১৮৬৭ সালের ফরাসি বই ‘Le dernier mot de Rocambole’-এ ‘Bougies de poche anglaise’ এর উল্লেখ রয়েছে। তারা এগুলো ইংরেজি পকেট মোমবাতি হিসেবে জানত। তবে সেগুলো মাত্র ৩ মিনিটের জন্য পুড়েছে।
কারও কাছে তেল না থাকলে বা অস্থায়ী আলো পেতে এগুলো ব্যবহৃত হতো। আবার কারও কারও কাছে ফসফরাস ডোবানো ডগা ছিল, যাতে মোমবাতিগুলো ম্যাচস্টিকের মতো আলোকিত হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডয়েচেস হিস্টোরিচেস মিউজিয়ামের অ্যাকাউন্টে এ ধরনের মোমবাতির কিছু ছবি পাওয়া গেছে। সেখানে তারা এমন কিছু তথ্য জানিয়েছে, যার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঘটনার সঙ্গে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। ছবিগুলোয় দেখা গাছে, ম্যাচবক্সের মতো দেখতে ছোট মোমবাতির বাক্সের কোনোটির গায়ে চমৎকার একজন নারীর ছবি। কোনোটিতে নাইট, পুরুষ, এমনকি ঝুড়িওয়ালা নারীকেও দেখা গেছে। একটি ওয়েবসাইট ‘Worthpoint.com’-এ এসব মোমবাতির কিছু বিজ্ঞাপন রয়েছে, যেখানে তারা এগুলো বিক্রি করে থাকে।

অপর এক ইতিহাস বলছে, প্রাচীন রোমে নারী ক্রীতদাসদের সেনাদের জন্য যৌন পরিষেবা দিতে বাধ্য করা হতো। সেখানে পতিতালয়গুলো ব্যারাক ও শহরের দেয়ালের কাছাকাছি ছিল। তখন প্রথাটি এমন ছিল, পতিতার ঘর খোলা আছে তা বোঝাতে সেখানে প্রজ্বলিত মোমবাতি প্রদর্শন করা হতো।

/আবরার জাহিন

রাসেলস ভাইপারে আতঙ্ক নয়

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম
আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম
রাসেলস ভাইপারে আতঙ্ক নয়
রাসেলস ভাইপার। ছবি: সংগৃহীত

রাসেলস ভাইপার। বর্তমান সময়ে আলোচিত এক সাপের নাম। রাসেলস ভাইপারের দংশনে মানুষের মৃত্যু হবেই এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মৃত্যু হয় অবহেলায়। সর্পদংশনের পর সঠিক চিকিৎসা করালে এটাকে পাত্তা দেওয়ার কিছুই নেই।

কিন্তু হঠাৎ করে এ সাপের উৎপাত কেন শুরু হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসেলস ভাইপার সবসময়ই কমবেশি ছিল। কিন্তু খাদ্যের অভাবে সেভাবে বংশবিস্তার করতে পারেনি। এখন জমিতে একাধিকবার ফসল হচ্ছে। ফলে বাড়ছে ইঁদুর। এই ইঁদুর খেয়েই সাপ বংশবিস্তার করতে পারছে। আবার এখন মোবাইলে সাপের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া যাচ্ছে। মানুষ সহজেই জানতে পারছে। এমন ব্যবস্থা আগে সেভাবে ছিল না বললেই চলে। ফলে রাসেলস ভাইপার থাকলেও মানুষ তা জানত না।

