![মিলেজুলে গামছা ঠোঙায়](uploads/2024/03/24/1711262934.gamcha.jpg)
ইফতারের বাকি আছে কয়েক মিনিট। হঠাৎই ব্যস্ত পথের পাশে একটি রিকশাভ্যান ঘিরে এদিক-সেদিক থেকে এসে জড়ো হন বেশ কিছু মানুষ। দু-তিনজন হাতে হাতে নিয়ে আসেন ঠোঙাভরা খাবার। ভ্যানের অন্য একজন বিছিয়ে দেন গামছা। একজন নিয়ে আসেন একটি থালা। ঠোঙা থেকে কেউ ঢালছেন ছোলা, কেউ মুড়ি, কেউবা পেঁয়াজু বা বেগুনি। হাতে হাতে সবগুলো মিশিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দু-তিনজন। একজন গিয়ে কোত্থেকে নিয়ে আসেন পানি। এর মধ্যেই কাছের মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। শুরু হয়ে যায় ইফতার। এই মানুষগুলো কেউ রিকশাচালক, কেউ ভ্যানচালক, কেউবা আশপাশের দোকানের মালামাল বহনের শ্রমিক।
বড় একটি অ্যালুমিনিয়ামের থালার মধ্যে প্রস্তুত করা হয় আটজনের ইফতার। থালাভর্তি মুড়ির সঙ্গে ছোলা, পেঁয়াজু, চপ, বেগুনি ও জিলাপি মাখিয়ে তৈরি করা হয় মুড়ি মাখা। পাশেই ছোট ছোট করে কাটা শসার টুকরো। এক পাশে শরবত বানানোর জন্য ছোট ছোট ফ্লেভারড পাউডারের প্যাকেট রাখা। আয়োজন এতটুকুই। এই সামান্যতেই হাসি সবার চোখে-মুখে।
শনিবার (২৩ মার্চ) হাতিরপুল কাঁচাবাজারে এক দল ভ্রাম্যমাণ শ্রমিককে ইফতারের আয়োজন করতে দেখা যায় এভাবেই। দিন শেষে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ নেই তাদের। ঘরে বানানো স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে ইফতার করার ফুরসত মেলে কদাচিৎ। সুতরাং পথের ধারে ভ্যানে করে বিক্রি করা ছোলা-মুড়ি ও ভাজাপোড়াই তাদের ভরসা। সারা দিন রোজা রেখে ও অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর ইফতার করার আনন্দ দেখা যায় সবার চোখে-মুখে।
আব্দুল জব্বার নামে একজন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এমনেই আমরা প্রত্যেক দিন দল বাইন্ধা ইফতার করি। হোটেলে যাইয়া ভালো ভালো ইফতার খাওনের উপায় নাই, আবার বাসাও অনেক দূরে।’
আয়োজনের ব্যাপারে আব্দুর রহিম নামের একজন শ্রমিক বলেন, ‘প্রতিদিনের ইফতারে আমরা একই ধরনের খাবার খাই। সারা দিন কাজ করার পর যে মজুরি পাই তা দিয়ে এই ভাজাপোড়া খাবার ছাড়া স্বাস্থ্যকর কিছু কেনার উপায় থাকে না। আমরা এই কয়েকজন মিলে একসঙ্গে প্রতিদিন ভাগাভাগি করে ইফতার করি। যা পাই তাই দিয়ে ইফতার করি। এতে মিলেমিশে খাওয়ার মজা পাওয়া যায়, আবার অল্প খরচে আয়োজন হয়ে যায়।’
হারুন শেখ নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘রোজা রাখার পর ইফতার করা সুন্নত। আমরা যা জোগাড় করতে পারি তাই আমাদের কাছে যথেষ্ট। এই বাজারে ভালো খাওয়া কিনে খেতে যা পয়সা লাগে, আমাদের তা কুলায় না।’
সারা দিন রোজা রেখে ভারী কাজ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে মতিউর রহমান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘রোজা রেখে আমাদের অনেকেরই শক্ত কাজ করতে আলসেমি ও দুর্বলতা লাগে। কিন্তু আমরা দিন আনি দিন খাই, আমাদের তো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই। কাজ করেই তো খাওয়া লাগে।’