এই সাপের গায়ের রং এবং প্যাটার্নের সঙ্গে মিল থাকায় অনেকেই বিষহীন বালুবোড়া সাপের সঙ্গে বিষাক্ত রাসেলস ভাইপারকে গুলিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে চিনেনই না। ঝোপঝাড়, পরিত্যক্ত জমি কমে যাওয়ায় এই সাপ জমিতে, আইলে বসবাস করছে। আর এর নির্মমতার প্রথম শিকার হচ্ছে কৃষকরা। নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সাপ পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ থেকে আসতে পারে। এমনটাও বলেছেন অনেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের অশোকা ফেলো, বন্যপ্রাণী ও সাপ বিশেষজ্ঞ আবু সাইদ। বাংলাদেশের সাপ ও সর্পদংশন প্রতিরোধ ও চিকিৎসাবিষয়ক বইয়ের অন্যতম লেখক তিনি। রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে মধুপুরের শালবন, চট্টগ্রামের পটিয়া, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের বিস্তৃতি ছিল। ২০০২ সালে সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি সাপ মারা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জাদুঘরে আছে। এরপর ২০০২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কোনো রাসেলস ভাইপার দংশিত রোগীর সন্ধানও পাওয়া যায়নি।

২০১৩ সালে রাজশাহীর আমনুরা উপজেলার ২২ বছরের এক ছাত্র বাড়ির পাশের জঙ্গলে অজগরের বাচ্চা ভেবে সাপ ধরতে গিয়ে হাতে দংশিত হয়। পরে সাপটি মেরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে গেলে সেই ছবি আমাদের কাছে পাঠালে সেটিকে চন্দ্রবোড়ার বাচ্চা বলে শনাক্ত করা হয়। সেটি ছিল বাংলাদেশের রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সর্পদংশিত রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রথম রেকর্ড। পাঁচ ডোজ অ্যান্টিভেনম দিলেও ১৪ দিন পরে ছেলেটি মারা যায়। তারপরই আমরা বন্যপ্রাণী গবেষক এবং চিকিৎসকরা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করি।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপটি মূলত পদ্মা নদী এবং এর বিভিন্ন শাখা নদী দিয়ে বিভিন্ন জেলার চরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের ২৮টি জেলায় রাসেলস ভাইপারের অবস্থান, দংশন, মৃত্যু ও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ে না, এটি সরাসরি বাচ্চা দেয়। সাধারণত ২০ থেকে ৪৫টি বাচ্চা দেয়, তবে সর্বোচ্চ ৭৫টি বাচ্চার রেকর্ড রয়েছে। বাচ্চাগুলো বাঁচার হার অনেক বেশি, সেজন্য এরা দ্রুত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। তাছাড়া রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া ভালো সাঁতার কাটতে পারে।

তবে এতদিন নদীর চরাঞ্চল এলাকায় রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি থাকলে এখন তা লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যেসব রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে তার সিংহভাগই স্ত্রী প্রজাতির। সাপ বিশেষজ্ঞ বোরহান বিশ্বাস রোমন বলেন, আমরা পদ্মাকেন্দ্রিক ৭-৮ বছরের ডেটা কালেক্ট করেছি। দেখা যাচ্ছে, রাসেলস ভাইপারের জুভেনাইল বেবিদের (দেশে জন্ম নেওয়া এবং বছরের বাচ্চা বা গত বছরের বাচ্চা) মধ্যে ৭৮ ভাগই স্ত্রী প্রজাতির।

রাসেল ভাইপারের বিষ দাঁত অনেক বড় প্রায় এক ইঞ্চি লম্বা এবং এরা প্রচণ্ড তীব্র গতিতে অর্থাৎ ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে দংশন করতে পারে। এরা সাধারণত স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে দংশন করে। সাপ যতটা লম্বা তার তিন ভাগের দুই ভাগ দূরত্বে গিয়ে দংশন করতে পারে।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে অ্যান্টিভেনম দিয়ে সর্পদংশিত রোগীর চিকিৎসা করা হয় সেটি ভারত থেকে আমদানি করা। এটি পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম অর্থাৎ এটি দিয়ে বাংলাদেশের ২ প্রজাতির গোখরা (Cobra), ৫ প্রজাতির কেউটে (Krait) এবং রাসেলস ভাইপার (Russells viper) সাপের চিকিৎসা করা হয়। সময়মতো হাসপাতালে গেলে এবং চিকিৎসা হলে রাসেলস ভাইপার দংশন করা রোগী বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।

রাসেলস ভাইপারকে চন্দ্রবোড়া, উলুবোড়াও বলা হয়। ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে বাস করে। এরা ফোস ফোস শব্দ করে। দংশন করেও জায়গা ছেড়ে যেতে চায় না। রাসেলস ভাইপার দংশন করার পর দংশিত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয় এবং ফুলে যায়। সেই সঙ্গে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে এর আশপাশের কিছু জায়গাও ফুলে যায়। এ ছাড়া দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

রাসেলস ভাইপার সাপের বিষ তীব্র রক্ত ধ্বংসকারী বা হোমটক্সিন প্রকৃতির। এই বিষে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। ফলে ফুসফুস বা কিডনি বিকলের কারণে রোগী মারা যেতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে দংশনের ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এমনকি ২১ দিনের মাথায়ও মৃত্যুর নজির আছে। রাসেলস ভাইপারের বিষ শরীর থেকে মুক্ত হলেও চিকিৎসাধীন থাকতে হয়। কারণ বিষ যতক্ষণ শরীরে থাকে ততক্ষণে লিভার, কিডনি ইত্যাদি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার (এনসিডিসি) ২০২৩ সালের এক গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ ৩ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। সাপ দংশনের প্রথম ১০০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি এম এ ফয়েজ। সাপের দংশন ও এর ওপর চিকিৎসা নিয়ে বই লিখেছেন তিনি। তার মতে, গোখরা সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপ দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি। 

সর্পদংশনে করণীয়

সাপ দংশন করলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এর প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাক্তার আয়ান সিমপসং বলেছেন- Do it Right অর্থাৎ সঠিক কাজটি করতে হবে। R- Reassure, I- Immobilise, GH- Go to Hospital, T- Tell the Doctor.

সর্পদংশনের পর রোগীকে সাহস দিতে হবে। শান্ত রাখতে হবে। সর্পদংশিত অঙ্গের নড়াচড়া বন্ধ রাখা, যাতে বিষ শরীরে দ্রত ছড়িয়ে না পড়ে। অধিকাংশ সাপ হাতে বা পায়ে দংশন করে, দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া না করার ফলে শরীরে বিষ ছড়াতে সময় লাগে। পায়ে দংশন করলে লাঠি বেঁধে পা সোজা করে স্ট্রেচারে শুইয়ে দ্রত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হবে। চিকিৎসককে সব খুলে বলতে হবে। উল্লেখ্য, যেকোনো ধরনের বাঁধনে সাপের বিষ আটকাতে পারে না। এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত-পা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে চন্দ্রবোড়া ও সবুজবোড়া সর্পদংশনে বাঁধন মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

রাসেলস ভাইপার থেকে বাঁচতে করণীয়

  • জমিতে কাজের সময় অবশ্যই গামবুট পরতে হবে। সম্ভব হলে হাতে গ্লাভস থাকা উত্তম।
  • রাতে লাইট নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। রাতে জমিতে কাজ না করা ভালো। জমি এবং জমির আইলে হাঁটার সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
  • জমির ধান, ভুট্টাসহ নানা ফসল কাটার জন্য যান্ত্রিক মেশিন ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। জমির আইল দিয়ে হাঁটার সময় সচেতন থাকা দরকার।
  • রাসেলস ভাইপার হিস হিস শব্দ করে। যা কানে বেশ জোড়েই শোনা যায়। এ কারণে হিস হিস শব্দ শুনলে সাবধান হতে হবে। 
    কাজ করার সময় মাটিতে শব্দ করা যেতে পারে। যাতে সামান্য হলেও কম্পন সৃষ্টি হয়। রাসেলস ভাইপার কম্পন বুঝতে পারে।

ভুল ধারণা

রাসেলস ভাইপার দ্রুত দংশন করতে পারে। কিন্তু এরা তেড়ে এসে দংশন করে না। এরা খুব অলস প্রকৃতির সাপ। কুণ্ডলি পাকিয়ে বসে থাকে। রাসেলস ভাইপারের দংশনের সঠিক চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের দেশে সঠিক চিকিৎসা আছে।

/আবরার জাহিন